‘অসভ্যতা ও বর্বরতা অবসানের জন্য মহানবী (সা.) আবির্ভূত হয়েছিলেন’
মহানবী (সা.) ছিলেন কন্যা সন্তান হত্যার ভয়াবহ জাহেলিয়াত থেকে নারীদেরকে প্রকৃত উদ্ধারকারী। তিনিই প্রথম নারীমুক্তির দিশারী। তিনিই নারী সমাজকে প্রদান করেন শিক্ষা ও সামাজিক মর্যাদা লাভের অধিকার ও সম্পদের উত্তরাধিকারী করে তোলেন। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামও তাই বলেছিলেন, ‘বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।’
পবিত্র ঈদই মিলাদুন্নবী (সা.) ও ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ (১২-১৭ রবিউল আউয়াল) উপলক্ষে রাজধানীর ডেফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭১ মিলনায়তনে গতকাল (বুধবার) বিকেলে ‘রহমত, শান্তি ও বন্ধুত্বের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সাউথ-ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. আ ন ম মেশকাত উদ্দিন প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের অধ্যাপক এবং ওআইসির আন্তর্জাতিক ফিকাহ বিভাগের বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. আবদুল্লাহ আল মারুফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ঢাকাস্থ ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান দূতাবাসের কাউন্সিলর ও পলিটিক্যাল অ্যাটাশে মাহদী তোরাবী মেহরাবানী। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন ঢাকাস্থ ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কালচারাল কাউন্সিলর ড. সাইয়্যেদ মাহদী হোসাইনী ফায়েক। বিখ্যাত ক্বারী সাইয়েদ আহমদ বিন ইউসুফ আল আযহারীর সুললিত কণ্ঠে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ড. মেশকাত উদ্দিন আরো বলেন, ‘মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এসেছিলেন অসভ্যতা ও বর্বরতা অবসানের জন্য। মানুষকে পশু স্বভাব থেকে মানুষে পরিণত করার জন্য এবং মানবজাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্যে। ঐক্যই ছিল নবীর (সা.)-এর আদর্শ। কিন্তু আমরা একতার পথ ভুলে গেছি। তুচ্ছ ভেদাভেদকে বড় করে দেখছি। নিজরা বিভক্ত হয়ে রয়েছি নানা মতে পথে। কিন্তু আমি দেখেছি পাশ্চাত্যের খ্রিস্টানদের মধ্যে নানা বিভক্তি সত্ত্বেও তাদের মধ্যে কোনো বিবাদ, হিংসা বিদ্বেষ, হানাহানি নাই। এমনকি আমরা বিশ্বে সচারাচর এটা কখনোই দেখি না যে, এক খ্রিস্ট শক্তি অপর খ্রিস্ট শক্তিকে হত্যা বা নির্মূল করছে! কোনো খ্রিস্ট শক্তি কোনো ইহুদি বা বৌদ্ধকে হত্যা করছে না। কোনো হিন্দু নির্মূল করছে না কোনো হিন্দু সমাজকে। অথচ হিন্দুদের মাঝেও বিভিন্ন দল মতের মানুষ আছে। তারা নানা দেবতার পুজারী হিসেবে তাদের নানা সংঘ রয়েছে। এছাড়া তাদের