অবশেষে বুয়েট ছাত্রলীগের আলোচিত নেতা অমিত সাহা গ্রেফতার
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বহুল আলোচিত ছাত্রলীগ নেতা অমিত সাহাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর শাহজাহানপুর কালিমন্দির থেকে তাকে আটক করা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, আবরার ফাহাদকে হত্যার ঘটনায় আরো একজনকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির গোয়েন্দা ও অপরাধতথ্য বিভাগ। গ্রেফতারকৃতের নাম অমিত সাহা। সে বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ১৬তম ব্যাচের ছাত্র।
অমিত সাহা বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ২০১১ কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী। রোববার দিবাগত রাতে আবরারকে ওই কক্ষে নিয়েই ছাত্রলীগের নেতারা প্রথম পেটায়। এর পর তাকে ২০০৫ নম্বর রুমে নিয়ে দ্বিতীয় দফা পেটালে ওই রাতেই তার মৃত্যু হয়। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের প্রধান সন্দেহভাজন হওয়া সত্ত্বেও হত্যাকাণ্ডে জড়িত ১৯ জনের তালিকায় তার নাম না থাকা নিয়ে চলছিল ব্যাপক সমালোচনা।
হত্যাকাণ্ডের আগে ১৭ ব্যাচের (ফাহাদের সহপাঠী) এক শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহা ম্যাসেঞ্জারে জিজ্ঞেস করেন, 'আবরার ফাহাদ কি হলে আছে?'
এ ধরনের একটি স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ১৭ ব্যাচের ওই শিক্ষার্থী নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে না চাওয়ায় তারই এক সিনিয়র এ বিষয়টি ফেসবুকে প্রকাশ করেন।
এর আগে, ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বুয়েট ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক আশিকুল ইসলাম বলেছিলেন, 'আবরারকে শিবির সন্দেহে রাত ৮টার দিকে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে আনা হয়। সেখানে আমরা তার মোবাইলে ফেসবুক ও ম্যাসেঞ্জার চেক করি। ফেসবুকে বিতর্কিত কিছু পেজে তার লাইক দেওয়ার প্রমাণ পাই। সে কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগও করেছে। আমরা তার শিবির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাই। ফাহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বুয়েট ছাত্রলীগের উপ-দফতর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুজতবা রাফিদ, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, উপ-আইন সম্পাদক অমিত সাহা। পরে ঘটনার প্রমাণ পাওয়ায় চতুর্থ বর্ষের ভাইদের খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে বুয়েট ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার সেখানে আসেন। একপর্যায়ে আমি রুম থেকে বের হয়ে আসি। এরপর হয়তো ওরা ফাহাদকে মারধর করে থাকতে পারে। পরে, রাত ৩টার দিকে শুনি সে মারা গেছে।'
এ বক্তব্যে অমিত সাহার নাম আছে। কিন্তু, পরে ছাত্রলীগের তদন্তে এই ছাত্র ক্যাম্পাসের বাইরে ছিল উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করা হয়।
সোমবার দিনভর বুয়েটে তদন্ত চালিয়ে ভিডিও ফুটেজ দেখে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ, পরে গ্রেপ্তার করা হয় আরও তিনজনকে। ওই ১৩ জনসহ মোট ১৯ জনকে আসামি করে ঢাকার চকবাজার থানায় একটি মামলা করেন আবরারের বাবা, যেখানে অমিতের নাম না থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে বুয়েট শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা দুদিন আগে বলেছিলেন, অমিত সাহা গত ২ অক্টোবর দেশের বাড়ি গেছে বলে তারা জানতে পেরেছেন।
অন্যদিকে আবরার হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ- আবরার হত্যাকাণ্ডে অমিত সাহা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। উদ্দেশ্যমূলকভাবে তার নাম মামলার এজাহারে রাখেনি পুলিশ।
এ অভিযোগের বিষয়ে ডিবি পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন জানান, ইচ্ছাকৃতভাবে বুয়েট শিক্ষার্থী অমিত সাহাকে মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়নি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনে তাকে আবারও আইনের আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, ‘মামলা দায়েরের সময় যারা আসামি থাকেন, তদন্তের পর তাদের মধ্য থেকে কেউ বাদ যেতে পারেন আবার কেউ যুক্ত হতে পারেন। অমিত সাহার নাম ইচ্ছা করে বাদ দেওয়া হয়নি।’
গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, আবরার হত্যার ঘটনায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ২২ জনকে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। যদিও মামলার এজাহারে ১৯ জনের নাম এসেছে। তবে তদন্ত সাপেক্ষে আসামি কমবেশি হতে পারে।#