শিক্ষা, ইউরোপ এবং অভ্যন্তরীণ রাজনীতি: লন্ডন ত্রিমুখী সংকটে জর্জরিত
https://parstoday.ir/bn/news/world-i154724-শিক্ষা_ইউরোপ_এবং_অভ্যন্তরীণ_রাজনীতি_লন্ডন_ত্রিমুখী_সংকটে_জর্জরিত
পার্সটুডে-৫০টি বিশ্ববিদ্যালয় দেউলিয়া হওয়ার সতর্কবার্তা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিরক্ষা তহবিলে যোগদানের জন্য আলোচনা ব্যর্থ হওয়া এবং একটি নতুন বামপন্থী দলের জন্ম ইত্যাদি কারণে ব্রিটেন ঝুঁকিপূর্ণ দিন পার করছে।
(last modified 2025-12-04T14:54:46+00:00 )
ডিসেম্বর ০৪, ২০২৫ ১৭:৩৮ Asia/Dhaka
  • ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার
    ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার

পার্সটুডে-৫০টি বিশ্ববিদ্যালয় দেউলিয়া হওয়ার সতর্কবার্তা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিরক্ষা তহবিলে যোগদানের জন্য আলোচনা ব্যর্থ হওয়া এবং একটি নতুন বামপন্থী দলের জন্ম ইত্যাদি কারণে ব্রিটেন ঝুঁকিপূর্ণ দিন পার করছে।

গত সপ্তাহে ব্রিটেনের ঘটনাবলী এমন একটি দেশের চিত্র তুলে ধরে যা অর্থনৈতিক, ভূ-রাজনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রে গভীর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। অভূতপূর্ব আর্থিক সংকটের দ্বারপ্রান্তে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে ইউরোপের সাথে প্রতিরক্ষা সম্পর্কে বাধার সম্মুখীন বিদেশী সম্পর্ক এবং বিপ্লবী স্লোগানসহ দেশীয় রাজনৈতিক দৃশ্য একটি নতুন শক্তির উত্থানের সাক্ষ্য বহন করে। এই তিনটি আপাতদৃষ্টিতে পৃথক ঘটনা প্রমাণ করে লন্ডন জটিল পথ নিয়েছে। পার্সটুডে'র আজকের এই সংবাদ প্যাকেজে ব্রিটেনের সর্বশেষ পরিস্থিতির ওপর সংক্ষিপ্ত নজর দেওয়ার চেষ্টা করবো:

 

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্ধকার ভবিষ্যত; ব্যাপক দেউলিয়া হওয়ার হুমকি

ইউকে অফিস ফর স্টুডেন্টস (OfS)এর সরকারী সতর্কতা দেশের উচ্চশিক্ষা খাতের জন্য শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। টেলিগ্রাফের মতে, আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে, যার মধ্যে ২৪টি সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ। ওএফএসের প্রধান নির্বাহী যুক্তরাজ্যের হাউস অফ কমন্স শিক্ষা কমিটিকে পরিস্থিতি নিশ্চিত করে ঘোষণা করেছেন যে, উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ গ্রুপের ৭টিসহ প্রায় ২০টি প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় গুরুতর আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।

 আর্থিক সংকটের মূল কারণ হিসেবে বছরের পর বছর ধরে 'ফি জমে যাওয়া' এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা তীব্র হারে হ্রাস পাওয়াকে চিহ্নিত করা যেতে পারে। যুক্তরাজ্যের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের খরচ মেটাতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে উচ্চ ফি'র ওপর নির্ভর করেছে এবং এখন বাজেট ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে। অফিস ফর স্টুডেন্টস সতর্ক করেছে যে শতকরা ৪৫ ভাগ প্রতিষ্ঠান এ বছর বাজেট ঘাটতির সম্মুখীন হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হাজার হাজার কর্মী ছাঁটাই করে, কম পারফর্মিং কোর্স (এমনকি নটিংহ্যামের মতো শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও) কেটে ফেলে এবং প্রতিষ্ঠানগুলিকে একীভূত করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। জবাবে যুক্তরাজ্যের শিক্ষা বিভাগ টিউশন ফি'র ওপর সীমা নির্ধারণসহ সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

