রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক
জুলাই সনদ কার্যকরে সাংবিধানিক আদেশের প্রস্তাব, হতে পারে গণভোট
-
অধ্যাপক ড.আলী রীয়াজ
বাংলাদেশের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রস্তাব করেছে, একটি সাংবিধানিক আদেশ জারি এবং পরবর্তীতে গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের সাংবিধানিক বিধানগুলো কার্যকর করা হবে।
আজ (বুধবার) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার তৃতীয় দিনের শুরুতে কমিশন তাদের আইনি প্যানেলের সুপারিশ উপস্থাপন করে।
আইনি বিশেষজ্ঞদের প্যানেল প্রস্তাব করেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাই সনদের ২২ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে একটি 'সাংবিধানিক আদেশ' জারি করতে পারে, যেখানে জুলাই সনদ ২০২৫-এ উল্লেখিত মৌলিক সংস্কারগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এই আদেশ তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে। এরপর সেই সাংবিধানিক আদেশের ওপর গণভোট হতে পারে, যা অনুষ্ঠিত হবে আগামী জাতীয় নির্বাচনের দিনই। সাংবিধানিক আদেশে গণভোটের বিধানও অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
প্রম্তাবে আরও বলা হয়, যদি গণভোটে জনগণের অনুমোদন পাওয়া যায়, তাহলে সাংবিধানিক আদেশ জারির তারিখ থেকে সেটা বৈধতা পাবে।
৩ আগস্ট ঘোষিত জুলাই সনদের ২২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জনগণ বিদ্যমান সংবিধান এবং সব রাষ্ট্র ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক সংস্কার আইনসম্মত উপায়ে সম্পন্ন করার অভিপ্রায় প্রকাশ করছে। এর উদ্দেশ্য হলো সুশাসন ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা, ফ্যাসিবাদী শাসনের পুনরাবৃত্তি রোধ, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
আইনি প্যানেলের এই প্রস্তাবের পর রাজনৈতিক দলগুলো আলোচনা শুরু করে।
১১ সেপ্টেম্বর সংলাপের প্রথম দিনে ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে একটি নথি উপস্থাপন করে, যেখানে পূর্ববর্তী দলীয় ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শের ভিত্তিতে সম্ভাব্য বাস্তবায়ন পদ্ধতিগুলো উল্লেখ করা হয়।
এর আগে রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছিল। যেমন: পুরো বা আংশিক সনদের ওপর গণভোট; রাষ্ট্রপতির বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ; গণপরিষদ; পরবর্তী সংসদে আইন প্রণয়ন; সংসদকে সাংবিধানিক সংস্কার পরিষদ হিসেবে মনোনীত করা; এবং অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা বিষয়ে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের মতামত গ্রহণ।
বিশেষজ্ঞরাও অধ্যাদেশ, নির্বাহী আদেশ, গণভোট ও সাংবিধানিক আদেশের মতো বিকল্প প্রস্তাব করেছিলেন।
বিএনপি প্রস্তাব করেছিল, সব দল তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করবে এবং নির্বাচনে বিজয়ী দল ক্ষমতায় আসার দুই বছরের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে—যার মধ্যে সাংবিধানিক সংস্কারও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
জামায়াতে ইসলামী 'অস্থায়ী সাংবিধানিক আদেশ' জারির দাবি জানায়, যা ৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে কার্যকর হবে এবং বিদ্যমান সব আইনের ঊর্ধ্বে জুলাই সনদকে জায়গা দেবে। জাতীয় নাগরিক পার্টি ও এবি পার্টি গণপরিষদের দাবি জানায় এবং ইসলামী আন্দোলন রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের প্রস্তাব দেয়।
গণসংহতি আন্দোলন 'সাংবিধানিক সংস্কার পরিষদ' গঠনের দাবি জানায়, যেখানে পরবর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার ছয় মাসের মধ্যে সাংবিধানিক বিষয়গুলো বাস্তবায়ন ও এক বছরের মধ্যে পূর্ণ সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে।
রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলন সংসদীয় নির্বাচনের পাশাপাশি 'সংবিধান সংস্কার কনভেনশন/অ্যাসেম্বলি' নির্বাচনের দাবি জানায়।
এবি পার্টি, খেলাফত মজলিশ, জাকের পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদসহ কয়েকটি দল গণভোটকে সমর্থন করে। সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) কেবলমাত্র ঐকমত্য তৈরি হলে গণভোটে সম্মতি দেয়। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল ও গণফোরাম জোর দিয়ে বলেছে যে সাংবিধানিক পরিবর্তন পরবর্তী সংসদের উপরই ছেড়ে দেওয়া উচিত।#
পার্সটুডে/জিএআর/১৭