দখল-দূষণসহ নানা কারণে মরতে বসেছে বাংলাদেশের নদ-নদী
(last modified Sun, 22 Sep 2019 12:06:10 GMT )
সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৯ ১৮:০৬ Asia/Dhaka

আজ বিশ্বের দেশে দেশে পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব নদী দিবস’। নদী রক্ষায় সচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের চতুর্থ রোববার বিশ্বব্যাপী এ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘নদী একটি জীবন্ত সত্তা, এর আইনি অধিকার নিশ্চিত করুন।’

বাংলাদেশেও ঘটাকরে দিবসটি পালিত হচ্ছে এমন প্রেক্ষাপটে যেখানে উজানে বাধ দিয়ে ভারত থেকে আসা নদীর প্রবাহ আটকে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া দেশের অভ্যন্তরে বেশিরভাগ নদ-নদী এখন দখলদারদের কবলে। ভয়ানক দূষণের শিকার প্রতিটি নদী। দখল-দূষণসহ নানা কারণে দেশের নদ-নদী মরতে বসেছে। এছাড়া পাথর ও বালু উত্তোলনেও অনেক নদী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী এক সময়ে বাংলাদেশে ছোট-বড় সাড়ে ১১শ’ নদী ছিল। তবে সারাদেশে এখন নদী রয়েছে ৪০৩ টি। এর প্রায় সবগুলোই দখল হয়ে আছে বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক ব্যক্তির হাতে। সরকারি হিসাবে নদী দখলের সঙ্গে প্রায় ৪৭ হাজার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান জড়িত। যদিও বাস্তবে এ সংখ্যা লক্ষাধিক।

বিশেষজ্ঞদের দাবি, নদী রক্ষায় প্রশাসনের দৃশ্যমান উদ্যোগ না থাকায় সুযোগ নিচ্ছেন দখলদাররা। আর প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় পুনরায় নদী খননের দাবি পরিবেশবাদীদের।

নদী ও প্রাকৃতিক জলাধার সুরক্ষা প্রশ্নে আদালতে অন্তত: ৭০টি রিট আবেদন করে কয়েকটিতে উল্লেখযোগ্য সফল্য পেয়েছে হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশ নামক একটি মানবাধিকার সংগঠন।

অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ

এ প্রসঙ্গে সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ রেডিও তেহরানকে বলেন, ঢাকার চার নদী রক্ষা ও নদীর জীবনসত্তা রক্ষা বিষয়ে আদালতের ঐতিহাসিক রায়ের ফলে নদী দখলমুক্ত করার কাজটি সহজ হয়েছে। তাছাড়া আদালতের এ নির্দেশনার কারণে প্রভাশালী দখলদারদের নির্বাচনে প্রর্থী হওয়া বা ব্যাংক লোন পাবার সুযোগও বন্ধ হয়ে যাবে।

আইনজীবী মনজিল মুরশিদ আরো বলেছেন, আদালতের রায়ের কারণে নদীকে দখলমুক্ত করার ব্যাপারে জনগণের মধ্যেও সচেতনতা বেড়ে গেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে হয়তো ভবিষ্যতে আর নদী দিবস পালন করতে হবে না।

গত ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী- ৬২ জেলায় নদী দখলবাজের সংখ্যা ৪৬ হাজার ৮৩৯ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দখলবাজ কুমিল্লা জেলায়। এর সংখ্যা ৫৯০৬ জন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে নোয়াখালী ও কুষ্টিয়া। এর সংখ্যা যথাক্রমে ৪৪৯৯ ও ৩১৩৪ জন। ঢাকায় এ সংখ্যা ৯৫৯ জন।

সরকারী হিসাব অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের দুই পাশে ১৬ হাজার ২২৫টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া তীরভূমি ও জায়গার পরিমাণ ৬০১ দশমিক ৩২ একর। উচ্ছেদ চালানোর সময়ে ঢাকা নদী বন্দরে ৪১ লাখ ২৪ হাজার ৫০০ টাকা এবং নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরে ২১ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এর মধ্যে চলতি বছরে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ৩ হাজার ২০০ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও ৯১ একর ভূমি উদ্ধার করা হয়।

ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, সারা দেশের নদ-নদী দখলমুক্ত করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এ তালিকা ধরে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। এ লক্ষ্যে এক বছর মেয়াদি ক্র্যাশ প্রোগ্রাম নেয়া হয়েছে। ক্র্যাশ প্রোগ্রামের মধ্যে রয়েছে- নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদ, নদীর সীমানা চিহ্নিত করা, মরা নদীর জমি চিহ্নিত করতে জরিপ করা ও জমি সংরক্ষণ করা, নদীর জমি লিজ দেয়া হলে এবং ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে নদী রেকর্ড হয়ে থাকলে তা বাতিল করা।

নদী দিবসের পালন উপলক্ষে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন এবং দেশের প্রায় ৭০টির বেশি বেসরকারি নদী, পরিবেশ ও সামাজিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত জোট ‘বিশ্ব নদী দিবস উদযাপন পরিষদ বাংলাদেশ’র যৌথ উদ্যোগে শনিবার রাজধানীতে শাহবাগ এলাকায় ‘নদীর জন্য পদযাত্রা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর নদী রক্ষায় পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সেই উদ্যোগ ব্যাহত হয়। কেউ যাতে এ কাজে বাধা দিতে না পারে, সেই লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। নদী আন্দোলনের সঙ্গে সরকার নিজেই সম্পৃক্ত। সুতরাং এ আন্দোলন সফল হবে।#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/২২

খবরসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সব লেখা ফেসবুকে পেতে এখানে ক্লিক করুন এবং নোটিফিকেশনের জন্য লাইক দিন