নিন্দা জানিয়েছে খেলাফত মজলিস
মোদিবিরোধী বিক্ষোভের জের: চট্টগ্রামে পুলিশের গুলিতে নিহত ৪
-
হাটহাজারীতে মাদ্রাসাছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষে চারজন নিহত
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা আগমনের বিরোধিতার জের হিসেবে আজ চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে তিন জন মাদ্রাসা-ছাত্র এবং একজন পথচারী।
নিহত তিন মাদরাসা-ছাত্র হলেন- মেরাজুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর আলম। তবে মৃত অপরজনের নাম-পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। চারজনের মৃতদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রাখা হয়েছে।
আজ জুমার নামাজের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমনের প্রতিবাদে দারুল উলুম মইনুল ইসলাম মাদরাসা ও পার্শ্ববর্তী কয়েকটি মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন হেফাজতের নেতাকর্মীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, তারা মিছিল নিয়ে হাটহাজারী থানার দিকে এগুতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ প্রথমে টিয়ার-শেল ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে পুলিশ রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে সংঘর্ষ আরও বাড়লে পুলিশ গুলি ছোড়ে।
প্রায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ চলে।
হাটহাজারী থানার ওসি রফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমনের প্রতিবাদে হেফাজতের অনুসারীরা মিছিল করার চেষ্টা করে। পুলিশ বাধা দিলে তারা হাটহাজারী থানায় প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে রাস্তায় পুলিশ অবস্থান নিলে বিক্ষোভকারীরা হাটহাজারী মাদরাসার দিকে অবস্থান নিয়ে ইটপাটকেল ছুড়েছে।’
হেফাজতের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদ্রিস দাবি করেছেন, ‘পুলিশের হামলায় কমপক্ষে ৭ জন ছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়েছে।’

বায়তুল মোকাররমে সংঘর্ষ
এদিকে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম এলাকায় মোদী বিরোধী বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে সাধারণ মুসল্লি ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ঘটেছে।
আজ শুক্রবার জুমার নামাজের মোনাজাত শেষে মুসল্লিদের একাংশ মোদিবিরোধী স্লোগান দিয়ে গেটেরর বাইরে এসে বিক্ষোভ শুরু করলে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন- ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা মসজিদের উত্তর পাশের ফটকে মিছিলকারীদের ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালান।
আকস্মিক হামলায় বিক্ষোভকারীরা পিছু হটে মসজিদের ভেতরে ঢুকে পড়েন। খানিক পরই বিক্ষোভকারীরা সংগঠিত হয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের ওপর পাল্টা হামলা চালান। এ সময় প্রায় ১০ মিনিট ধরে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলতে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ মসজিদের দিকে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ ফাঁকা গুলিও ছোড়ে।
এর আগে জুমার নামাজ শুরু হওয়ার আগ থেকেই মসজিদে ক্ষমতাসীন দলের বিপুল-সংখ্যক নেতা-কর্মী অবস্থান নেন। কিছু নেতা–কর্মী মসজিদের চারপাশের মোতায়েন পুলিশ ও র্যাব সদস্যের পাশে উপস্থিত ছিলেন।
প্রায় ঘণ্টা-ব্যাপী সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়ে আসলে পুলিশ মুসল্লিদের বের করে দিতে মসজিদের উত্তর গেট ফাঁকা করে দেয়। তবে দক্ষিণ গেট থেকে যুবলীগ কর্মীরা সেখানে অবস্থান নেয়া বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা করে।
সেসময় মসজিদের মধ্যে অনেক সাধারণ মুসল্লিও আটকা পড়েন। তারা সংঘর্ষের কারণে বের হতে পারেননি। লাঠি ও ছররা গুলির আঘাতে আহতদের মসজিদের ফ্লোরে শুইয়ে রাখা হয়।
সংঘর্ষের ঘটনায় আহত ৫৫ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শুক্রবার (২৬ মার্চ) বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই বাচ্চু মিয়া। আহতদের মধ্যে রয়েছেন- সাংবাদিক, মুসল্লি, আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের কর্মী, রিকশা চালক ও পথচারী। অনেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন বলে জানা গেছে।
নিন্দা জানিয়েছে খেলাফত মজলিস
আজ বাদ জুম্মা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ও হাটহাজারীতে মুসল্লিদের উপর পুলিশ ও সরকার-দলীয় ক্যাডারদের বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে খেলাফত মজলিস।
আজ প্রদত্ত এক যৌথ বিবৃতিতে খেলাফত মজলিসের আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেছেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে মুসলমানদের ঘাতক কসাই মোদিকে এনে সুবর্ণজয়ন্তীকে কলঙ্কিত করা হয়েছে। কসাই মোদির বাংলাদেশে আগমনের প্রতিবাদে সারাদেশের মানুষ যখন স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘৃণা প্রকাশ করছে, তখন পুলিশ বাহিনীর সাথে সরকারের দলীয় ক্যাডাররা দেশপ্রেমিক তাওহিদী জনতার উপর নগ্ন হমালা, টিয়ার শেল, গুলি চালিয়ে হাটহাজারীতে ৪ জনকে শহীদ করা হয়েছে, শত শত মানুষকে আহত করেছে, অনেকে মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছে।
খেলাফত নেতারা বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিন কসাই মোদির জন্য দেশের জনগণের উপর এই হামলার ঘটনা এক কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সৃষ্টি করেছে। আধিপত্যবাদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী কসাই মোদিকে খুশী করার জন্য দেশের জনগণের বুকে গুলি চালিয়েছে সরকার। আজকে মুসল্লি ও দেশপ্রেমিক তাওহিদী জনতার উপর এই হামলা ও হত্যার দায় সরকারকে বহন করতে হবে। দেশবাসী এ হামলার সমুচিত জবাব দিবে। আজকে কসাই মোদির জন্য দেশবাসীকে সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ও হাটহাজারীতে মুসল্লিদের উপর পুলিশ ও সরকার-দলীয় ক্যাডারদের বর্বরোচিত হামলার বিরুদ্ধে, কসাই মোদিকে বাংলাদেশের পবিত্র মাটিতে এনে প্রতিবাদী জনতার বুকে গুলির বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে এবং অবস্থায় সৃষ্ট অবনতিশীল পরিস্থিতির সকল দায় সরকারকেই বহন করতে হবে।
মতিঝিলের সংঘর্ষের মামলায় ৩১ জন রিমান্ডে
এর আগে, নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার মতিঝিল এলাকায় বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের ঘটনায় পল্টন থানা-পুলিশ বাদী হয়ে ৫১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয়ের অনেককে আসামি করে একটি মামলা করেছে। পুলিশ বলছে, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩২ জনকে আটক করা হয়েছে।
মতিঝিলের সংঘর্ষের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় আটক ৩১ আসামিকে আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর হাকিম বেগম ইয়াসমিন আরার আদালতে হাজির করে পুলিশ। শুনানি শেষে ৩০ জনকে দুই দিন করে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন আদালত। #
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/২৬