উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড: নিহত ৭, পুড়েছে ৪০ হাজার ঘর
-
উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন
বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার উখিয়ার বালুখালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে সাতজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে দুই শিশু, দুই নারী ও তিনজন পুরুষ রয়েছেন। এ সময় আগুনে প্রায় ৪০ হাজার বসতবাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আজ (মঙ্গলবার) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাতজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কক্সবাজার ফায়ার স্টেশনের ইনচার্জ শাহদাত হোসেন বলেন, নিহতদের লাশ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী আবুল কাশেম উচ্চ বিদ্যালয়ে স্থাপিত প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রের চিকিৎসক ব্র্যাকের সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রঞ্জু মিয়া জানান, কমপক্ষে দুই হাজার আহত মানুষকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
পুড়ে যাওয়া ক্যাম্পের দায়িত্বরত মাঝিরা বলছেন, চারটি ক্যাম্পের ৩৬০ ব্লকের প্রায় ৪০ হাজার পরিবারের ঘরসহ সর্বস্ব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উখিয়ার বালুখালী ৮ ও ৯ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। রাত পৌনে ১০টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এ সময়ের মধ্যে পুড়ে যায় রোহিঙ্গাদের ৪০ হাজার ঘর। এ ছাড়া পুড়ে গেছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এনজিও অফিস ও পুলিশ ব্যারাক।
প্রত্যক্ষদর্শী মিনরা বেগম নামের এক রোহিঙ্গা নারী জানিয়েছেন, ক্যাম্পটির ৮ নম্বর ব্লক থেকেই আগুনের সূত্রপাত ঘটে। একটি ছনের ছাউনির ঘর থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। আগুন দেখে আবদুস শুকুর তার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের নিয়ে দৌড়ে আশ্রয় নেন কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কে।
উখিয়া ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা মো. এমদাদুল হক জানান, ‘দীর্ঘ প্রায় পাঁচ ঘণ্টার প্রচেষ্টার পর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনি বলা মুশকিল। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক। অন্তত দেড়/দুই কিলোমিটার এলাকা আগুনের লেলিহান শিখায় ধ্বংস হয়ে গেছে।’
উখিয়ার বালুখালী ৮ নম্বর এপিবিএন’র অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) মো. শিহাব কায়ছার জানিয়েছেন, ‘আগুনে বালুখালীতে অবস্থানরত ৪ নম্বর এপিবিএনের ব্যারাক আংশিক পুড়ে গেছে। তবে অস্ত্র ও মুল্যবান আসবাবপত্র নিরাপদে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। আগুনে রোহিঙ্গাদের ঝুপড়ি ঘর ছাড়াও বেশকিছু এনজিও অফিস, স্কুল-মাদ্রাসা পুড়ে গেছে।’

মংলায় বাড়িতে আগুন
এদিকে, মোংলার ধনখালী এলাকায় আগুনে পুড়ে গেছে মন্দিরসহ ৫টি বসত ঘর। বৈদ্যুতিক শটসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে বলে দাবি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও স্থানীয়দের। তবে ফায়ার সার্ভিস বলছে রান্না ঘর থেকেই আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, উপজেলার মিঠাখালী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ধনখালী গ্রামের দুলাল মণ্ডলের (৬২) বসতঘরে রবিবার দিবাগত রাত একটার দিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ সময় ঘরে ঘুমিয়ে থাকা গৃহকর্তা দুলাল ও তার স্ত্রী এবং ছেলে দ্রুত বাইরে বেরিয়ে যান। মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে দুলাল মণ্ডলের বাড়ির পারিবারিক মন্দিরসহ পাঁচটি বসতঘরে।
মোংলা ফায়ার সার্ভিসের ষ্টেশন অফিসার মো: আহাদুজ্জামান বলেন, ফায়ার সার্ভিস থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে আগুন লাগার খবর পেয়ে আধ ঘন্টার মধ্যে আমরা সেখানে গিয়ে আগুন নিভানোর চেষ্টা করি। প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে ওই বাড়ির রান্না ঘর থেকেই এ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটেছে। ওই বাড়িতে কাঠের চুলার পাশাপাশি গ্যাসের চুলাও ছিল।
চট্টগ্রামে আগুন
অন্যদিকে আজ সকাল আনুমানিক ছয়টার দিকে চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও থানার কাপ্তাই এলাকায় বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইন থেকে সৃষ্ট আগুনে সিডিএ গার্লস স্কুলের সামনের একটি মার্কেটে এ সাতটি দোকান পুড়ে গেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা শাহিদুল ইসলাম গণমাধ্যামকে জানান, সকাল ছয়টার দিকে কাপ্তাই রাস্তা মাথা এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে কালুরঘাট ফায়ার স্টেশন থেকে তিনটি গাড়ি ঘটনাস্থলে যায়। পরে তিন ঘণ্টার চেষ্টা শেষে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে- বৈদ্যুতিক লাইনের কোনো সমস্যা থেকে এ আগুনের সূত্রপাত। তবে বিষয়টি এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে তদন্ত চলছে।
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/২৩
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।