উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচন ২০২২ : প্রথম দফায় ৫৮টি আসনের পাটিগণিত
-
বিজেপি-বিএসপি-কংগ্রেস-এসপি নেতা-নেত্রী
ভারতের উত্তর প্রদেশে প্রথম দফায় যে ৫৮টি বিধানসভা আসনে নির্বাচন হওয়ার কথা, সেখানে ২০১৭ সালে বিজেপি ঢেউ ছিল। বিজেপি ৫৩ টি বিধানসভা আসন জিতে এসপি, বিএসপি এবং রাষ্ট্রীয় লোকদলকে সম্পূর্ণরূপে পরাস্ত করেছিল, কিন্তু এবার কী হবে? এসপি-আরএলডি জোট এবং বহুজন সমাজ পার্টি কী পশ্চিম উত্তর প্রদেশে ফিরে আসতে পারবে? প্রথম ধাপের নির্বাচনে এসব রাজনৈতিক দলগুলোর সমীকরণ কী এবং কী চিত্র উঠে আসছে তা স্পষ্ট হয়েছে।
উত্তর প্রদেশে মোট ৪০৩টি আসনের জন্য ৭ দফায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম দফার নির্বাচন হবে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার)। সমস্ত আসনের ভোট গণনা হবে ১০ মার্চ।
রাজ্যটিতে ২০১৭ সালে বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে প্রকাশ, এই নির্বাচনে বিজেপি ৫৩টি আসন জিতে এক নম্বর দল হয়েছে। এমন মাত্র চারটি আসন ছিল যেখানে বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে ছিল। ২০১৭ সালের নির্বাচনে, সমাজবাদী পার্টি এবং রাষ্ট্রীয় লোকদল আলাদাভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। এই দুই দলের খাতায় মাত্র তিনটি আসন এসেছিল, আর বিএসপিকে মাত্র দুটি আসনেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল।
৫৮ টি বিধানসভা আসনে যেখানে প্রথম দফায় নির্বাচন হচ্ছে, ২০১৭ সালে বিজেপি সেখানে একতরফা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। বিজেপি তখন ৫৮টি আসনের মধ্যে ৫৩ টি জিতেছিল, কিন্তু আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, গত নির্বাচনে জয়ী ১৯ প্রার্থীকে এবার টিকিট দেওয়া হয়নি। বিজেপি গতবারের ১৯ জন বিজয়ী এবং ৪ জন পরাজিতের উপর ভরসা না করেই নতুন মুখকে মাঠে নামিয়েছে। দলটি বহুজন সমাজ পার্টির টিকিটে গত বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী এমন তিন প্রার্থীকেও টিকিট দিয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে খয়রাগড়ের ভগবান সিং কুশওয়াহা, বারৌলি থেকে ঠাকুর জয়বীর সিং এবং ইতমাদপুর থেকে ডা. ধরমপাল সিং।
এবারের বিধানসভা নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় লোকদলের সঙ্গে জোট বেঁধেছে সমাজবাদী পার্টি। আরএলডি প্রথম ধাপে ৫৮টির মধ্যে ২৯টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। ২৮টিতে এসপি এবং একটি আসনে জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টি। এসপি-আরএলডি ৫৮টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৪৩টিতে প্রার্থী বদল করেছে। বিশেষ বিষয় হল এই ৪৩ জন প্রার্থী ২০১৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এসপি বা রাষ্ট্রীয় লোকদলের টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। অনুপশহর বিধানসভা আসনটি এনসিপিকে দেওয়া হয়েছে, যেখান থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কেকে শর্মা।
২০১৭ সালে বহুজন সমাজ পার্টি বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী দুই প্রার্থী ছাড়া বাকি ৫৬টি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করেছে। এই দুই প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন মান্ত বিধানসভা থেকে শ্যাম সুন্দর শর্মা এবং গোবর্ধন আসন থেকে রাজকুমার রাওয়াত। ৩০টি আসন রয়েছে যেখানে বিএসপি প্রার্থী দুই নম্বরে ছিল। কিন্তু এদের মধ্যে মাত্র একজনকে এবার টিকিট দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, কংগ্রেস গত বিধানসভা নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। ২০১৭ সালে, প্রথম ধাপে ৫৮টি আসনের মধ্যে, কংগ্রেস মাত্র ২৩টি আসনে তাদের প্রার্থী দিয়েছিল। জোট হওয়া সত্ত্বেও, এমন অনেকগুলো আসন ছিল যেখানে এসপি এবং কংগ্রেসের প্রার্থীরা একে অপরের মুখোমুখি ছিলেন।
এ বারের নির্বাচনে কংগ্রেস একাই লড়ছে। কংগ্রেস ৫৮টি আসনেই তাদের প্রার্থী দিয়েছে। ওই ৫৮ জন প্রার্থীর মধ্যে পাঁচজন প্রার্থী রয়েছেন যারা গতবার কংগ্রেসের টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, কিন্তু হেরেছিলেন। এরমধ্যে রয়েছে পুরকাজি বিধানসভা আসন থেকে দীপক কুমার, কোয়েল থেকে বিবেক বনসাল, মথুরার প্রদীপ মাথুর, বলদেব থেকে বিনেশ কুমার এবং আগ্রা গ্রামীণ বিধানসভা আসন থেকে উপেন্দ্র সিং।
সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অফ ডেভেলপিং সোসাইটিজ (সিএসডিএস)-এর অধ্যাপক সঞ্জয় কুমারের মতে, বিজেপি প্রতিটি নির্বাচনে নতুন প্রার্থীদের সুযোগ দেয়। প্রধান কারণ হল স্থানীয় স্তরে বর্তমান বিধায়কদের বিরুদ্ধে ক্ষমতাবিরোধিতা এড়াতে দল প্রার্থী পরিবর্তন করে। গুজরাটের গত নির্বাচনে বিজেপি এক-তৃতীয়াংশ নতুন প্রার্থী দিয়েছিল। এটাই বিজেপির কৌশল। তবে, প্রথম দফায় এসপি-আরএলডি জোট এবং বহুজন সমাজ পার্টি প্রার্থী বদল করেছে, এর অন্য কারণ রয়েছে।
অধ্যাপক সঞ্জয় কুমার বলেন, এই দলগুলো মূলত স্থানীয় কারণের ভিত্তিতে প্রার্থী নির্ধারণ করে। এতে জাত সমীকরণ ও প্রার্থীদের ভাবমূর্তি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।
প্রথম দফায় ৫৮টি আসনে নারী প্রার্থীদের অবস্থা খতিয়ে দেখা দরকার। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৭ সালের তুলনায় এবার নারী প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। কংগ্রেস মহিলাদের টিকিট দিয়েছে সবচেয়ে বেশি। ২০১৭ সালে, কংগ্রেস ৫৮টি আসনের মধ্যে ২৩ টিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল, যার মধ্যে শুধুমাত্র একজন মহিলা প্রার্থী ছিল। এটা স্পষ্ট যে এবার মহিলা প্রার্থীকে মাঠে নামিয়ে বড় বাজি খেলেছে কংগ্রেস। অন্যদিকে, এসপি-আরএলডি জোট মাত্র চারটি এবং বিজেপি সাত মহিলা প্রার্থীকে টিকিট দিয়েছে।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/এআর/৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।