কক্সবাজারে গণহারে পুলিশ বদলি: পুলিশকে আইনানুগ আচরণে বাধ্য করতে বিশেষজ্ঞের আহ্বান
বাংলাদেশের পূর্ব-দক্ষিণে মিয়ামারের সীমান্ত সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর উপকূলীয় জেলা কক্সবাজারে পুলিশের মাঝে নানা অপরাধের ঘটনা চিহ্নিত হবার প্রেক্ষাপটে জেলার পুরো পুলিশ বাহিনীকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ব্যাপক রদবদলের অংশ হিসেবে কর্মকর্তা থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত সবাইকে বদলি করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার সকাল পর্যন্ত বদলির আদেশ পাওয়া পুলিশ সদস্যের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৪৭ জনে। দেশের ইতিহাসে একযোগে একজেলার এত বিপুল সংখ্যক পুলিশ রদবদলের ঘটনা এটাই প্রথম। সম্প্রতি কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান নিহতের পর জেলায় পুলিশ বাহিনীর নানা অপকর্ম গণমাধ্যমে প্রকাশ হতে থাকলে সরকার এরকম ব্যাপক রববদদলের পদক্ষেপ নেয়। ক্রসফায়ারে হত্যা, নিরপরাধ নাগরিকদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি, গ্রেপ্তার এবং অর্থ আদায়, মাদক ব্যবসা, চোরাচালন,নারী-শিশু পাচার-এরকম নানা অভিযোগের প্রেক্ষাপটে কক্সবাজারে কর্মরত পুলিশের ‘সবাইকে সরিয়ে নেওয়ার’ সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সিনহা হত্যাকাণ্ড নিয়ে সমালোচনার মধ্যে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) এবি এম মাসুদ হোসেনকে গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাজশাহীর পুলিশ সুপার হিসাবে বদলি করা হয়। তার জায়গায় নতুন এসপি হিসেবে জেলা পুলিশের দায়িত্ব গ্রহণ করেন হাসানুজ্জমান।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে শুক্রবার কক্সবাজারের আটটি থানাসহ বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্বে থাকা ১৩৯ জন এসআই, ৯২ জন এএসআই, ১ হাজার ৫৫ জন নায়েব ও কনস্টেবলকে ভিন্ন রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার বদলি করা হয় ৫৩ জন পুলিশ ইনসপেক্টরকে। এর আগে ২১ সেপ্টেম্বর বদলি করা হয়েছে অপর সাত পুলিশ কর্মকর্তাকে।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত হচ্ছে, 'পুলিশের ‘সবাইকে সরিয়ে নেওয়া’ নয়' পুলিশের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বন্ধ করতে হবে এবং পুলিশকে আইনআনুগ আচরণে বাধ্য করতে হবে। এজন্য গোটা পুলিশ বাহীনিতে শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে পুলিশকে দলীয়ভাবে ব্যবহার করা হবে না।
এ প্রসংগে মানবাধিকার ও আইনগত সহায়তা সংস্থা হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশ-এর সভাপতি এ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ রেডিও তেহরানকে বলেন, পুলিশকে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় বদলি করলেই সুফল পাওয়া যাবে না যদি না তাদের আইনানুগ আচরনে বাধ্য করা না হয় ।
তিনি মন করেন, পুলিশ জনগণের বন্ধু হতে পারবে কেবল তখনই যখন পুলিশের কাছে নিরাপরাধ মানুষ নিরাপত্তা পাবে এবং পুলিশের প্রতিটি অন্যায় আচরনের প্রতিকার পাওয়া যাবে।
এ দিকে, কক্সবাজার জেলা পুলিশে ব্যাপক বদলি জনিত শূন্য পদ পূরণে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫৩ জন পুলিশ ইনসপেক্টর, ২১৫ জন এসআই-এএসআই এবং ৭৩৪ জন কনস্টেবলকে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি কার্যালয়ে দ্রুত যোগদানের আদেশ দেওয়া হয়েছেন।#
পার্সটুডে/আব্দুর রহমান খান/ বাবুল আখতার/ ২৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।