মধ্যে রয়েছে নানা জাতিভেদ। আবার বৌদ্ধদের মাঝেও নানা মত আছে। কিন্তু তারা কেউ কারো প্রতি বিদ্বেষী হচ্ছে না। উগ্র হয়ে উঠছে না। কিন্তু আফসোস একদিকে মুসলমানেরা নিজেদের মধ্যে অন্তর্কলহ করছে আর অপরদিকে সকল অমুসলিমরাই জুলুম নিপীড়ন, অত্যাচার নির্মূলাভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। ফিলিস্তিনে ইহুদি যায়নবাদীদের দ্বারা, বসনিয়ায় সার্বদের দ্বারা, কাশ্মিরে ভারতীয় হিন্দুদের দ্বারা, আরাকানে বর্মী বৌদ্ধদের দ্বারা তারা নির্মূল হচ্ছে। ভারতে মুসলমানদের বাবরী মসজিদ ভেঙে ফেলা হয়েছে। আবার ইরাকে, সিরিয়ায়, পাকিস্তানে, আফগানিস্তানে উগ্র মুসলমানের দ্বারা অপর মুসলমান নিহত হচ্ছে; আমরা ঐক্যবদ্ধ নই বলে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা কুরআন ও মহানবী (সা.)-এর আদেশ নিষেধ থেকে শিক্ষা নেইনি এবং নেই না বলেই আমাদের এই অধঃপতন। আবার নিজেদের অজ্ঞতার কারণে এবং প্রকৃত ইসলামকে বিশ্বের মানুষের কাছে তুলে ধরার অভাবে ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে খারাপ ধারণাও সৃষ্টি হয়েছে বিশ্বের অমুসললিম জনসাধারণের কাছে। ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে এক ধরণের ভীতি তৈরি হয়েছে। সেটা তৈরি হয়েছে অজ্ঞ মুসলমানের উগ্রতা ও গোঁড়ামির কারণে যা ইসলামের সাথে আদৌ সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ইসলামকে সঠিকভাবে তুলে ধরার অভাবে একধরণের নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে বিশ্বে। মুসলমানরা বোমা মেরে মানুষ মারে, নারীদেরকে অসম্মান করে ও জ্ঞানার্জন, অর্থার্জন এবং সামাজিক কার্যক্রমে তাদের অধিকারকে খর্ব করে। এইরকম শত শত বিষয়ে নানা অপবাদ দেয়। কিন্তু আসলে কি ইসলামের বিরুদ্ধে এই সব গোঁড়ামিপূর্ণ অপবাদ দেয়ার সুযোগ আছে? এগুলো হয়েছে কুরআন না বোঝার কারণে। কুরআন ও রাসূল (সা.)-এর ঘোষণাসমূহ হচ্ছে শান্তি, মুক্তি ও মানবতার সঠিক ব্যবস্থাপত্র। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এই জীবন ব্যবস্থার মূল গ্রন্থ হচ্ছে কুরআন। এই কুরআনই রাসূল (সা.)-এর সারা জীবনচিত্র। আরবীভাষী মুসলমানরা সরাসরি কুরআন বোঝে কিন্তু অনারব মুসলমানেররা বুঝে কুরআন পড়ে না। আরবী ভাষা তাদের জানা নাই। কিন্তু তাকে অবশ্যই কুরআন বুঝে পড়তে হবে। আরবী ভাষা শিখতে হবে অথবা অনুবাদ পড়ে কুরআন বুঝতে হবে। এমন কোন সমস্যা নাই যার সমাধান কুরআনে নাই। কিন্তু আমাদের দেশের অগণিত মানুষ কুরআন পড়ে কিন্তু এর অর্থ বোঝে না। কুরআন পাঠ করে একে চুম্বন করে বাক্সে উঠিয়ে রাখে। কোনো ডাক্তারের দেয়া ব্যাবস্থাপত্র অনুযায়ী ঔষধ সেবন না করে যদি সেটা পাঠ করে চুম্বন করে বাক্সে উঠিয়ে রাখা হয় তাহলে কি রোগ সারবে?’
