বিহার সংখ্যালঘু কমিশন: শুক্রবার স্কুল বন্ধ রাখতে হবে, জবাব দিল বিজেপি
ভারতে বিহার রাজ্যে কিছু সরকারি স্কুলে শুক্রবারের ছুটি এবং রোববারের পড়াশুনার বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির মধ্যে শিক্ষা দফতরকে চিঠি লিখে শুক্রবারের ছুটি বজায় রাখতে বলেছে রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশন।
বিহার রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের ‘পিআরও’ ফারুকী জামা বলেছেন, চিঠির সাথে ১৯৩০ সালের ম্যানুয়ালটিও সংযুক্ত করা হয়েছে, যাতে উর্দু স্কুলে শুক্রবার জুম্মা নামাজের জন্য স্কুল বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। এবং সংস্কৃত স্কুলগুলোতে হিন্দি মাসের প্রতিপদ ও অষ্টমীতে বন্ধ রাখার নির্দেশ রয়েছে। শুক্রবারের ছুটি ন্যায্য।
ওই বিষয়ে সংখ্যালঘু কল্যাণ মন্ত্রী জামা খান বলেন, কমিশন চিঠি দিয়েছে। আমরা সরকারের কাছেও দাবি জানাচ্ছি শুক্রবারের ছুটি দেওয়া হোক। কারণ, এই নিয়ম আজ নতুন নয়। আমরা ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি শুক্রবার ছুটি হয়ে আসছে।
এদিকে, বিজেপির মুখপাত্র প্রেম রঞ্জন প্যাটেল শিক্ষা বিভাগকে লেখা চিঠি প্রসঙ্গে সংখ্যালঘু কমিশনের সমালোচনা করেছেন। প্রেম রঞ্জন বলেন, কমিশনের কাজ সুপারিশ করা, কিন্তু সেই নিয়ম পরিবর্তন করা বা নিয়ম প্রণয়ন করা সরকারের কাজ। সরকার যদি চায়, শুক্রবার ছুটির নিয়ম করা যেতে পারে, তবে সেটা সংখ্যালঘু কমিশনের পরামর্শে বা চিঠিতে নয়। কমিশন গঠন করে সরকার। কমিশন সুপারিশ করে। কমিশন যদি কোনো আদেশ দিয়ে থাকে, তাহলে সে ধরনের কমিশনকে বিবেচনা করা উচিত বলে মনে করি।
রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী বিজয় কুমার চৌধুরী বলেছেন, বিষয়টি পর্যালোচনা করার জন্য কর্মকর্তাদের চিঠি পাঠানো হয়েছে। এখনো পর্যন্ত ওই বিষয়ে রিপোর্ট আসেনি। শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, তিনি কিষাণগঞ্জের অনেক কর্মকর্তার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন এবং তারা বলেছেন যে এই নিয়ম দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে। রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না বলেও শিক্ষামন্ত্রী বিজয় কুমার চৌধুরী মন্তব্য করেন।
এদিকে, বিহারের কিছু সরকারি স্কুলে রোববারের পরিবর্তে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির বিষয়ে সম্প্রতি বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন হিন্দুত্ববাদী বিজেপির সিনিয়র নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং। গিরিরাজ সিং বিহারের সরকারি উর্দু স্কুলে সাপ্তাহিক ছুটিকে শরীয়াহ আইন আরোপের চেষ্টা বলে অভিহিত করেছেন।
গিরিরাজ সিং এমপি বলেন, ‘শুক্রবার স্কুলগুলোতে ছুটি দেওয়া শরীয়াহ আইন প্রয়োগ করার প্রচেষ্টা।’ তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই, আমরা জানি যে রোববার স্কুল এবং অফিস বন্ধ থাকে। শুক্রবার কিছু প্রতিষ্ঠানে ছুটি দেওয়া, এটি আমার কাছে একটি সম্প্রদায়ের সুবিধার জন্য শরীয়াহ কোড প্রয়োগ করার প্রচেষ্টা বলে মনে হচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, বিহারের কাটিহারসহ কিছু জেলায় সরকারি স্কুলে রোববারের পরিবর্তে শুক্রবার ছুটি দেওয়া হয়, যার প্রথা বহু দশক ধরে চলে আসছে। কিন্তু এটি এখন হিন্দুত্ববাদী বিজেপি এবং অন্য দলের মধ্যে বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিহারে সরকারি স্কুলে সাপ্তাহিক ছুটি নিয়ে এই বিতর্ক এখন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের দল ‘জেডিইউ’ এবং সহযোগী দল ‘বিজেপি’র মধ্যে মতবিরোধের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মজার ব্যাপার হল, উপমুখ্যমন্ত্রী তারকিশোর প্রসাদসহ রাজ্য মন্ত্রিসভায় বিজেপির মন্ত্রিরা এবং বিধানসভায় দলের নেতারা এই বিতর্ক এড়াতে চেষ্টা করছেন।
বিহারের কাটিহারে, অনেক সরকারী মধ্য বিদ্যালয় এবং আপগ্রেড করা মধ্যম বিদ্যালয়গুলো এখনও রোববারের পরিবর্তে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি পাচ্ছে, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শিক্ষা দফতরের মতে, বর্তমানে কাটিহারের ১০০টি স্কুলে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি দেওয়া হয়। শুক্রবার ছুটি দেওয়া হচ্ছে, বিশেষ করে সংখ্যালঘু মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার সরকারি স্কুলগুলোতে। #
পার্সটুডে/এমএএইচ/আবুসাঈদ/০৩
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।