গাজা শান্তি প্রস্তাবে হামাসের ইতিবাচক সাড়া, স্বাগত জানালেন বিশ্বনেতারা
-
হামাস যোদ্ধা
গাজা উপত্যকায় ইহুদিবাদী ইসরায়েলের দুই বছর ধরে চলা গণহত্যামূলক যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাবিত আলোচনায় হামাসের প্রাথমিক সম্মতিকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্ব নেতারা।
ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠনটি জানিয়েছে, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবে থাকা বন্দি বিনিময়ের যে ফর্মুলার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, বন্দি বিনিময়ের ক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ের প্রয়োজনীয় শর্ত বাস্তবায়নসহ জীবিত-মৃত সব বন্দিকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি অনুমোদন করা হয়েছে।” এই প্রেক্ষিতে হামাস পুরো প্রক্রিয়ার বিস্তারিত নিয়ে আলোচনা করতে মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে শিগগির বসার ব্যাপারে প্রস্তুত থাকার কথাও জানিয়েছে।
হামাস তার বিবৃতিতে আরও জানিয়েছে, তারা ‘ফিলিস্তিনি স্বাধীন সংস্থার কাছে গাজা ভিত্তির প্রশাসন হস্তান্তরে’ সম্মত হয়েছে, যা ফিলিস্তিনি জাতীয় ঐক্যমত এবং আরব ও ইসলামিক সমর্থনের ভিত্তিতে গঠিত হবে ।
যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি পরিকল্পনা প্রস্তাবে হামাসের আংশিক রাজি হওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে লিখেছেন, ‘হামাসের সদ্য প্রকাশিত বিবৃতির ভিত্তিতে আমি বিশ্বাস করি, তারা স্থায়ী শান্তির জন্য প্রস্তুত। ইসরায়েলকে অবিলম্বে গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে হবে, যাতে আমরা জিম্মিদের নিরাপদে এবং দ্রুত মুক্ত করতে পারি।’
বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস হামাসের বিবৃতিটি স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁর মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন, জাতিসংঘ প্রধান 'সকল পক্ষকে গাজায় মর্মান্তিক সংঘাতের অবসান ঘটানোর সুযোগটি কাজে লাগাতে উত্সাহিত করেন।"
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, হামাসের মার্কিন শান্তি পরিকল্পনা গ্রহণ একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। তিনি বলেন, "যুক্তরাজ্য, তার অংশীদারদের পাশাপাশি, আরও আলোচনাকে সমর্থন করতে এবং ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের জন্য টেকসই শান্তির দিকে কাজ করার জন্য প্রস্তুত।" স্টারমার বিলম্ব না করে চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সকল পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্ররন বলেছেন,ফ্রান্স "জাতিসংঘে তার প্রচেষ্টার অনুসরণে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের পাশাপাশি তার সমস্ত আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সাথে সম্পূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।"
তিনি অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও মানবিক প্রবেশাধিকারের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন।
জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জজ বলেছেন, হামাস নীতিগতভাবে ট্রাম্পের পরিকল্পনা মেনে নেওয়ার পর গাজায় শান্তি এখন 'হাতের নাগালে'।
ইতালীয় প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি হামাসের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জারির পর গাজায় প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার জন্য তার 'পূর্ণ সমর্থন' পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাইকেল মার্টিন বলেছেন, গাজা শান্তি পরিকল্পনায় হামাসের প্রতিক্রিয়া স্থায়ী শান্তির দিকে নিয়ে যেতে পারে। মার্টিন এক্স-এ এক বিবৃতিতে বলেছেন, "এখন একটি সুযোগ আছে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার এবং আমি সকল পক্ষকে এটি গ্রহণ করতে উত্সাহিত করি।"
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারি বলেছেন, দোহা “হামাসের ট্রাম্প প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদনকে স্বাগত জানায়” এবং মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় অব্যাহত রাখবে। তিনি বন্দি মুক্তির ব্যাপারে হামাসের আগ্রহের প্রশংসা করেন।
মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হামাসের প্রতিক্রিয়াকে 'ইতিবাচক উন্নয়ন' বলে উল্লেখ করেছে এবং জানিয়েছে, এটি 'ফিলিস্তিনি জনগণের রক্ত ঝরানো বন্ধে সব দলের আন্তরিকতা' প্রদর্শন করে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান হামাসের প্রতিক্রিয়াকে 'গঠনমূলক ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ' আখ্যা দিয়েছেন এবং ইসরায়েলকে গাজায় গণহত্যা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেছেন, ক্যানবেরা 'ট্রাম্পের পরিকল্পনায় অগ্রগতি'কে স্বাগত জানায় এবং হামাসকে দ্রুত বন্দি মুক্তি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আহ্বান জানায়।
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো বলেছেন, তিনি 'এইবার ট্রাম্পের সঙ্গে একমত' এবং 'গণহত্যার অবসান' দাবি করেন। তিনি আরও বলেন, যদি ট্রাম্প "ফিলিস্তিনে নিপীড়ন বন্ধ করতে তার সেনা পাঠান, তবে সেই সেনাদের পাশে কলম্বিয়ার সেনারাও থাকবে।”
ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা এসেছে এমন এক সময়ে, যখন ওয়াশিংটন ইসরায়েলি গণহত্যার জন্য সীমাহীন সামরিক, গোয়েন্দা ও রাজনৈতিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। গাজায় এখন পর্যন্ত ৬৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
যুক্তরাষ্ট্র এ পর্যন্ত জাতিসংঘের বহু প্রস্তাব ভেটো দিয়েছে, যেগুলো গাজার ভয়াবহ আগ্রাসন বন্ধ করতে আনা হয়েছিল।
এক্সিওসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং তার টিমকে বলেছেন, তারা যেন পূর্ব পরিকল্পনার সঙ্গেই থাকে। নেতানিয়াহু নির্দেশ দিয়েছেন, হামাসের প্রতিক্রিয়াকে যেন ট্রাম্পের তথাকথিত শান্তি পরিকল্পনার প্রত্যাখ্যান হিসেবেই দেখা হয়।#
পার্সটুডে/এমএআর/৪