ঢাকায় বাড়ছে বায়ু দূষণ: কারণ ও প্রতিকার নিয়ে বিশ্লেষক অভিমত
(last modified Sat, 23 Nov 2019 14:38:03 GMT )
নভেম্বর ২৩, ২০১৯ ২০:৩৮ Asia/Dhaka
  • ঢাকায় বাড়ছে বায়ু দূষণ: কারণ ও প্রতিকার নিয়ে বিশ্লেষক অভিমত

বিশ্বের সবচেয়ে বেশী বায়ূ দূষণের শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। শীতের শুষ্ক হাওয়ায় ধুলার কারণে এই দূষণের মাত্রা এখন আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

পরিবেশবিজ্ঞানীরা বলছেন, মাত্রাতিরিক্ত ইটভাটা, যানবাহন, নির্মাণকাজ ও কলকারখানার ধোঁয়ার কারণে ঢাকা শহরের প্রায় দেড় কোটি মানুষ আসলে এক অবিশ্বাস্য বিষাক্ত গ্যাসে বলয়ের মাঝে বাস করছে।

মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার এক পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা গত ১০ বছরে ৮৬ শতাংশ বেড়েছে। জনসংখ্যা দিয়ে বায়ুদূষণ বিবেচনা করলে সারা পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত বায়ুর দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ।

আজ শনিবার অপরাহ্ন তিনটায় রাজধানী ঢাকার বায়ূ দুষন মান মাত্রা পাওয়া গেছে ২২৭। এ মাত্রাকে চিহ্নিত করা হয়েছে “ভেরী আনহেলদি”- অর্থাৎ অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর হিসেবে। এরকম বায়ূ দুষনে ঢাকার গোটা জনগোষ্ঠী অত্যন্ত স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষ করে শিশু ও শ্বাসকষ্টের রোগীদর ঘরের বাইরে বের না হতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

এ অবস্থায় ঢাকার বায়ু দূষণমাত্রা কমানোর জন্য জরুরী ভিত্তিতে সময়োপযোগী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা দাবী জানিয়েছেন পরিবেশবাদীরা।

এ ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে আজ ২৩ নভেম্বর ২০১৯, শনিবার, সকাল ১১.০০ টায় রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ) ও পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চসহ সমমনা সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে  এক  মানববন্ধন আয়োজন করা হয়।  এ কর্মসূচির মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘নগরে বিষ ঢালছে বায়ুদূষণ; বায়ুদূষণ বন্ধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ কর’।

সমাবেশে বক্তাগন উল্লেখ করেন, ইটের ভাটায় নিম্নমানের কয়লা পোড়ানো এবং  মহানগরের গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, ড্রেনেজ এবং রাস্তাঘাট উন্নয়ন, মেরামত ও সংস্কার কার্যক্রমের আওতায় অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা-ঘাট খোঁড়াখুঁড়ি; রাস্তার পাশে অবর্জনার স্তুপ; মেরামতহীন ভাংগাচোরা রাস্তায় যানবাহন চলাচল,  ভবন নির্মাণ বা ভাংগার  সময় মাটি, বালু, ইটসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী রাস্তা-ফুটপাতে ফেলে রাখা, মেশিনে ইট ভাঙ্গা, এবং  যানবাহনের কালো ধোঁয়ার পাশাপাশি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ও ধুলা-বালি  বায়ু দূষণের অন্যতম উৎস।

এসব উৎস থেকে বিপুল পরিমাণ ধুলা, বিষাক্ত ক্ষতিকারক গ্যাস ও ভারীধাতব কণা বাতাসে মিশে জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

এ প্রসংগে  পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের  চেয়ারম্যান আবু নাসের খান রেডিও তেহরানকে বলেছেন, বায়ূদুষনের কারণ বাতাসে যুক্ত হওয়া ক্ষুদ্রাতিরিক্ত পদার্থ- বিশেষকরে  ক্ষতিকারক সালফার ও নাইট্রোজেনযুক্ত অক্সাইড, কার্বন মনোঅক্সাইড, ব্ল্যাক-কার্বনসহ অন্যান্য ক্ষতিকর ক্ষুদ্র কনিকা নিশ্বাসের মাধ্যমে সরাসরি ফুসফুষে ঢুকে রক্তকনিকায় যুক্ত হয়ে  পড়ছে। এর ফলে নানা জটিল রোগের সৃষ্টি হচ্ছে।   এসব রোগ স্বল্প সময়ে মৃত্যুর ঝুঁকিও   বাড়িয়ে দিচ্ছে।   

বায়ুদুষণের মাত্রা কমিয়ে আনার জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির সমন্বিত কর্মসূচীর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন  জনাব আবু নাসের খান।

আজকের মানব বন্ধনে বক্তাগন দাবী করেছেন, নগরবাসীর স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করতে অচিরেই বায়ু দূষণের উৎসসমূহ বন্ধ করতে হবে। বায়ু দূষণের সকল উৎস বন্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। বায়ু দূষণের সাথে জড়িত দায়ী ব্যাক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

বক্তাগন আরো দাবী করেন, ইতোপূর্বে  হাইকোর্টের দেয়া নির্দেশ অনুযায়ী রাজধানীর বায়ুদূষণ রোধে পরিবেশ অধিদপ্তরকে নিয়মিতভাবে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করতে হবে এবং জনদুর্ভোগ লাঘবে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালনা এবং তা নিয়মিত মনিটরিং নিশ্চিত করতে হবে।#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/এমবিএ/২৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।