ড. মেশকাত উদ্দিন বলেন, ‘আমরা মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও কুরআনের গুরুত্ব আমাদের কাছে নাই। কারণ আমরা জেনে বুঝে, গবেষণা করে, পড়াশোনা করে মুসলমান হই নাই। আমাদের বাপ দাদা পূর্বপুরুষেরা মুসলমান ছিলেন তাই আমরা মুসলমান। কিন্তু পাশ্চাত্যে ইসলামের বিরুদ্ধে এত অপপ্রচারের পরও মুসলমান হচ্ছে অহরহ। তারা ইসলামে শান্তি ও মুক্তির সঠিক সন্ধানটি পেয়েছে। গীর্জার অনেক পাদ্রি ইসলাম গ্রহণ করেছে। তারা বিভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে পাঠ করে দেখেছে। অবশেষে ইসলামকেই মানব জীবনের সঠিক সমাধান হিসেবে পেয়েছে।‘
তিনি বলেন, জ্ঞান-বিজ্ঞানে ও ইসলামের সঠিক জ্ঞানে সমৃদ্ধ হলেই বিশ্বে আবার আমাদের সঠিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে। আমরা আবার বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে পারব।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল ঢাকাস্থ ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ রেজা নফর-এর। কিন্তু রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে ঢাকায় আগত বিশেষ ইরানি প্রতিনিধির সঙ্গে চট্টগ্রাম যাওয়ায় তাঁর পরিবর্তে প্রতিনিধি হিসেবে ইরান দূতাবাসের কাউন্সিলর ও পলিটিক্যাল অ্যাটাশে মাহদী তোরাবী মেহরাবানী বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ‘ইমাম খোমেনী (রহ.) নামে ইরানে একজন মহামানব জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে দুনিয়ার মুসলমানদের অনৈক্যের সঠিক কারণটি অনুভব করতে পেরেছিলেন। সেই কারণগুলো দূর করা ও মুসলমানদের মতপার্থক্যের বিষয়গুলো, তাদের বিভিন্ন মাজহাবের স্বতন্ত্র দৃষ্টিভঙ্গিগুলোর ব্যাপারে মুসলমানদেরকে সহনশীল করে তোলার লক্ষ্যে কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। ইসলামের প্রধান দুই মাজহাব শিয়া ও সুন্নির মধ্যে ঐক্যের জন্যে সারাজীবন কাজ করে গেছেন। এসবের মধ্যে একটি বিষয় হলো সুন্নি সমাজ মনে করে মহানবী (সা.)-এর জন্ম ১২ রবিউল আউয়াল। আর শিয়া সমাজ মনে করে সে দিনটি হলো ১৭ রবিউল আউয়াল। ইমাম খোমেনী (র) ১২ থেকে ১৭ ইং তারিখ পর্যন্ত সময়কে ‘ইসলামি ঐক্য সপ্তাহ’ ঘোষণা করে উভয় মাজহাবকে সমন্বিত ও সংযুক্ত করেছেন। ঐক্যবদ্ধ করেছেন। ইরানে ১২ তারিখ থেকেই সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, শোভাযাত্রা, সমাবেশসহ নানা অনুষ্ঠান হতে থাকে। এভাবে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে হচ্ছে।
তিনি বলেন, খ্রিস্ট সমাজে হাজারো মতামত আছে। কিন্তু তাদের মধ্যে কোনো সমস্যা হচ্ছে না এধরনের মতপার্থক্যের জন্যে। কিন্তু তারা বিশেষ করে ন্যাটোসহ পাশ্চাত্য বিশ্ব মুসলমানেরকে রাজনৈতিকভাবে মেরুদণ্ডহীন করার জন্যে নানা বিভেদ বিভক্তিকে উস্কে দিচ্ছে। তাঁরা অনেক সচেতন। তারা মুসলমানদের ছোট ছোট বিভেদগুলো সম্পর্কে অবগত। তারা সময়মত সেইসব বিভেদগুলোকে সামনে এনে এক মুসলমানের মাধ্যমে অন্য মুসলমানকে হেয়প্রতিপন্ন করাতে চেষ্টা করে। উদাহরণত তিনি