রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর অনড় অবস্থান, প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন মহলের
সুন্দরবন সংলগ্ন রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ব্যাপারে রাজনৈতিক বিরোধিতা এবং নাগরিক সমাজ ও পরিবেশবাদীদের আন্দোলনকে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রকল্প বাস্তবায়নে তার সরকারের দৃঢ়তা প্রকাশ করেছেন।
শনিবার বিকেলে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট বলেছেন, বাস্তবায়নাধীন রামপাল-বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি করবে না। ভারতের এক্সিম ব্যাংক রামপাল প্রকল্পে বাংলাদেশকে ঋণ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলে অন্য বিকল্প মাধ্যমের চেষ্টা করা হবে। তাও না হলে আমরা নিজেদের অর্থায়নেই এটা করব।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নাম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে কিছু মহল নেতিবাচক মনোভাব থেকে জনগণের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি ও জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জানিয়েছেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে বিএনপির মন্তব্য নির্ভুল। এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে রাষ্ট্রদ্রোহিতা।
শনিবার জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় খালেদা জিয়া দৃঢ়ভাবে বলেন, সুন্দরবন নিয়ে রামপাল নিয়ে আমি যে তথ্যগুলো দিয়েছি তার কোনটা ভুল বা মিথ্যা নয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বেগম জিয়া রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা বাতিল করার জন্য সরকারকে অনুরোধ জানান এবং একই সাথে এ প্রকল্পের বিরুদ্ধে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
ওদিকে, তেল-গ্যাস, খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি মন্তব্য করেছে, বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের কারণে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে দাবি করেছেন তা ‘কোম্পানির বিজ্ঞাপনী প্রচারণা দ্বারা প্রভাবিত।’
গতকাল এক বিবৃতিতে কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ও সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এ মন্তব্য করেন।
আন্দোলনের খরচ কে যোগান দেয়- প্রধানমন্ত্রী প্রশ্নের জবাবে বিবৃতিতে বলা হয়, 'এই আন্দোলন জনগণের গায়ে-গতরে গড়ে তোলা আন্দোলন। তিনি হয়ত ভুলে গেছেন ভাষা আন্দোলনে মানুষ পয়সা দিয়ে আনতে হয়নি। ষাটের দশকের আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধে মানুষ জীবনবাজি রেখে গেছে। পয়সা দিয়ে দালাল আসে, যেমন রামপালের প্রকল্পের পক্ষে প্রচারকরা আছে। এটা খুবই হতাশাজনক যে, প্রধানমন্ত্রী তাদের বক্তব্যেরই প্রতিধ্বনি করেছেন।’
রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে প্রধান মন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যকে হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেছেন, ‘সুন্দরবন বাঁচাও’ আন্দোলনের সংগঠক গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার অন্যতম কেন্দ্রীয় নেতা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি আরো বলেন, গুলশানে সন্ত্রাসী হামলা আর রামপাল বিরোধিতাকে প্রধানমন্ত্রী যেরকম এককাতারে ফেলে ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন তাতে তিনি পুরো জাতিকেই অপমান করেছেন।
এদিকে, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেছেন, সুন্দরবন ধ্বংসকারী রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিরুদ্ধে জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সরকার যদি রামপাল বন্ধ না করে তাহলে ’৬৯ সালের মত দেশে গণঅভ্যুত্থানের সৃষ্টি হবে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত ‘সুন্দরবন রক্ষা কর, পরিবেশ বাঁচাও, গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়ানো চলবে না ও জননেতা মাহমুদুর রহমান মান্নার মুক্তি চাই’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।
সভায় বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, “দেশের ৯০ ভাগ মানুষ রামপালে কয়লা বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। দেশি-বিদেশি লুটেরাদের স্বার্থ এবং জনগণের স্বার্থ মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে।”#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/২৮