ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে পর্যবেক্ষণ: সেই বিচারককে আদালতে না বসার নির্দেশ
https://parstoday.ir/bn/news/bangladesh-i99994-ধর্ষণের_অভিযোগ_নিয়ে_পর্যবেক্ষণ_সেই_বিচারককে_আদালতে_না_বসার_নির্দেশ
ধর্ষণের ঘটনা ঘটে যাবার ৭২ ঘণ্টা পর এ সংক্রান্ত মামলা না নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে বিতর্কিত হবার পর বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহারকে প্রধান বিচারপতির দপ্তর থেকে এজলাসে না বসার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
(last modified 2025-07-29T12:16:04+00:00 )
নভেম্বর ১৪, ২০২১ ১৮:৫৪ Asia/Dhaka

ধর্ষণের ঘটনা ঘটে যাবার ৭২ ঘণ্টা পর এ সংক্রান্ত মামলা না নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে বিতর্কিত হবার পর বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহারকে প্রধান বিচারপতির দপ্তর থেকে এজলাসে না বসার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এর আগে রোববার সকালে সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার ও মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিচারক কামরুন্নাহারের ফৌজদারি বিচারিক ক্ষমতা সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাকে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করতে সুপ্রিম কোর্ট থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের সঙ্গে আলোচনাক্রমে ওই বিচারককে আজ সকাল ৯টা ৩০ মিনিট থেকে আদালতে না বসার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানায় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

এর আগে রেইনট্রি হোটেলে দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণ মামলায় গত ১১ নভেম্বর  সব আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়ে রায় দেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহার। এ  রায়ের পর্যবেক্ষণে  ৭২ ঘণ্টা পর ধর্ষণের মামলা না নেওয়ার নির্দেশনা দেন  বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহার।

বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহার তার রায়ের পর্যবেক্ষণে  বলেন, মামলার দুই ভিকটিম আগে থেকেই সেক্সুয়াল কাজে অভ্যস্ত। তারা স্বেচ্ছায় হোটেলে গেছেন। সেখানে গিয়ে সুইমিং করেছেন। ঘটনার ৩৮ দিন পর তারা বললেন, ‘আমরা ধর্ষণের শিকার হয়েছি’। অহেতুক তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রভাবিত হয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছেন। এতে আদালতের ৯৪ কার্যদিবস নষ্ট হয়েছে। এরপর থেকে পুলিশকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। এ ছাড়া এরপর থেকে ধর্ষণের ৭২ ঘণ্টা পর যদি কেউ মামলা করতে যায় তা না নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।’ এ রায় এবং নির্দেশনা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদ  ও সমালোচনার মুখে বিচারপতির দপ্তর থেকে তাকে এজলাসে না বসার নির্দেশ দেওয়া হয়।

একই সাথে তার ফৌজদারি বিচারিক ক্ষমতা সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করে তাকে বর্তমান কর্মস্থল হতে প্রত্যাহার করে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট হতে আইন মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।’

এদিকে, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক ধর্ষণের ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে পুলিশকে মামলা না নেওয়ার পর্যবেক্ষণ দেওয়া বিচারকের নির্দেশনাকে অসাংবিধানিক ও বেআইনি বলে উল্লেখ করেছেন। এতে আইন শৃংখলা বাহিনিকে ভুল নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্যা করেন।  

আজ রোববার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সংশ্লিষ্ট বিচারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধান বিচারপতির চিঠি পেলে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এরপর আইন অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্ট তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেবে।’

অপরদিকে, ‘যৌন অপরাধের অভিযোগকারী নারী সাধারণভাবে দুশ্চরিত্রা’, ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের এমন বিধানসহ দুটি ধারা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট করা হয়েছে।

বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট, আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং নারীপক্ষ- এই তিন সংগঠনের পক্ষে রোববার রিটটি করা হয়। রিট আবেদনটি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন। আবেদনে ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ও ১৪৬(৩) ধারা কেন অসাংবিধানিক ও বাতিল করা হবে না সেই মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে।

১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো লোক যখন বলাৎকার কিংবা শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে ফৌজদারিতে সোপর্দ হন, তখন দেখানো যেতে পারে যে অভিযোগকারী সাধারণভাবে দুশ্চরিত্রা।’

এই আইনের ১৪৬ (৩) ধারায় বলা হয়েছে, ‘তাহার চরিত্রের প্রতি আঘাত করে তার বিশ্বাস যোগ্যতা সম্পর্কে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করা যায়, যদিও এরূপ প্রশ্নের উত্তরের দ্বারা সে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো অপরাধের সহিত জড়িত হতে পারে, কিংবা সে দণ্ড লাভের যোগ্য সাব্যস্ত হতে পারে, অথবা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তাহার দণ্ড লাভের যোগ্য সাব্যস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তথাপি অনুরূপ প্রশ্ন করা যাবে।’#

পার্সটুডে/ আব্দুর রহমান খান / বাবুল আখতার/১৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।