তেহরানে অনুষ্ঠিত হলো চতুর্থ আন্তর্জাতিক হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্র সম্মেলন
https://parstoday.ir/bn/news/event-i151748-তেহরানে_অনুষ্ঠিত_হলো_চতুর্থ_আন্তর্জাতিক_হাসপাতাল_ও_চিকিৎসা_কেন্দ্র_সম্মেলন
ইরানের রাজধানী তেহরানে অনুষ্ঠিত হলো তিন দিনব্যাপী ‘চতুর্থ আন্তর্জাতিক হাসপাতাল ও চিকিৎসা সম্মেলন ও প্রদর্শনী’। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের জাতীয় সম্প্রচার সংস্থার (আইআরআইবি) কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত এ সম্মেলন বুধবার শুরু হয়ে গতকাল শুক্রবার শেষ হয়।
(last modified 2025-09-11T14:06:22+00:00 )
সেপ্টেম্বর ০৬, ২০২৫ ২২:৩৫ Asia/Dhaka
  • চতুর্থ আন্তর্জাতিক হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্র সম্মেলন
    চতুর্থ আন্তর্জাতিক হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্র সম্মেলন

ইরানের রাজধানী তেহরানে অনুষ্ঠিত হলো তিন দিনব্যাপী ‘চতুর্থ আন্তর্জাতিক হাসপাতাল ও চিকিৎসা সম্মেলন ও প্রদর্শনী’। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের জাতীয় সম্প্রচার সংস্থার (আইআরআইবি) কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত এ সম্মেলন বুধবার শুরু হয়ে গতকাল শুক্রবার শেষ হয়।

ইসলামি দেশগুলোর সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল খাত নিয়ে আয়োজিত এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার ৪০টিরও বেশি দেশের স্বাস্থ্য পর্যটন খাতের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এতে হাসপাতাল পরিচালক, চিকিৎসা কেন্দ্রের কর্মকর্তা, প্রযুক্তি কোম্পানি, চিকিৎসা সরঞ্জাম শিল্পের কর্মী, একাডেমিক ও বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠান এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ থেকেও অংশ নেন মেডিকেল ট্যুরিজম খাতের কয়েকজন প্রতিনিধি। তাঁদের মধ্যে ছিলেন— ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর সভাপতি মো. রাফিউজ্জামান, মেডি বন্ধু-র প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও সুকদেব সাহা, পারফেক্ট টেলিমিডিয়া-র সিইও এবং টেবমেড ট্যুরিজম ইরান-এর বাংলাদেশ কার্যালয়ের অপারেশন প্রধান কায়সার কাদের সেলিম, ঢাকার ইস্পাহানি ইসলামিয়া আই ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হসপিটাল-এর মহামারী বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ শামসাল ইসলাম। আন্তর্জাতিক অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রেডিও তেহরান বাংলা বিভাগের সাংবাদিক মুহাম্মদ আশরাফুর রহমান এবং টেবমেড ট্যুরিজমের বাংলা বিভাগের প্রধান হাবিবুল্লাহ মনির। 

বাংলাদেশি প্রতিনিধদল: (বাঁ থেকে) হাবিবুল্লাহ মনির, মো. রাফিউজ্জামান, কায়সার কাদের সেলিম ও সুকদেব সাহা

সম্মেলনের ফাঁকে কায়সার কাদের সেলিম বলেন, “ইরান বাংলাদেশের রোগীদের জন্য একটি সম্ভাব্য চিকিৎসা গন্তব্য হতে পারে। কারণ— এক, এটি একটি মুসলিম দেশ যেখানে সহজেই হালাল খাবার পাওয়া যায়; দুই, ইরানিরা অতিথিপরায়ণ; তিন, ভাষাগত সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশি অনুবাদক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।”

ইরানের স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে সুকদেব সাহা জানান, “এখানকার চিকিৎসকরা বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ইরানের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা উন্নত এবং তারা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতকে সহযোগিতা করতে আগ্রহী।”

