৩৬ ঘণ্টায় ২৫০ শহীদ, মার্চের পর সবচেয়ে প্রাণঘাতী দিন পার করল ফিলিস্তিনিরা
(last modified Fri, 16 May 2025 12:18:01 GMT )
মে ১৬, ২০২৫ ১৮:১৮ Asia/Dhaka
  • গাড়িতে কয়েকটি কফিন
    গাড়িতে কয়েকটি কফিন

গাজায় ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর আগ্রাসন আবারও তীব্র আকার ধারণ করেছে। আজ (শুক্রবার) এখন পর্যন্ত শহীদ হয়েছেন শতাধিক ফিলিস্তিনি, যা মার্চের পর থেকে গাজায় ইসরাইলের নতুন করে শুরু করার পর সবচেয়ে প্রাণঘাতী দিন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

গাজার হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, অধিকাংশ হামলা হয়েছে গাজার উত্তরে। শুধুমাত্র বেইত লাহিয়ার ইন্দোনেশীয় হাসপাতালে ৩০ জনের মৃতদেহ এবং বহু আহতকে আনা হয়েছে, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

জাবালিয়ার আল-আওয়দা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোহাম্মদ সালেহ জানিয়েছেন, সেখানেও পাঁচজন নিহত ও ৭৫ জনের বেশি আহত অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।

৪০ বছর বয়সী ইউসুফ আল-সুলতান, যিনি বেইত লাহিয়ার পশ্চিমের সালাতিন এলাকা থেকে এএফপিকে বলেন, “আমার বাড়ির পাশের বাড়িটিতে বোমা ফেলা হয় যখন বাসিন্দারা ঘরে ছিলেন। চারপাশে ড্রোন, বিমান হামলা, গোলাবর্ষণ—সবই চলছে। রাতে ঘুমানোর উপায় নেই, মানুষ আতঙ্কে এলাকা ছাড়ছে।”

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত ৩৬ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় শহীদ ফিলিস্তিনির সংখ্যা ২৫০ ছাড়িয়ে গেছে। আহতদের বড় একটি অংশকেই ইন্দোনেশীয় ও আওয়দা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুনির আল-বুর্শ বলেন, “সাংবাদিক ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলো ইসরাইলি আগ্রাসনের সরাসরি লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।”

ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস একটি বিবৃতিতে গাজায় ইসরাইলের নৃশংস ও তীব্রতর হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান হামলা প্রমাণ করে যে, নেতানিয়াহুর সরকার গাজায় একটি গণহত্যামূলক নীতি অনুসরণ করছে, যা আন্তর্জাতিক আইন ও ন্যায়বিচারের মূলনীতিকে অবজ্ঞা করার শামিল।

হামাসের বিবৃতিতে বলা হয়, ফিলিস্তিনি জনগণ একটি গণহত্যার শিকার, যা বিশ্বের সামনে ছবি ও শব্দে সম্পূর্ণরূপে নথিভুক্ত হচ্ছে। তা সত্ত্বেও জাতিসংঘ ও এর অঙ্গসংস্থাগুলো, বিশেষ করে নিরাপত্তা পরিষদের সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয়তা এই ট্র্যাজেডির সামনে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, নৈতিক দায়িত্ব ও মানবিক কর্তব্যের এক নজিরবিহীন ব্যর্থতা তুলে ধরছে।

ফিলিস্তিনি গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে ইউরোপীয় হাসপাতালের আশপাশেও মঙ্গলবার রাতে ব্যাপক বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। ইসরায়েলি দৈনিক ইয়েদিয়োথ আহরনোথ জানায়, হামলায় অন্তত ৪০টি ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা ব্যবহার করা হয়, যেগুলো গাজায় প্রতিরোধ সংগঠনের ভূগর্ভস্থ ঘাঁটি ধ্বংস করতে নিক্ষেপ করা হয়।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় গণহত্যামূলক এই অভিযানে এখন পর্যন্ত ইসরাইল ৫৩ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতির চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও মার্চের ১ তারিখেই তা লঙ্ঘন করে ইসরাইল আবারও হামলা শুরু করে।

ইসরাইলি বন্দিদের পরিবারের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন “Hostages and Missing Families Forum” আজ (শুক্রবার) এক বিবৃতিতে জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পশ্চিম এশিয়া সফরের মাঝেই গাজায় নতুন করে বোমাবর্ষণ শুরু হওয়ায় তারা 'চরম উদ্বেগ ও হতাশায়' দিন শুরু করেছেন।#

পার্সটুডে/এমএআর/১৫