শান্তি বজায় রাখার আহ্বান কেজরিওয়ালের
দিল্লিতে হনুমান জয়ন্তীর মিছিলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, ‘ষড়যন্ত্র’ বলছে বিজেপি
ভারতের রাজধানী দিল্লির জাহাঙ্গীরপুরীতে হনুমান জয়ন্তীর মিছিলে পাথর নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়েছে। ওই ঘটনায় ১০ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
আজ (রোববার) হিন্দি গণমাধ্যম ‘দৈনিক ভাস্কর’ সূত্রে প্রকাশ, পুলিশ জানায়, এলাকায় উত্তেজনা থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। সেখানে র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (র্যাফ)-এর দুটি কোম্পানি মোতায়েন করা হয়েছে। দিল্লির সমস্ত স্পর্শকাতর এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং এখানে হাই অ্যালার্ট রয়েছে।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেছেন, দিল্লির নিরাপত্তার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের। দিল্লির জাহাঙ্গীরপুরীতে মিছিলে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। যারা দোষী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সকলের কাছে আবেদন, একে অপরের হাত ধরে শান্তি বজায় রাখুন।
স্পেশাল পুলিশ কমিশনার দীপেন্দ্র পাঠক গতকাল গভীর রাতে বলেন, এফআইআর নথিভুক্ত করার পরে তদন্ত শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পরিবেশ এখন শান্তিপূর্ণ। আমরা জনগণের সাথে ক্রমাগত যোগাযোগ করছি এবং শান্তি বজায় রাখা এবং গুজব উপেক্ষা করার জন্য আবেদন করছি। নিরাপত্তার জন্য এখানে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দিল্লির পুলিশ কমিশনার রাকেশ আস্থানার কাছে পরিস্থিতির খোঁজ নিয়েছেন। তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। ঘটনার পর জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়েও (জেএনইউ) নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এখানে রামনবমীর দিন ছাত্রদের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
গণমাধ্যমে প্রকাশ, শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ জাহাঙ্গীরপুরীর কুশল সিনেমার কাছে মিছিলে আচমকা পাথর নিক্ষেপ করা হয়। এরপর দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। ভাঙচুর করা হয় বেশ কিছু যানবাহন। কয়েকটি গাড়িতেও আগুন দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশের টিমও এর কবলে পড়ে।
দিল্লি পুলিশের ‘পিআরও’ অন্যেশ রাই বলেন, এটি একটি ঐতিহ্যবাহী মিছিল যা প্রত্যেক বছর হয়। শোভাযাত্রার সঙ্গে থাকা পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি সামাল দেন। ঘটনার পর বেশ কয়েকটি থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী ডাকা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স মার্চ করেছে। ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ বাহিনী। পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় পুলিশ সদস্যরাও আহত হয়েছেন। সংবাদ সংস্থার মতে, ওই ঘটনায় একজন সাব-ইন্সপেক্টরসহ ৬ পুলিশ সদস্য এবং অন্য একজন ব্যক্তি আহত হয়েছেন।
এদিকে, দিল্লির ঘটনার পর উত্তর প্রদেশ সরকারও রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনকে কড়া সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে। দিল্লি সংলগ্ন নয়ডায় শনিবার রাতে পুলিশ ফ্ল্যাগ মার্চ করেছে। এতে যুক্ত ছিলেন যুগ্ম পুলিশ কমিশনার লাভ কুমারও। তিনি বলেন, দিল্লিতে ঘটনার পর জনগণের মনে নিরাপত্তার পরিবেশ তৈরি করতে ফ্ল্যাগ মার্চ করা হয়েছে।
এদিকে, উগ্রহিন্দুত্ববাদী বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) মুখপাত্র বিনোদ বানসাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বার্তায় অভিযোগ করেছেন, হনুমান জয়ন্তীর মিছিলে ইসলামি চরমপন্থিরা হামলা করেছে। তার দাবি, ইসলামিক জিহাদীরা দিল্লির জাহাঙ্গীরপুরীতে হনুমান জন্মবার্ষিকীর মিছিলে পাথর, তলোয়ার ও গুলি বর্ষণ করেছে।
বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র বলেছেন, জাহাঙ্গীরপুরীতে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বাস করে। দিল্লি দাঙ্গার সময়েও একই ঘটনা ঘটেছিল। পাথরগুলো ছাদে কীভাবে এলো? এখন কোনো প্রমাণের প্রয়োজন নেই। করৌলির পর খারগোনেও একই ঘটনা ঘটেছে। রামনবমী ও হনুমান জয়ন্তীতে এই হামলা কী কাকতালীয় নাকি পরীক্ষামূলক? এটা সরাসরি সন্ত্রাসী হামলা। এখন কোনো প্রমাণের প্রয়োজন নেই।
‘আউটলুক’ হিন্দি গণমাধ্যমে প্রকাশ, দিল্লি বিজেপির প্রধান আদেশ গুপ্তা এবং দলের এমপি মনোজ তিওয়ারি বলেছেন, মিছিলে আক্রমণ একটি স্বতঃস্ফূর্ত ঘটনা নয় বরং একটি ‘ষড়যন্ত্র’ ছিল।
বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র বলেছেন, মিছিলে পাথর নিক্ষেপ একটি ‘সন্ত্রাসী হামলা’। তিনি অবিলম্বে দেশ থেকে ‘অবৈধ অভিবাসীদের’ বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন। দিল্লি বিজেপির সভাপতি বলেছেন, তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সাথে দেখা করবেন এবং তাকে সহিংসতার তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করবেন। দিল্লিতে অবৈধভাবে বসবাসরত ‘রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি’দের বসতিতে কীভাবে পানি ও বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) সংক্রান্ত আন্দোলনের সময় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে দিল্লিতে ভয়াবহ দাঙ্গা শুরু হয়েছিল। এতে উত্তর-পূর্ব দিল্লির অনেক এলাকায় যে তাণ্ডব চলেছিল তার চিহ্ন এখনও বিদ্যমান। সেসময়ে উত্তর-পূর্ব দিল্লির চাঁদবাগ, খাজুরি খাস, বাবরপুর, জাফরাবাদ, সিলামপুর, মেইন ওয়াজিরাবাদ রোড, করাওয়াল নগর, শিব বিহার এবং ব্রহ্মপুরী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
নাগরিকত্ব আইন সমর্থক এবং বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সহিংসতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার পরে ২৪ ফেব্রুয়ারি উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ শুরু হয়, এতে কমপক্ষে ৫৩ জন নিহত এবং প্রায় ৭০০ জন আহত হয়েছিল।#
পার্সটুডে/এমএএইচ/আবুসাঈদ/১৭