হাসপাতালে শয্যা, আইসিইউ, অক্সিজেনের সঙ্কট: করোনার মাঝে ডেংগু সংক্রমণে পরিস্থিতি বেসামাল
নভেল করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ সংক্রমণে দিশেহারা স্বজনদের করুন আহাজারিতেও মিলছেনা হাসপাতালে শয্যা বা আইসিইউ । সঙ্কট চলছে অক্সিজেনের।
এমন অবস্থা খোদ রাজধানী সহ বাইরের জেলাগুলিতেও। বাইরে জেলা থেকে রোগীদের নিয়ে স্বজনরা ছুটে আসছেন ঢাকায় ভালো চিকিৎসার আশায়। ছুটছেন এক হাসপাতাল থেকে আর এক হাসপাতালে।
রাজধানীর বিশেষায়িত কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের ৩০০ শয্যার বিপরীতে বর্তমানে রোগী ভর্তি আছে ৩৭০ জন। ১০ টি আইসিইউ বেডের সবগুলিতে রোগী ভর্তি। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল আহমেদ বলেছেন, এ অবস্থায় আরও বেশী রোগী সামাল দেওয়া তাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে উঠবে।
এদিকে, আজ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন , হাসপাতালে চাপ কমাতে হলে সংক্রমণ কমাতে হবে। সংক্রমণ বেড়ে গেলে হাসপাতালে জায়গা দেওয়া যাবে না। কিন্তু মানুষ যেভাবে ঘুরছে, তাতে সংক্রমণ রোধ করতে আরও সময় লেগে যেতে পারে। আজ রোববার (২৫ জুলাই) দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) চত্তরে নির্মাণাধীন ফিল্ড হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, সারা দেশে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়া ও স্বাস্থ্যবিধি না মানাই সংক্রমণ বাড়ার বড় কারণ। গ্রামের চিত্র আশংকাজনক। আক্রান্তদের ৭৫ শতাংশই গ্রাম থেকে আসা, যাদের সবাই বয়স্ক, তারা ভ্যাকসিনও নেননি। মন্ত্রী জানান আগামী দিনে প্রতি মাসে এক কোটি লোককে ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
মড়ার ওপর খাড়ার ঘা
এ সময়, করোনা মহামারির মধ্যেই ডেঙ্গুর সংক্রমণের কারনে পরিস্থিতি বেসামাল হচ্ছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, কোভিড রোগীদের সঙ্গে একই হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। এ অবস্থায় সলিমুল্লাহ, আহসানুল্লাহ মেডিকেলসহ রাজধানীর নির্দিষ্ট বেশ কয়েকটি বিশেষায়িত হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা দেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, শনিবার (২৪ জুলাই) দেশে ২৪ ঘণ্টায় প্রথমবারের মতো ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা একশো ছাড়িয়েছে।এটাই একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি। সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১০৪ জন, যাদের সবাই রাজধানীরবাসিন্দা। চলতি মাসে এখন পর্যন্ত হাসপাতালে মোট ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ২০২ জন।
আর জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ১ হাজার ৫৭৪ জন। এর মধ্যে বর্তমানে সারা দেশে ভর্তি রোগী ৪২২ জন। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪১৯ জন, আর অন্য বিভাগে ৩ জন। প্রতিবছর বর্ষাকালেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোতে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ দেখা দেয়। ২০১৯ সালে দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়েছিল। দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৩০০ মানুষ প্রাণ হারান। তবে সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ১৭৯। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, ওই বছর সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে আবাসস্থল নিয়মিত পরিষ্কার রাখার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বলেছে, এডিস মশা যেহেতু অভিজাত এলাকায়, বড় বড়, সুন্দর সুন্দর দালান কোঠায় বসবাস করে ও সেখানে থাকা স্বচ্ছ পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়ে তাই এসব আবাসস্থল নিয়মিত পরিষ্কার রাখা এ রোগের বিস্তার রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ।তাছাড়া, মশার আক্রমণ থেকে বাঁচতে ঘরের দরজা ও জানালায় মশারির নেট লাগানো এবং প্রয়োজনে দিনের বেলায় ঘুমালে অবশ্যই মশারি টাঙ্গিয়ে বা কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমাতে পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। #
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/ বাবুল আখতার/২৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।