বিশ্বের শীর্ষ দশে বাংলাদেশ
করোনায় বাড়ছে মৃত্যু ও সংক্রমণ, বিধিনিষেধ আরও কঠোর করার পরমার্শ
বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে চলছে কঠোর লকডাউনের নামে নানারকম বিধিনিষেধ। এর মধ্যেও বাড়ছে কোভিড-১৯ আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। বাড়ছে মৃত্যু। টানা লকডাউনের ১১তম দিনে গতকাল (রোববার) আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ।
সরকারেরর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গতকাল (রোববার) সারা দেশে করোনায় ২৩০ জনের মৃত্যু এবং ১১ হাজার ৮৭৪ জন নতুন রোগী শনাক্তের তথ্য দিয়েছে। আর গতকালই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, মৃত্যুর দিক থেকে এখন বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের একটি বাংলাদেশ। কিন্তু এরপরও সবকিছু উপেক্ষা করেই ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে এবং শহরে আয় রোজগারের উপায় না পেয়েও গ্রামে ফিরে যচ্ছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
তব বাইরের জেলাগুলিতে এবং গ্রামাঞ্চলে করোনার ক্রমবনিতিশীল পরিস্থিতিতে খোদ স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- এভাবে চলতে থাকলে খুব তাড়াতাড়িই পরিস্থিতি করুণ হয়ে যাবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক রোবেদ আমিন স্বীকার করেছেন, “সংক্রমণের সংখ্যা কিছুতেই কমছে না। যে হারে দেশে সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে আগামী সাত থেকে ১০ দিন পর আর হাসপাতালে বেড পাওয়া যাবে না।” ইতোমধ্যেই চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় অতি গুরুতর এবং জরুরি ছাড়া অন্যান্য সাধারণ রোগী ভর্তি স্থগিত করা হয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে রুটিন অপারেশনও।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আফতাবুল ইসলাম বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে আজকেই (সোমবার) গগণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীর মধ্যে যারা বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিলে সমস্যা হবে না তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপত্র দিয়ে বাড়িতে চিকিৎসা নেওযার জন্য ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হবে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
এদিকে, দেশজুড়ে চলমান কঠোর বিধিনিষেধের সময়ে যানবাহন এবং লোকচলাচল নিয়ন্ত্রন করতে রাজধানী ঢাকা এবং বন্দর নগরী চট্টগ্রাম সহ বড় শহরগুলিতে নির্বাহি ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।
তবে, কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, যে লকডাউন চলছে তা কোন কাজেই আসছে না। কেউ ঘরে থাকছে না; সুযোগ পেলেই বাইরে বের হয়ে আসছে। আসলে, রোগীদের শনাক্ত করে আইসোলেশনে নিতে হবে, তার পরিবারের সদস্যদের কোয়ারেন্টিন করতে হবে। সেই সঙ্গে, যারা টেস্ট করতে পারছে না, তাদের জন্য শতভাগ মাস্ক পরার নির্দেশনা দিতে হবে। এই কাজ করতে হবে আরও কঠোরভাবে। নয়তো সংক্রমণের এই চেইন ভাঙ্গা যাবে না।”
চলতি ধারার কঠোর লকডাউনেও কাজ হচ্ছে কিনা- তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন খোদ রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন।
তার মতে, শনাক্তের সুফল এখন থেকে কিছুটা পাওয়ার কথা, কিন্তু সেরকম কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। রাস্তাঘাটে ভিড় বাড়ছে, কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তার চাইতেও অ্যালার্মিং হচ্ছে রাস্তার ধারে, গলির ভেতরের দোকানপাটে আড্ডা, মসজিদে নামাজের পরে আড্ডা এবং মানুষের বেড়াতে যাওয়া- এইসব জনসমাবেশ থেকেই আসলে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে।”
ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, লকডাইউনের এবারের মেয়াদ ১৪ জুলাইয়ের মধ্যে যদি অবস্থার উন্নতি না হয়, তাহলে চলমান বিধিনিষেধ আরও কঠোর করতে হবে।”#
পার্সটুডে/ আব্দুর রহমান খান/ বাবুল আখতার/১২
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।