একটি ইফতার মাহফিলে শিয়া ও সুন্নি মাজহাবে ইফতারের সময়ের পার্থক্যকে বড় করে তুলে ভেদাভেদ উস্কে দেয়ার চেষ্টারত এক খ্রিস্টান কুটনীতিকের উদাহরণ টেনে তার ব্যক্তিগত জীবনের এক গল্প বলে সুধী সমাজকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, এসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মাসলা-মাসায়েলগত পার্থক্যকে বড় করে তোলা যাবে না। যার যার স্বাতন্ত্র বজায় রেখে মৌলিকতার ভিত্তিতে এক হতে হবে।
মাহদী তোরাবী মেহরাবানী আরও বলেন, আজকে জঙ্গিবাদী দায়েশ তৈরি করেছে ইহুদি-মার্কিন চক্র। এসব সন্ত্রাসী শিয়াদের পাশাপাশি তাদের মতের সাথে অমিল আছে এমন সুন্নিদেরকে হত্যা করছে। মুসলমানদেরকে ভেতর থেকে রক্তক্ষরণ ঘটাচ্ছে যাতে মুসলমানরা ভেতর থেকেই দুর্বল হয়ে যায়। তারা তাদের অন্তর্কলহ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এভাবে তারা চাচ্ছে ফিলিস্তিন, আরাকানসহ অপরাপর মুসলিম ইসুগুলো চাপা পড়ে যাক। তারা মুসলমানদের সম্পর্কে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। কিন্তু আমাদেরকে ভুলে গেলে চলবে না যে, মুসলমানরা পরস্পর ভাই ভাই। শিয়া সুন্নি ভাই ভাই।

ইসলামি গবেষক হুজ্জাতুল ইসলাম আবদুল কুদ্দুস বাদশা বলেন, ‘মহানবী (সা.) ছিলেন রাহমাতাল্লিল আলামিন। তিনি সমগ্র আলমের জন্যে বা সমগ্র সময়ের জন্যে, সমগ্র মানব সমাজের জন্যে রহমতস্বরূপ। কেবল রাহমাতাল্লিল মুসলেমিন নন, কেবল দুনিয়ার জীবনের জন্যেই নয়, আখেরাতের জীবনেও তিনি উম্মতের জন্যে সাফায়েতকারী হবেন। কাজেই তিনি পরকালেও আল্লাহর রহমতস্বরূপ। তার মর্যাদা সকল নবী রাসূলদের থেকে উর্ধ্বে। সেজন্যেই তাকে বলা হয়ে থাকে ‘সরদারে আম্বিয়া’ বা সকল নবীদের সরদার। তাঁকে সৃষ্টি না করলে আল্লাহপাক জগতের কিছুই সৃষ্টি করতেন না। রাসূল (সা.)-এর মর্যাদাকে কোনোভাবেই খাটো করার সুযোগ নাই। আল্লাহর কাছে তাঁর বান্দাদের জন্যে রহমতস্বরূপ রাসূল (সা.)-এর মর্যাদা এতো উপরে যে এর কোনো গাণিতিক সীমা নাই। রাসূল (সা.) সবসময় উম্মতের দুঃখে কাতর। জগতে অনেক নবীর উম্মতের অপরাধের শাস্তি আল্লাহপাক সাথে সাথেই দিয়ে ফেলেছেন। সেই নবীর উপস্থিতেই আল্লাহপাক তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। মুসা (আ.) ও লুত (আ.)-এর অবাধ্য জাতিকে তিনি ধ্বংস করেছেন। কিন্তু মহানবী (সা.)-এর উম্মতকে আল্লাহপাক ভয়াবহ গজব দিয়ে ধ্বংস করেননি। নবীজি (সা.) তার উম্মতের কষ্টে সবসময় শামিল সেই কষ্টের কথা তার উম্মত তার কাছে বলার আগেই। তিনি সবসময় তার উম্মতের মঙ্গল চান।
আল কুরআনের হাকিকত, মারেফত, তরিকতই হচ্ছে রাসূল (সা.)-এর হাকিকত, মারেফত ও তরিকত। রাসূল (সা.)-এর জীবন আল্লাহর রঙে রঙিন। আল্লাহর সিফাতে তিনি ভূষিত। তিনি ঐক্যের রজ্জু। তিনি আল্লাহর রজ্জু। তিনি দুনিয়ায় আছেন মানে উপরেও আছেন। আর উপরে আছেন মানে নিচেও আছেন। সেজন্যেই তিনি ‘রাহমাতাল্লিল আলামিন’।
