৮ দলের সমাবেশে জামায়াত আমির
'২০২৬ সালের নির্বাচন দেখতে হলে আগে জুলাই বিপ্লবকে স্বীকৃতি দিতে হবে'
-
ডা. শফিকুর রহমান
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, "যারা জুলাই বিপ্লব মানবেন না, তাদের জন্য ২০২৬ সালে কোনো নির্বাচন নাই। ২০২৬ সালের নির্বাচন দেখতে হলে আগে জুলাই বিপ্লবকে স্বীকৃতি দিতে হবে। আর জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি দিতে হলে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতেই হবে। এই আইনি ভিত্তি ছাড়া কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠান হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।"
আজ (মঙ্গলবার) বিকেলে রাজধানীর পল্টনে আট দল আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দেশের মুক্তিকামী মানুষ নির্বাচনের আগেই গণভোট চায় জানিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, "গণভোটের ব্যাপারে সবাই একমত হয়ে যখন স্বাক্ষর করেছি, তখন ভোট আগে হওয়াই যুক্তিযুক্ত। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের মতামতের ভিত্তিতে সনদ হয়েছে। গণতন্ত্রের কথা হলো সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত।"
কোনো দলের নয়, জনতার চাওয়াকে কান পেতে শোনার চেষ্টা করতে বলেন শফিকুর রহমান। নইলে নিজেদের পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
তার ভাষায়, "আমরা লড়াই করে ফ্যাসিবাদ বিদায় করেছি। লড়াই করে দাবিও আদায় করব। জনগণের ভাষা বোঝার চেষ্টা করুন। জনগণের ভাষা না বুঝলে পরিণতি ভোগ করতে হবে।"
জামায়াতের আমির বলেন, 'দাবির ব্যাপারে আমরা অনড় থাকব। ফ্যাসিবাদের দাবির কাছে দেশের মানুষ মাথা নত করবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণের দাবি মেনে না নেওয়া হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। সরকার যেন জনগণের দাবি বুঝতে পারে এবং নির্বাচনের আগে গণভোট দেয়।'
শফিকুর রহমান আরও বলেন, "আমরা ভদ্র ভাষায় কথা বলছি, তবে আমাদের দাবি আদায় হিমালয়ের মতো অনড় থাকবে। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দাবি আদায় না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।"
সমাবেশের জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, যারা দাবি করছেন একদিনে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন হবে, কীভাবে হবে? বাংলাদেশের সব সংবিধান বিশেষজ্ঞ একমত, জুলাই জাতীয় সনদে ৪৮টি বিষয়ে সংবিধানের অনেক সংস্কার হয়েছে- যেমন দলের প্রধান ও সরকারের প্রধান এক থাকবে না, সাংবিধানিক পদগুলোতে পৃথক নিয়োগ কর্তৃপক্ষ হবে, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট প্রভৃতিসহ যা যা সংশোধন হয়েছে– গণভোট যদি আইনি ভিত্তি না হয়, তাহলে কীসের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন হবে?’
গোলাম পরওয়ার বলেন, সরকারকে আমরা বলতে চাই, আগে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করে গণভোট আয়োজন করুন। নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট করুন। তারপর ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন।
ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেছেন, জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দেওয়া এবং গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার পরেই জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত। জুলাই সনদকে যদি আইনি ভিত্তি দেওয়া না করা হয়, তবে নির্বাচন অবৈধ হবে।
রেজাউল করিম বলেন, গণভোটের দাবি কোনো একটি দলের নয়। এর পর আমরা এমন আন্দোলন শুরু করব, সরকার নির্বাচনের আগে গণভোট নিতে বাধ্য হবে।
সমাবেশে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব, সহস্রাধিক তাজা প্রাণের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত একটি অর্জন। এই বিপ্লবের নীতিভিত্তিক রূপরেখা ও বাংলাদেশ পরিচালনার জন্যই প্রস্তুত করা হয়েছে জুলাই সনদ; আমরা এটিকে কেবল কোনো কাগজপত্রের সনদ হিসেবে দেখছি না, বরং আগামীর বাংলাদেশের রূপরেখা হিসেবে গৃহীত হোক এটাই আমাদের দাবি। তাই দলের পক্ষ থেকে বলছি– অনতিবিলম্বে জুলাই সনদকে সরকারি আদেশের মাধ্যমে প্রাথমিক আইনি ভিত্তি দিতে হবে এবং আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে এটিকে চূড়ান্ত আইনি স্বীকৃতি দিতে হবে। যদি এ পথে কোনো ব্যত্যয় ঘটে, তাহলে জুলাই বিপ্লবপন্থীরা সেটাকে বরদাশত করবে না; আমরা তা মেনে নেব না। আমরা স্পষ্ট ঘোষণা দিচ্ছি– আমাদের জুলাই যোদ্ধাদের, বিপ্লবের শাহাদাৎ বরণকারী বীর শহীদদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই সনদকে গণভোট ব্যতীত বাংলার মাটিতে বাস্তবায়িত হতে দেব না।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন– নেজামে ইসলাম পার্টির আমির অধ্যক্ষ মাওলানা সরওয়ার কামাল আজিজী, খেলাফত মজলিসের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল বাসিত আজাদ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র প্রকৌশলী রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা হাবীবুল্লাহ মিয়াজী এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির সভাপতি অ্যাড. আনোয়ারুল হক চাঁন।#
পার্সটুডে/এমএআর/১১