গার্মেন্টস শিল্প: ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানা চালু রাখাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে বিজিএমই
বাংলাদেশে একসময়ের রমরমা তৈরি পোশাক শিল্পে এখন দুর্দিন দেখা দিয়েছে। রপ্তানির প্রবৃদ্ধি কমছে৷ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ছোট আকারের কারখানা৷ কাজ হারাচ্ছেন শ্রমিকরা৷
কারখানার নিরাপত্তা পরিবেশ উন্নত করা এবং শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি কারনে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার ধাক্কা সমলাতে পারছেন না ছোট বা মাঝারি আকারের কারখানা মালিকরা। তাছাড়া, আন্তর্জাতিক বাজারে তৈরী পোশাকের দাম বৃদ্ধি না হয়ে বরং চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কারখানা মালিক ও শ্রমিক নেতারা।
দেশের মোট রপ্তানি আয়ের সিংহভাগই আসে তৈরি পোশাক থেকে৷ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৮৩ ভাগ আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮৪ ভাগই যোগান দিয়েছে এই খাত৷
চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের পোশাক খাতে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮২০ কোটি ডলার যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ বেশি৷ তবে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে এখনই সংশয় দেখা দিয়েছে৷
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী এই বছরের জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত ছিল৷ কিন্তু আগস্ট-সেপ্টেম্বরে তা আর ধরে রাখা যায়নি৷ গত বছরের তুলনায় আগস্টে রপ্তানি কমেছে ১২ শতাংশ । আর সেপ্টেম্বরে কমেছে পাঁচ শতাংশ৷
এদিকে,গত পাঁচ বছরে প্রায় দেড় হাজার পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এসময়ে একটু একটু করে ১২ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাকের বাজার হারিয়েছে বাংলাদেশ। কারখানা মালিকরা এ অবস্থাকে অশনি সংকেত বলে উল্লেখ করেছেন।
পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ-র সভাপতি রূবানা হক বলেছেন, ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানা চালু রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

বিজিএমইএর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এ পর্যন্ত ৫০টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, যেগুলো মূলত ছোটো আকারের৷ এসব কারখানায় গড়ে পাঁচশ থেকে ছয়শ শ্রমিক কাজ করতেন৷ সেই হিসেবে কমপক্ষে ২৫ হাজার শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন গত ছয় মাসে৷
এ প্রসঙ্গে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কার্যকরী সভাপতি কাজী রুহুল আমিন রেডিও তেহরানকে বলেন, কারখানায় সুষ্ঠ কর্মপরিবেশ এবং দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখতে হবে।
তাছাড়া বিদেশী ক্রেতাদের সাথে দরকষাকষির জন্য সরকার ও মালিকরা মিলে যৌথভাবে তৎপর হতে হবে। এই সাথে নতুন নতুন বাজার অনুসন্ধান ও বিশেষ করে চীনাদের হাইটেক প্রযুক্তিতে উত্তরণের সূযোগটাও কাজে লাগাবার পরামর্শ দেন এ শ্রমিক নেতা।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডরেশনের সভাপতি জনাব আমিরুল হক আমিন বলেন, ‘‘যেসব পোশাক কারখানা বন্ধ হয়েছে সেগুলো ছোট৷ এইসব ছোট ছোট কারখানার বেশ কিছু ইতোমধ্যেই বড় কারখানার সাথে একীভূত হয়েছে, আবার নতুন করে বড় কারখানাও গড়ে উঠছে৷ বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানার ২৫ হাজার শ্রমিক আসলে বেকার নেই তাদের বড় একটি অংশ একীভূত হয়ে যাওয়া কারখানায় কাজ পাচ্ছে৷ তবে সার্বিক পরিস্থিতি ভালো নয়৷'
বর্তমানে পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে চীনের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান৷এই বাজারের শতকরা ৬ ভাগই নিয়ন্ত্রণ করছে বাংলাদেশের কারখানাগুলো৷ কিন্তু এই অবস্থান ধরে রাখা এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে৷ তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভিয়েতনামসহ অন্যদের সাথে বাংলাদেশকে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে৷#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/বাবুল আখতার/১৭
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।