কারো স্বপ্নের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলা অসাংবিধানিক: ভারতের সুপ্রিম কোর্ট
কোনো ব্যক্তি অপরাধের মামলায় ‘দোষী’ সাব্যস্ত হলে তাঁর বাড়ি বা সম্পত্তি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তা অসাংবিধানিক বলে রায় দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।
আজ (বুধবার) বিচারপতি বিআর গাভাই এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চ এই রায়ে দিয়েছে। আদালত বলেছে, পুলিশ-প্রশাসন কাউকে ‘দোষী’ সাব্যস্ত করে শাস্তি দিতে পারে না। এখন থেকে ঘরবাড়ি ও অন্যান্য ‘অবৈধ’ কাঠামো ভাঙতে গেলেও তা করতে হবে নির্দিষ্ট নিয়মবিধি মেনেই।
কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা আদালতে যুক্তি দেন যে, ‘বুলডোজার পদক্ষেপ’ তখনই করা হয়, যখন কোনও বাড়ি বা কাঠামো অবৈধ ভাবে তৈরি হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।
উত্তরে বিচারপতি গাভাই জানান, প্রত্যেক ব্যক্তির একটি স্বপ্ন থাকে যে তাঁরা নিজের বাড়িতে থাকবেন। একটি বাড়ি হল পরিবারের বা ব্যক্তির স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার মূর্ত প্রতীক। প্রশাসনিক কর্তারা কি এইভাবে নির্দেশ দিতে পারেন?
এর পরেই শীর্ষ আদালতের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, তারা অবৈধ নির্মাণকে বাঁচানোর কথা বলছে না। কিন্তু এক্ষেত্রে একটি নিয়মবিধি থাকা উচিত। যদিও রাস্তা কিংবা ফুটপাতের মাঝে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বা অবৈধ নির্মাণের ক্ষেত্রে ওই অন্তর্বর্তী আদেশ প্রযোজ্য হবে না বলে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে।
বিচারপতি গাভাই বলেন, ‘‘আমরা বাসস্থানের অধিকারের দিকটি গুরুত্ব সহকারে দেখেছি। সংবিধানের ১৯ এবং ২১তম অনুচ্ছেদেও এর উল্লেখ রয়েছে। বাসস্থানের অধিকার একটি মৌলিক অধিকার। এই ধরনের অধিকার থেকে নিরপরাধ মানুষকে বঞ্চিত করা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক।’’
বিচারপতির মতে, যখন কোনও নির্দিষ্ট বাড়ি কিংবা কাঠামো হঠাৎ করে ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, অথচ অন্য কাঠামোগুলোকে রেয়াত করা হয়— তখন ধরে নেওয়া যেতে পারে যে এই কাজটি বেআইনি নির্মাণে বাধা দিতে নয়, বরং আইনের ঊর্ধ্বে উঠে কোনও ব্যক্তিবিশেষকে শাস্তি দেওয়ার জন্যই করা হয়েছে। এভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার মেনে নেওয়া যায় না। কোনও ব্যক্তি বিচার করতে পারেন না, কে দোষী আর কে দোষী নয়। কেউ এভাবে আইন হাতে তুলে নিতে পারেন না।’’
আদালত জানায়, আগে থেকে শোকজ় নোটিস ছাড়া কোনও কাঠামো ভেঙে ফেলা যাবে না। নোটিশ পাঠানোর পর ১৫ দিন সময় দেওয়া হবে। তার পর বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হবে। জেলা প্রশাসকের নিয়োগ করা নোডাল অফিসারের তত্ত্বাবধানে ভাঙার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা হবে। এ বিষয়ে সংবিধানের ১৪২ ধারা অনুযায়ী নির্দেশিকাও জারি করেছে শীর্ষ আদালত।
ভারতের বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, বিজেপি এবং তাদের শরিক দল পরিচালিত রাজ্য সরকারগুলো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই ‘অভিযুক্ত’দের বাড়ি বুলডোজার নিয়ে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথ প্রশাসনের এই ধরনের কাজের জন্য সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে কেউ কেউ ‘বুলডোজার বাবা’ বলেও সম্বোধন করে থাকেন। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে বুলডোজার নীতিকে ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী’ বলেও সমালোচনা করা হয় নানা মহলে।#
পার্সটুডে/এমএআর/১৩