বাংলাদেশে 'ব্লু হোয়েল' গেম আতঙ্ক, করণীয় সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ মতামত
(last modified Mon, 09 Oct 2017 13:54:52 GMT )
অক্টোবর ০৯, ২০১৭ ১৯:৫৪ Asia/Dhaka

বাংলাদেশে তরুণ প্রজন্মের জন্য নতুন আতঙ্ক হিসেবে হাজির হয়েছে ইন্টারনেটভিত্তিক মারণঘাতি গেম ‘ব্লু হোয়েল’। সোশ্যাল মিডিয়ানির্ভর এই খেলাটির বলি হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অসংখ্য মেধাবী তরুণ-তরুণী।

সর্বশেষ ব্লু হোয়েল গেমের শিকার হয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার হলিক্রস স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী তেরো বছর বয়সী অপূর্বা বর্ধন স্বর্ণা। সে ছিল ছিল তুখোড় মেধাবী। স্কুলের ফার্স্ট গার্ল হিসেবেই পরিচিত ছিল সে। ওয়াইডব্লিউসিএ হাইয়ার সেকেন্ডারি গালর্স স্কুলে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সম্মিলিত মেধা তালিকায় বরাবরই তার স্থান ছিল প্রথম।

অপূর্বা বর্ধন স্বর্ণা (ফাইল ফটো)

বুধবার দিবাগত শেষ রাতে স্বর্ণা নিজের পড়ার কক্ষে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করে। বৃহস্পতিবার সকালে ওই কিশোরীর লাশ উদ্ধার করা হয় তার পড়ার কক্ষ থেকে।সেখান থেকে ব্লু হোয়েলের কিউরেটরের নির্দেশ মতো লিখে যাওয়া একটি চিরকূটও উদ্ধার করেছে পুলিশে। তাতে বড় করে লেখা, ‘আমার আত্মহত্যার জন্য কেউ দায়ী নয়।’ লেখা শেষে গেমসের নির্দেশনা মতো একটি হাসির চিহ্ন আঁকা।

পঞ্চাশটি ধাপের এই খেলায় শুরুর দিকটা বেশ মজারই৷ আর সেই কারণেই এই গেমের প্রতি সহজেই আকৃষ্ট হচ্ছে কিশোর-কিশোরীরা৷ প্রথমে সাদা কাগজে তিমি মাছের ছবি এঁকে শুরু হয় খেলা৷ তারপর খেলোয়াড়কে নিজেরই হাতে পিন বা ধারালো কিছু ফুটিয়ে নিজের রক্ত দিয়ে আকঁতে হয় সেই তিমির ছবি৷ একবার এই গেম খেলতে শুরু হলে কিউরেটরের সব নির্দেশই মানা বাধ্যতামূলক।

এই গেমের বিভিন্ন ধাপে রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। যেমন ব্লেড দিয়ে কেটে হাতে তিমির ছবি আঁকা, সারা গায়ে আঁচড় কেটে রক্তাক্ত করা, কখনো ভোরে একাকি ছাদের কার্নিশে ঘুরে বেড়ানো, রেল লাইনে সময় কাটানো, ভয়ের সিনেমা দেখা ইত্যাদি।

এসব চ্যালেঞ্জ নেয়ার পর তার ছবি কিউরেটরকে পাঠাতে হয়। সব ধাপ পার হওয়ার পর ৫০তম চ্যালেঞ্জ হলো আত্মহত্যা। এই চ্যালেঞ্জ নিলে গেমের সমাপ্তি।

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, যেসব কিশোর-কিশোরী ব্লু হোয়েল গেমে আসক্ত হয়ে পড়েছে তারা সাধারণভাবে নিজেদেরকে সব সময় লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করে। অনেকটা অস্বাভাবিক আচারণ করে। দিনের বেশিরভাগ সময় তারা কাটিয়ে দেয় স্যোশাল মিডিয়ায়।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের  অধ্যাপক ড. সুরাইয়া পারভীন রেডিও তেহরানকে বলেন, এটা খুবই আতঙ্কজনক খবর। অভিভাবকদের এ ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। তাদের ছেলেমেয়েরা কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনে কী করছে; কী গেম খেলছে, তা মনিটর করতে হবে। তাছাড়া এসব বিপজ্জনক খেলা ইন্টারনেটে ব্লক করে দেওয়ার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের উপায় বের করতে হবে।

অনুরূপ অভিমত ব্যক্ত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আজিজুর রহমান বলেছেন, ব্লু হোয়েল ইন্টারনেটে একটা অভিশাপ। এর হাত থেকে শিশু-কিশোরদের রক্ষার জন্য তিনি এসব গেমের উৎস বন্ধ করা,  সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণকারীদের নজরদারি বাড়ানো এবং অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন। #

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/৯

ট্যাগ