চাকসু নির্বাচনে ২৬ পদের ২৪টিতেই ছাত্রশিবির প্যানেলের জয়, এজিএস ছাত্রদলের
-
চাকসু নির্বাচনে ভূমিধস জয় পেয়েছে ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে ভূমিধস জয় পেয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল। কেন্দ্রীয় সংসদের মোট ২৬টি পদের মধ্যে ২৪টিতেই জয় পেয়েছেন তাদের প্রার্থীরা। বাকি দুটি পদে একটি ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল থেকে এবং অন্যটি ‘বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল থেকে প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।
আজ (বৃহস্পতিবার) ভোর ৪টায় চবির ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে ফলাফল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন। এসময় তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে। প্রার্থী ও ভোটাররা নির্বাচনে অসাধারণ উৎসবমুখর অংশগ্রহণ করেছেন।
ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী- ভিপি পদে ছাত্রশিবির সমর্থিত ইব্রাহিম হোসেন রনি ৭ হাজার ৯৮৩ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তিনি সংগঠনটির চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও ইতিহাস বিভাগের এমফিলের শিক্ষার্থী। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল সমর্থিত সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় পেয়েছেন ৪ হাজার ৩৭৪ ভোট।
জিএস পদে সাঈদ বিন হাবিব ৮ হাজার ৩১ ভোট পেয়ে বিপুল ব্যবধানে জয় পেয়েছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সাহিত্য সম্পাদক ও ইতিহাস বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের শাফায়েত হোসেন পেয়েছেন ২ হাজার ৭১৪ ভোট।

এজিএস পদে জয় পেয়েছেন ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের আইয়ুবুর রহমান তাওফিক, যিনি পেয়েছেন ৭ হাজার ১৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রশিবিরের সাজ্জাত হোছন মুন্না পেয়েছেন ৫ হাজার ৪৫ ভোট।
অন্য পদে বিজয়ীরা হলেন- খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক: মোহাম্মদ শাওন, সহ-খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক: তামান্না মাহবুব প্রীতি (বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্য)। সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক: হারেজ মাতব্বর, সহ-সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক: জিহাদ হোসাইন, দপ্তর সম্পাদক: আব্দুল্লাহ আল নোমান, সহ-দপ্তর সম্পাদক: জান্নাতুল আদন নুসরাত, ছাত্রী কল্যাণ সম্পাদক: নাহিমা আক্তার দ্বীপা, সহ-ছাত্রী কল্যাণ সম্পাদক: জান্নাতুল ফেরদৌস রিতা, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক: মো. মাহবুবুর রহমান, গবেষণা ও উদ্ভাবন সম্পাদক: তানভীর আঞ্জুম শোভন, সমাজসেবা ও পরিবেশ সম্পাদক: তাহসিনা রহমান, স্বাস্থ্য সম্পাদক: আফনান হোসাইন ইমরান, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক: মো. মোনায়েম শরীফ, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট ও আন্তর্জাতিক সম্পাদক: মেহেদী হাসান সোহান, যোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক: মো. ইসহাক ভূঞা, সহ-যোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক: ওবায়দুল সালমান, আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক: ফজলে রাব্বি তৌহিদ, পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক: মাসুম বিল্লাহ।
নির্বাহী সদস্য পদে নির্বাচিতরা হলেন- জান্নাতুল ফেরদৌস সানজিদা, আদনান শরীফ, আকাশ দাশ, সালমান ফারসী, মো. সোহানুর রহমান।
এখন পর্যন্ত চাকসু নির্বাচন হয়েছে মাত্র সাতবার— ১৯৭০, ১৯৭২, ১৯৭৪, ১৯৭৯, ১৯৮১, ১৯৯০ এবং এবার ২০২৫ সালে। ১৯৮১ সালের নির্বাচনে ছাত্রশিবির পেয়েছিল প্রথম জয়। ওই নির্বাচনে ভিপি হন জসিম উদ্দিন সরকার আর জিএস হন আবদুল গাফফার। দুজনই ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তৎকালীন নেতা। এরপর ১৯৯০ সালের নির্বাচনে ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’র কাছে হেরে যায় তারা। এরপরের দীর্ঘ তিন দশক চাকসু নির্বাচনই হয়নি। বন্ধ ছিল ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই প্ল্যাটফর্মের কার্যক্রম। এরপর দীর্ঘ ৪৪ বছর পর আবারও শিবির-সমর্থিত প্রার্থীরা সেই নেতৃত্বের আসনে ফিরলেন। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংসদ নির্বাচনের ভূমিধস বিজয় পেয়েছে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল।#
পার্সটুডে/এমএআর/১৬