 

প্রতিরক্ষা তহবিলের জন্য ইউরোপের দরজা বন্ধ: কূটনৈতিক ব্যর্থতা

ইইউর সাথে সম্পর্ক পুনর্নির্মাণে কিয়ের স্টারমার সরকারের প্রচেষ্টা নিরাপত্তা ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। ব্রিটেনকে ইইউর SAFE নামে পরিচিত ১৫০ বিলিয়ন ইউরোর প্রতিরক্ষা তহবিলে যোগদানের অনুমতি দেওয়ার লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে। হুমকির বিরুদ্ধে ইউরোপকে সশস্ত্র করার পরিকল্পনার অংশ এই তহবিল।

আলোচনার ব্যর্থতা মূলত প্রবেশ ফি নিয়ে বিরোধের কারণে। ইউরোপীয় কর্মকর্তারা ৬ বিলিয়ন ইউরো পর্যন্ত অর্থ প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যেখানে লন্ডন অনেক কম অর্থ প্রদান করতে ইচ্ছুক ছিল। ইইউ সেক্রেটারি অফ স্টেট নিক থমাস-সাইমন্ডস ফলাফলকে "হতাশাজনক" বলে অভিহিত করেছেন কিন্তু জোর দিয়ে বলেছেন যে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা শিল্প এখনও "তৃতীয় দেশ" শর্তে প্রকল্পগুলোতে অবদান রাখতে পারে। এই পরাজয় ব্রাসেলসের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে "নতুন যুগের" সূচনা করার লেবার সরকারের দাবির ওপর একটি আঘাত এবং ব্রেক্সিট কৌশলগত সহযোগিতার ওপর ভারী ছায়া ফেলার প্রমাণ।

 

রাজনৈতিক জন্ম; একটি বামপন্থী দলের জন্ম

অভ্যন্তরীণ দৃশ্যপটে, ব্রিটেন প্রাক্তন লেবার নেতা জেরেমি করবিনের নেতৃত্বে "ইওর পার্টি" নামে একটি নতুন দলের জন্ম হয়েছে। দলটি ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির বামপন্থী বিকল্প হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করে এবং শুরু থেকেই এর প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিভাজনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। করবিন ঐতিহ্যবাহী বামপন্থীদের ওপর ভিত্তি করে আরও একটি প্রচলিত দল চান, তবে সহ-প্রতিষ্ঠাতা জাহরা সুলতানা একটি উগ্র ইহুদি-বিরোধী লাইন, ন্যাটো থেকে প্রত্যাহার এবং এমনকি রাজতন্ত্রের বিলুপ্তির ওপর জোর দেন। দলটি ৫৫ হাজার সদস্য করেছে বলে দাবি করেছে। যার অর্থ দাঁড়ায় ১৯৪০ সাল থেকে এই দলটি ব্রিটেনের বৃহত্তম সমাজতান্ত্রিক দলে পরিণত হয়েছে। ডানপন্থী মিডিয়া এটিকে "অপ্রাসঙ্গিকতার পথে একটি আন্দোলন" হিসেবে উপহাস করেছে। দলের জন্ম বামপন্থীদের মধ্যে বিভক্তি এবং স্টারমারের নীতির প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছে, রাজনৈতিক সমীকরণের ওপর এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়তে পারে।

 

ভবিষ্যতের জন্য একটি কঠিন পরীক্ষা

এই তিনটি ঘটনা আজ ব্রিটেনকে এক জটিল মোড়ে ফেলে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সংকট দেশে শিক্ষা এবং গবেষণার মানের ভবিষ্যত নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপন করে। ইউরোপীয় আলোচনার ব্যর্থতা ব্রেক্সিট-পরবর্তী সহযোগিতার ব্যবহারিক সীমা উন্মোচিত করে এবং একটি নতুন বামপন্থী দলের উত্থান সমাজের রাজনৈতিক কাঠামোর পরিবর্তনেরও ইঙ্গিত দেয়। এই তিনটি চ্যালেঞ্জের প্রতি স্টারমার সরকারের প্রতিক্রিয়া দেশের ভবিষ্যত রূপরেখা তৈরি করবে।#

পার্সটুডে/এনএম/৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।