রোহিঙ্গাদের জন্য রাখাইনে নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার আহ্বান বাংলাদেশের
(last modified Tue, 25 Aug 2020 19:51:09 GMT )
আগস্ট ২৬, ২০২০ ০১:৫১ Asia/Dhaka
  • মাসুদ বিন মোমেন
    মাসুদ বিন মোমেন

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সফল করতে আন্তর্জাতিক বেসামরিক পক্ষের তদারকিতে রাখাইনে একটি নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছেন। এ জন্য তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানান।

আজ (মঙ্গলবার) রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আয়োজিত আন্তর্জাতিক ই-কনফারেন্সের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ আহ্বান জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ (সিজিএস), অ্যাকশনএইড ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ (সিপিজে) ‘প্রবাসী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সংযুক্তি: বৈশ্বিক বাস্তুচ্যুতির ওপর গুরুত্বারোপ’ শীর্ষক অনলাইনে দুই দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছে। জুম ও ফেসবুক লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ভারত, জাপান, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, সৌদি আরব, থাইল্যান্ড, দি নেদারল্যান্ডস, ব্রিটেন ও আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা সম্মেলনে অংশ নেন।

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন আরও বলেন, বাংলাদেশের জন্য অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ব্যাপক এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠী দীর্ঘ সময় জুড়ে অবস্থানের ফলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জনসংখ্যা, অর্থনীতি, পরিবেশ, নিরাপত্তা, সরকারি অবকাঠামো এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব পড়তে পারে। দুঃখজনক হলেও সত্যি, টেকসই সমাধানের জন্য বাংলাদেশের অব্যাহত চেষ্টার পরও মিয়ানমারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে প্রত্যাবাসনে কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। রাখাইনে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযান নভেম্বরের নির্বাচন পুরো প্রক্রিয়াকে আরও দীর্ঘায়িত করতে পারে।

রোহিঙ্গা বিষয়ক আন্তর্জাতিক ই-সম্মেলন

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ ফিরে না আসায় রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছে। রোহিঙ্গারা ফিরে গিয়ে নিরাপদে থাকবে- এমন একটি অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর সেটি পর্যবেক্ষণ করবে আন্তর্জাতিক বেসামরিক পক্ষ। এ জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেন মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে।

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের পথ সুগম করতে পররাষ্ট্র সচিব বেশ কিছু ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা চান। অপরাধের আলামত নষ্ট না করার লক্ষ্যে মিয়ানমার যাতে রোহিঙ্গাদের ভূমি ও সম্পদ দখল করে সেখানকার ভূমিতে কোনো পরিবর্তন না আনে, সেটা তাদের দেখা দরকার। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যাতে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের শিবির বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাখাইনে ফেরার পর রোহিঙ্গাদের জীবিকার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, যাতে করে তারা সেখানে ফিরে চলাচলের স্বাধীনতা ও মৌলিক সুবিধা পায়।

মাসুদ বিন মোমেন মনে করেন, রোহিঙ্গাদের জবাবদিহি নিশ্চিতের জন্য যে আইনি প্রক্রিয়া চলমান আছে সেটি দীর্ঘায়িত হতে পারে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া জটিল হয়ে পড়বে। তাই দ্রুত প্রত্যাবাসনের স্বার্থে তাদের যৌক্তিক ও নমনীয় হতে হবে। স্থানীয়ভাবে আত্মীকরণ এবং তৃতীয় দেশে স্থানান্তরের মতো সম্ভাব্য বিকল্প ব্যবস্থার আগে নিরাপদ, টেকসই এবং স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শিবিরের ওপর চাপ কমাতে ভাসানচরে অস্থায়ীভাবে বসবাসের বিষয়টিকে বিবেচনায় নেওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

একটি রোহিঙ্গা শরণার্থী পরিবার

পররাষ্ট্র সচিব আরও বলেন, প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মাঝে হতাশা বাড়ছে। সাগরে বিপজ্জনক পথ পাড়ি দিয়ে রোহিঙ্গাদের বিদেশ পাড়ির চেষ্টা ওই হতাশার প্রতিফলন। নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ না হলে তাদের উগ্রপন্থা, ব্যাপক আকারে মানব পাচার ও ব্যাপক হারে নিপীড়নের শিকারের ঝুঁকি থাকে। এই সমস্যা দীর্ঘায়িত হলে একটি বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় হবে। এ সমস্যার টেকসই সমাধানের জন্য বিশ্বের নানা দেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা সেখানকার নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে মতামত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।

সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তারা বলেন, নানামুখী চাপের পরও রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে মিয়ানমারের অবস্থানের তেমন কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। তাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের নিষ্পেশিত নিজেদের জনগোষ্ঠীর জন্য উচ্চকণ্ঠ হতে হবে। কারণ তাদের পক্ষে ওই দেশগুলোতে জনমত গঠন করে, বড় পরিসরে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করা সম্ভব। রোহিঙ্গা সংকট দীর্ঘায়িত হলে এই অঞ্চলে নানামুখী সমস্যা দেখা দিতে পারে।

সম্মেলনের প্রথম দিনের প্রথম কর্ম অধিবেশনে কানাডায় বসবাসরত রোহিঙ্গা মানবাধিকার কর্মী ইয়াসমিন উল্লাহ, সৌদি আরবের বাদশাহ আবদুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত মোরাদ আল শাফি ও জাপানের গাকুশুয়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মিছিমি মুরানুশি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদের সঞ্চালনায় ওই কর্ম অধিবেশনে আলোচক ছিলেন আমেরিকার গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গ্লোবাল পলিসির পরিচালক আজিম ইব্রাহিম।#

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।