স্বাগত ভাষণে ইরানের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কালচারাল কাউন্সিলর সাইয়েদ মাহদী হোসাইনী ফায়েক বলেন, ‘মানুষের প্রতি জুলুম করার জন্যে আসেনি ইসলাম ও ইসলামের নবী। কিন্তু আজকে ইসলামকে তলোয়ার ও রক্তপাতের ধর্ম হিসেবে অভিহিত করার সুযোগ তৈরি করে দেয়া হয়েছে যাতে অমুসলিমরা মুসলমানদেরকে হেয় করতে পারে। কিন্তু মুসলমানদেরকে সেসব চক্রান্ত বুঝে চলতে হবে। ফাঁদে পা দিলে চলবে না। ইসলামের নবী সমগ্র মানবজাতির জন্যে রহমতস্বরূপ ছিলেন কেবল মুসলমানদের জন্যে নয়। তিনি মুসলমানদেরকে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের শিক্ষা দিয়ে গেছেন। স্বার্থপরতা শিক্ষা তিনি দেননি। তিনি ছিলেন উত্তম চরিত্রের অধিকারী। তাঁর জীবন সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তার স্ত্রী হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেছিলেন ‘আপনি কি কুরআন পড়েন নি? কুরআনই হলো রাসুলের (সা.)-এর নৈতিকতা।’

সভাপতির বক্তব্যে ড. আবদুল্লাহ আল মারুফ বলেন, ‘ঈদে মীলাদুন্নবী (সা.) পালনের উদ্দেশ্য হলো রাসূল (সা.)কে ও তাঁর উপর অর্পিত জীবন বিধানকে বেশি বেশি জানা ও চর্চা করা। ঈদ মানে আনন্দ। মহানবী (সা.)-এর জন্মের চেয়ে আনন্দ মুসলমানদের জন্যে আর কী হতে পারে! মুসলমানদের প্রধান দুই ঈদ ছাড়াও এরকম ঈদ অনেক আছে। জুমার নামাজকেও ‘সাপ্তাহিক ঈদ’ বলা হয়েছে। আমাদেরকে রাসূল (সা.)-এর জীবন চর্চা বাড়িয়ে দিতে হবে। আর বাড়িয়ে দিতে হবে আমল। তাঁর দেখানো পথে থেকে আমাদেরকে ইসলামের মৌলিক শর্ত ও আকিদার উপর সারা দুনিয়ার মুসলমানকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ইরান, তুরান, মিশর, সুদান, সৌদি আরবের মুসলমানরা হিংসা বিভেদ ভুলে এক হয়ে যেতে হবে।’
আলোচনা সভায় রাসূলের (সা.) শানে কবিতা পাঠ করেন কবি আমিন আল আসাদ। ইরানের বিখ্যাত সুফি কবি আবদুল রহমান জামীর একটি বিখ্যাত নাতে রাসূল পেশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ও কণ্ঠশিল্পী মেহেদী হাসান, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত নাত ‘সাহারাতে ফুটলোরে ফুল রঙিন গুলে লালা’ গেয়ে শোনান ছড়াকার কবি, মর্সিয়া লেখক শিল্পী শাহ নওয়াজ তাবিব এবং জাতীয় কবির আরেকটি নাত ‘আমি যদি আরব হতাম মদীনারই পথ’ গানটি গেয়ে শোনান শিল্পী অ্যাডভোকেট আলী মোহাম্মদ মাহদী। ইংরেজি ও ফার্সিতে কবিতা পাঠ করেন হুজ্জাতুল ইসলাম ইউনুস গাজী। তিনি উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থাপনাও করেন। এছাড়া অনুষ্ঠানে সুধী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নজরুল ফররুখ গবেষণা ফাউন্ডেশনের সভাপতি লেখক এমদাদুল হক চৌধুরী, কবি জামালুদ্দিন বারী, ড. জহিরউদ্দিন মাহমুদ, শিল্পী রোকনুজ্জামান, কবি রহমান মাজিদ, কবি আলমগীর হোসেন জোয়ারদার, শিল্পী ও ক্বারী হাবিবুর রহমান, সাংস্কৃতিককর্মী কামরুল ইসলাম, অনলাইন ইরান মিররের সম্পাদক সাইদুল ইসলাম, আল কুদস কমিটির সেক্রেটারি জেনারেল মোস্তফা তারেকুল হাসান, মওলানা আবু বকর সিদ্দিক, কবি ক্বারী অবায়দুল্লাহ, ক্বারী আলমগীর হোসেন মোল্লা প্রমুখ।#
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২২