টেবমেড ট্যুরিজমের বাংলা বিভাগের প্রধান হাবিবুল্লাহ মনির জানান, কিডনি প্রতিস্থাপনে ইরান আন্তর্জাতিকভাবে অনন্য কারণ এখানে দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে রক্তের সম্পর্ক বাধ্যতামূলক নয়, কেবল জৈবিক মিল থাকলেই আইনগত অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে রোগীরা সাশ্রয়ী খরচে দক্ষ সার্জনের মাধ্যমে অনুমোদিত হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারেন। ভারত, থাইল্যান্ড বা সিঙ্গাপুরের তুলনায় খরচ অনেক কম বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

চতুর্থ আন্তর্জাতিক হাসপাতাল ও চিকিৎসা সম্মেলন ও প্রদর্শনী'র একটি স্টল

বাংলাদেশে মেগা মেডিকেল ক্যাম্প প্রকল্প

টেবমেড ট্যুরিজমের সিইও ডা. আলী বাজাজি ঘোষণা দেন যে বাংলাদেশে শুরু হতে যাচ্ছে “মেগা মেডিকেল ক্যাম্প প্রজেক্ট”। ইসলামি দেশগুলোর স্বাস্থ্য পর্যটন উন্নয়ন কেন্দ্র এবং টেবমেড ট্যুরিজম যৌথভাবে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। তিনি জানান, প্রকল্পটি দুই ধাপে সম্পন্ন হবে:

প্রথম ধাপ (অক্টোবর–ডিসেম্বর ২০২৫): অনলাইন ও অফলাইন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের সঙ্গে চুক্তি এবং ঢাকায় ইরানি ডাক্তার ও বিশেষজ্ঞদের সরাসরি রোগী দেখার ব্যবস্থা।

দ্বিতীয় ধাপ (২০২৬): টানা এক বছরের জন্য অ্যাফিলিয়েট কার্যক্রম চালু রেখে রোগীদের সঙ্গে প্রাথমিক চুক্তি, ভিসা ও ফ্লাইটের সমন্বয় এবং বিদেশে চিকিৎসার জন্য রেফারাল।

বক্তব্য রাখছেন ডা. আলী বাজাজি

ডা. বাজাজির মতে, প্রকল্পটির মাধ্যমে বছরে আনুমানিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থনৈতিক প্রবাহ সৃষ্টি হতে পারে, যা বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবাকে আন্তর্জাতিক মেডিকেল ট্যুরিজম নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করবে।

বৈশ্বিক চিকিৎসা সহযোগিতার মঞ্চ

সম্মেলনে ইরান মেডিকেল সিস্টেম অর্গানাইজেশনের সভাপতি ডা. মোহাম্মদ রাইসজাদে বলেন, “আমাদের সংগঠনে ৪ লাখেরও বেশি সদস্য রয়েছে। ইরান মানবসম্পদে সমৃদ্ধ এবং স্বাস্থ্য পর্যটনে হৃদরোগ, অঙ্গ প্রতিস্থাপন ও চক্ষু চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক মানের দক্ষতা অর্জন করেছে।”

এছাড়া ইরানের স্বাস্থ্য পর্যটন সম্মেলনের সভাপতি মোহাম্মদ আলী মোহসেনি বান্দপি জানান, সপ্তম জাতীয় উন্নয়ন কর্মসূচিতে প্রথমবারের মতো স্বাস্থ্য পর্যটনকে আলাদা অধ্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ইসলামী দেশগুলোর স্বাস্থ্য পর্যটন উন্নয়ন সংস্থার মহাসচিব মাজিদ জাঙ্গুয়ি বলেন, এ উদ্যোগ ইরান ও অন্যান্য দেশের মধ্যে স্বাস্থ্য পর্যটনে এক বৃহৎ সহযোগিতার প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে।

মূল শ্লোগান

এ বছরের আইপিএইচ সম্মেলনের মূল শ্লোগান ছিল— “বিশ্বে ইরানের চিকিৎসা সক্ষমতার ব্র্যান্ডিং”। এর মাধ্যমে ইরানের স্বাস্থ্য খাতকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শক্তিশালী ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন আয়োজকরা।#

পার্সটুডে/এমএআর/৬