চিম্বুক পাহাড়ে হোটেল-পার্ক নির্মাণের প্রতিবাদে লংমার্চ, কঠোর কর্মসূচির হুমকি
(last modified Mon, 08 Feb 2021 05:51:02 GMT )
ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২১ ১১:৫১ Asia/Dhaka

বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ে পাঁচ তারকা হোটেল ও বিনোদন পার্ক নির্মাণের প্রতিবাদে আবারও পদযাত্রা করেছেন আদিবাসী ম্রো সম্প্রদায়। গতকাল (রোববার) কয়েক হাজার ম্রো নারী ও পুরুষ চিম্বুক পাহাড়ের রামরিপাড়া থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা লংমার্চ (পদযাত্রা) করে বান্দরবান জেলা শহরে রাজার মাঠে এসে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দেন।

এর আগেও কালচারাল শোডাউন নাম দিয়ে সাংস্কৃতিক শোভাযাত্রা করেছিলেন ম্রো জনগোষ্ঠী। গতকাল রাজারমাঠের সমাবেশে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে আন্দোলনের অন্যতম নেতা সিংপাত ম্রো বলেন, তাদের ‘কালচারাল শোডাউনসহ’ নানা প্রতিবাদ উপেক্ষা করে চিম্বুকের নাইতংপাহাড়ে হোটেল ও বিনোদন পার্ক নির্মাণ চলছে। এ জন্য চিম্বুক পাহাড়বাসী আবারও লংমার্চ (পদযাত্রা) করতে বাধ্য হয়েছে।

আগামী ১০ দিনের মধ্যে হোটেল ও বিনোদন পার্কের প্রকল্প বাতিল ও নির্মাণকাজ বন্ধ না করলে আরও কঠোর কর্মসূচি নেওয়া হবে বলে সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

বান্দারবানের সমাবেশে বলা হয়েছে, ম্রোদের আদি বিচরণভূমি জমি দখল করে হোটেল ও বিনোদন পার্ক নির্মাণের ফলে প্রত্যক্ষভাবে ছয়টি ম্রোপাড়া উচ্ছেদ হবে। পরোক্ষভাবে আরও ১১৫টি পাড়ার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।

এ প্রসঙ্গে ম্রোদের চলমান আন্দোলনে সক্রিয় নেতা জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের চট্টগ্রাম-পূর্বাঞ্চলের সভাপতি অ্যাডভোকেট ভুলন লাল ভৌমিক রেডিও তেহরানকে বলেছেন, বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ে পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণকে নিশ্চিহ্ন করার গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ম্রো নৃ-গোষ্ঠীর একমাত্র আদি বাস হচ্ছে বান্দারবানের এ পার্বত্য অঞ্চলটি। ম্রোদের জাতিগত বৈচিত্র্য এবং সাংস্কৃতিগত ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে  এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। 

উল্লেখ্য, বান্দরবান জেলা শহর থেকে ৪৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে চিম্বুক পাহাড়ে পাঁচতারা ম্যারিয়ট হোটেল ও বিনোদন পার্কের কাজ শুরু হয়েছে গত সেপ্টেম্বরে। ব্যবসায়ী গোষ্ঠী সিকদার গ্রুপের আর অ্যান্ড আর হোল্ডিংস লিমিটেড এবং আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এখানে মূল হোটেল ভবন ছাড়াও এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে পর্যটকদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ১২টি পৃথক ভিলা, আধুনিক কেবল কার থাকবে। সেখানে রাইড এবং সুইমিং পুলসহ বিভিন্ন ধরনের বিনোদন সুবিধা থাকবে বলে জানানো হয়।

এর আগে, গত ১৩ নভেম্বর বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগরীর চেরাগী পাহাড় এলাকায় অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকেও অনতিবিলম্বে চিম্বুক পাহাড়ে এসব নির্মাণ কাজ বন্ধের দাবি জানানো হয়। প্রতিবাদ সমাবেশে গণসংহতি আন্দোলন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেতাকর্মীরা অংশ নেন।

সমাবেশে বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযোদ্ধা গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রামে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আদর্শকে সামনে রেখে পাহাড়িদের ভূমি দখল নয়, পাহাড়িদের নিজস্ব অধিকার দিতে হবে এবং চিম্বুক পাহাড়ে অবিলম্বে পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ ও ম্রো উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে।’

এ ছাড়া, গত ৮ নভেম্বর বান্দরবানের কাপ্রু পাড়া বাজার এলাকায় প্রায় এক হাজার ম্রো জনগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রদর্শনীর মাধ্যমে প্রতিবাদ জানায়। সেখানে বান্দরবানে চিম্বুক পাহাড়ে বসবাসরত ম্রো জনগোষ্ঠী পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ ও পর্যটনের নামে তাদের প্রাচীন জুম ভূমি কেড়ে না নেওয়ার দাবি জানায়।

ফাইভ স্টার হোটেল নির্মাণের নাম করে ম্রো জনগোষ্ঠীর বসত ভিটা ও জুম চাষের জমি দখলের চক্রান্ত বন্ধের দাবি জানিয়েছে আরও বিভিন্ন সংগঠন। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, যুব ইউনিয়ন, ছাত্র ইউনিয়ন পৃথক বিবৃতিতে এই নিন্দা জানিয়েছে।

ম্রো সম্প্রদায়ের জায়গা দখল করে পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, চট্টগ্রাম জেলা শাখাও। কমিটির সভাপতি আবু হানিফ ও সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ম্রোদের জমি দখল করে হোটেল নির্মাণ পার্বত্য শান্তিচুক্তির মূল লক্ষ্যের বিরোধী এবং পরিবেশ বিরোধী। এই সিদ্ধান্তের ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবিক এবং পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দেবে।’#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।