কার্বন বিপর্যয়ের মুখে বাংলাদেশ: কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুত প্রকল্প থেকে সরে আসার আহ্বান
বিশ্ব সমাজ যখন কার্বন নি:সরনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে এবং উন্নত দেশগুলো যেখানে কয়লা ভিত্তিক প্রকল্প থেকে সরে আসছে, সেখানে বাংলাদেশ বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য বৈদেশিক ঋনে অধিকসংখ্যক কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের প্রকল্প হাতে নিয়ে পরিবেশবাদীদের ব্যপক নিন্দা কুড়াচ্ছে।
সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ক্রমবর্ধমান বিদেশি অর্থায়নে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা একটি থেকে বাড়িয়ে ৩০ এ উন্নীতকরা হবে, বিদ্যমান ৫২৫ মেগাওয়াটের বিপরীতে কয়লা জ্বালিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৩৩ হাজার ২৫০ মেগাওয়াট উন্নীত করবে।
পরিবেশবাদীরা বলছেন, বাংলাদেশের এতগুলি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালাতে গিয়ে বায়ুমণ্ডলে বার্ষিক ১১ কোটি ৫০ লাখ মেট্রিক টন অতিরিক্ত কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণ করবে। আর এটি সত্যিকারভাবে একটি কার্বন বিস্ফোরণের ঘটনা। এটি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিকর প্রভাবের ফলে বাংলাদেশের দুর্দশাগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলবে।
অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণের কারনে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। আর এ কারণেই দেশের স্থলভাগের ১১ শতাংশ পানিতে ডুবে যাবে। তাছাড়া চার ও পাঁচ মাত্রায় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার ঝুঁকি ১৩০ শতাংশ বাড়িয়ে দিবে।
রোববার রাজধানীতে আয়োজিত 'কয়লায় শ্বাসরুদ্ধ: কার্বন বিপর্যয়ের মুখে বাংলাদেশ' শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তুলে ধরেন পারিবেশ বিশেষজ্ঞগন।
প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে যৌথভাবে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ(টিআইবি) এবং ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ (ডব্লিওকেবি)।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক ড. মো. আব্দুল মতিন রেডিও তেহরানকে বলেন, ঋনের টাকায় কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুত প্রকল্প স্থাপন করে পরিবেশের ক্ষতি না করে বরং বিকল্প পন্থায় ক্লীন এনার্জি যেমন বায়ু বিদ্যুত ও সৌর বিদ্যুত উৎপাদনের প্রতি অগ্রাধিকার দেয়া দরকার ।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়,‘বড় আকারের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা মূলত বৈদেশিক ঋণ সহায়তা নির্ভর, যেটি সার্বিকভাবে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ বাড়িয়ে দিবে এবং বৈদেশিক বাণিজ্য ভারসাম্য আরো প্রকট করে তুলবে। প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশকে বার্ষিক ২০০ কোটি ডলার মূল্যের ৬ কোটি ১০ লাখ মেট্রিক টন কয়লা আমদানি করতে হবে। যা বাংলাদেশে কয়েক দশকের জন্য উচ্চমূল্যের কয়লা আমদানির ফাঁদে ফেলে দিবে। যেটি কিনা নতুন অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের শঙ্কাও তৈরি করবে।’
‘বিশ্বের কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ সবচেয়ে ক্ষতিকর ও নোংরা জ্বালানি হিসেবে বিবেচিত। যা বিষাক্ত নাইট্রোজেন অক্সাইড, সালফার অক্সাইড, পিএম ২.৫, কয়লার ছাই ও এসিড নির্মাণের মাধ্যমে বায়ু ও পানি দূষণে বড় ভূমিকা পালন করে। এছাড়া পারদ, শিসা ও ক্রোমিয়ামের মত ভারী ধাতু নির্গমন করে, দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে শুরু করে অকাল মৃত্যুরও কারণ। এই বিবেচনায় এটি পরিবেশের জন্য বিপর্যয়কর একটি পরিকল্পনাও।’
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘একটাই বাংলাদেশ, একটাই সুন্দরবন, একটাই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। এসব সুরক্ষিত করতে হবে। দেশের জীবন জীবিকা পরিস্থিতি বিপন্ন করে, বাংলাদেশকে বিপন্ন করে বিদ্যুৎ প্রকল্প করে যেন দেশ বিপন্ন না হয়। আমরা তা হতে দিতে চাই না।’
পার্সটুডে/আব্দুর রহমান খান/বাবুল আখতার/৬
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।