অঙ্গ দান করার ক্ষেত্রে বিশ্বে সবচেয়ে উত্তম ব্যবস্থা রয়েছে ইরানে: ডা. জাফরুল্লাহ
(last modified Wed, 20 Nov 2019 13:27:38 GMT )
নভেম্বর ২০, ২০১৯ ১৯:২৭ Asia/Dhaka
  • সংবাদ সম্মেলনে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী
    সংবাদ সম্মেলনে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী

মানব দেহে সংস্থাপনের জন্য অপর একজনের অঙ্গদান করার ক্ষেত্রে বিশ্বে সবচেয়ে উত্তম রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা রয়েছে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানে। বাংলাদেশের স্বনামধন্য চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী আজ এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন।  

বাংলাদেশে মানব দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান সংক্রান্ত ২০১৮ সালের আইনের সীমাবদ্ধতা সংশোধনের দাবিতে গণস্বাস্থ্য কেন্ত্রের নগর হাসপাতালে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী জানান, বাংলাদেশে যেখানে কেবল নিকট আত্মীদের জন্য অঙ্গ দানের অনুমাদন দেয়া হয় সেখানে ইরান রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিস্থাপন যোগ্য অঙ্গদানকে উৎসাহিত করে থাকে এবং তা আত্মীয়-অনাত্মীয় ভেদে যেকোনো রোগীর দেহে সংস্থাপন করা হয়। সেখানে কিডনি কেনা বেচার সূযোগ নেই।

তিনি জানান, ইরানে অঙ্গদানকারী ব্যক্তিকে আর্থিকভাবে পুরস্কৃত করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে অঙ্গদানকারীর কোন প্রকার চিকিৎসার ক্ষেত্রেও অগ্রাধিকার নিশ্চিত করা হয়ে থাকে।

ডাক্তার জাফরুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশের আইনটিতে অত্মীয়দের জন্য অঙ্গদানের বাধ্যবাধকতা রাখার ফলে প্রতিস্থাপনযোগ্য অঙ্গ পাওয়া দুরহ। ফলে বিদেশ থেকে কিনে এনে বা বিদেশের হাসপাতালে গিয়ে এসব অঙ্গ প্রতিস্থাপন করাতে হয়। এটি অনেক ব্যয়বহুল এবং গরীব ও মধ্যবিত্ত রোগীদের একেবারেই সামর্থ্যের বাইরে।

তিনি বলেন, ব্যক্তির দেহ তার নিজস্ব সম্পদ, তিনি চাইলে তার নিজের ক্ষতি না করে একটি কিডনি, চক্ষু, ফুসফুস, যকৃত, অগ্নাশয়– এ জাতীয় অঙ্গ দান করতে পারবে এটি আইন দিয়ে সুরক্ষা হওয়া দরকার। এছাড়া, প্রচলিত আইনে অঙ্গদাতার বয়সের যে সীমা ১৮ থেকে ৬৫ বছর নির্ধারণ করে দেয়া আছে তাও তুলে দেয়া উচিত বলে মনে করেন ডাক্তার জাফরুল্লাহ।

বাংলাদেশে কিডনি প্রতিস্থাপনের বিষয়টি উল্লেখ করে এই বিশিষ্ট চিকিৎসক জানান, সরকারি হিসেবেই দেশে বর্তমানে ৪০-৪৫ হাজার কিডনি রোগী রয়েছে যাদের মধ্য অন্ততঃ দশ হাজার রোগীর কিডনি প্রতিস্থাপন জরুরি দরকার। কিন্তু দেশে দানকৃত কিডনি না পাবার কারণে তাদের বেশীরভাগকেই ভারত, শ্রীলংকা বা সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে যেতে হয়। তবে আত্মীয়দের দান করা কিডনি ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা থাকার কারণে মিথ্যা হলফনামা দিয়ে টাকার বিনিময়ে অনাত্মীয়কে আত্মীয় বানিয়ে এ কাজটি করা হয়।

বাংলাদেশে আত্মীয়দের মধ্যে অঙ্গদানের আইনি বিধানকে চ্যালেঞ্জ করে একজন কিডনি রোগীর  দায়ের করা একটি রিট আবেদন অনেকদিন ধরে অমীমাংসিত অবস্থায় পড়ে আছে। আগামীকাল (২১ নভেম্বর) এ সংক্রান্ত একটি রায় ঘোষল করা হতে পারে।

উল্লেখ্য, ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী নিজেই একজন কিডনি রোগী হিসেবে নিয়মিত ডায়ালাইসিস করে সুস্থ থাকার চেষ্টা করছেন। তিনি জানান, নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতে বছরে প্রায় ছয় লক্ষ টাকা খরচ হয় যা গরীব রোগীদের পক্ষে বহন করা কষ্টকর। তবে গণস্থ্যকেন্দ্রে গরীব রোগীদর জন্য কম খরচে এ কাজটি করা হচ্ছে। ডাক্তার জাফরুল্লাহ জানান, সরকার যদি এ ব্যাপারে ভর্তুকি দেয় তবে কিডনি ডায়ালাইসিস করার খরচ আরো কমে আসবে।  

ডাক্তার জাফরুল্লাহ বলেন, ডায়ালাইসিস করে যেখানে একজন কিডনি রোগী চার-পাঁচ বছর বেঁচে থাকতে পারেন সেখানে কিডনি প্রতিস্থাপন করে একজন রোগী অন্তত: পনের বছর বেঁচে থাকতে পারেন। তাই কিডনি প্রতিস্থাপনের সুবিধার্থে প্রচলিত আইনের সংশোধন দরকার বলে যুক্তি উপস্থাপন করেন ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

সংবাদ সম্মলনে উপস্থিত ছিলেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রফেসর ডাক্তার মাহবুবুর রহমান এবং গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ডাক্তার মহিব উল্লাহ খন্দকার।#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/২০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