তাজমহল, কুতুব মিনার ভেঙে ফেলে মন্দির তৈরি করার দাবি অসমের বিজেপি বিধায়কের
ভারতে সম্রাট শাহজাহানের তৈরি করা বিশ্বখ্যাত ঐতিহাসিক স্মৃতিসৌধ তাজমহল এবং সুলতানি আমলে তৈরি দিল্লির কুতুব মিনার ভেঙে সেখানে মন্দির নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন অসমের বিজেপি বিধায়ক রূপজ্যোতি কুর্মি। তিনি বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে আমার আবেদন অবিলম্বে তাজমহল এবং কুতুব মিনার ভেঙে মন্দির গড়া হোক।’
এ প্রসঙ্গে আজ (বৃহস্পতিবার) অসমের হাইলাকান্দির বিশিষ্ট সমাজকর্মী আব্দুল মান্নান লস্কর রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘এগুলো হল পাগলের প্রলাপ। এদের ওজন খুবই কম। ওরা যখন কংগ্রেস দলে থাকে একরকম বক্তব্য দেয়, আবার যখন অন্য দলে যায় তখন সেই দলের মতো করে, সেই দলের কাছে প্রিয় হওয়ার জন্য, যেহেতু ওরা ‘বহিরাগত’ বিজেপিতে, সেজন্য বিজেপির লোকেদের কাছে নিজেদেরকে আপন সাব্যস্ত করার জন্য তারা কৌশল অবলম্বন করেছে। রূপজ্যোতি কুর্মি যখন কংগ্রেসে ছিলেন, তখন নিজেকে খুব সেক্যুলার হিসেবে সবার সামনে উপস্থাপন করেছিলেন। এখন অসমে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা তিনিও একসময়ে কংগ্রেসে ছিলেন। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ‘আরএসএস’কে খুশি করতে, দিল্লির বা নাগপুরের প্রিয়পাত্র হওয়ার চেষ্টা করছেন। খুব সম্ভবত উনি প্রধানমন্ত্রীত্বকে টার্গেট করেছেন, সেই রকমই হয়ত রূপজ্যোতি কুর্মির কিছু স্বপ্ন আছে।’

প্রসঙ্গত, চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে ‘সিবিএসই’-এর দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের পাঠ্যক্রম থেকে ‘মুঘল যুগ’ বাদ দেওয়া হয়েছে। ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এনসিইআরটি)-এর বই থেকেও বাদ দেওয়া হয়েছে মুঘল সম্রাটদের শাসনপর্বের অধ্যায়। কেন্দ্রীয় সরকারের ওই পদক্ষেপকে সমর্থন জানাতে গিয়েই অসমের বিজেপি বিধায়ক রূপজ্যোতি কুর্মি বলেছেন, তাজমহল, কুতুব মিনার ভেঙে সেখানে এমন মন্দির তৈরি করা উচিত যা বিশ্বের আর কোথাও নেই। এজন্য তিনি তার এক বছরের বেতন দান করতেও রাজি আছেন বলে মন্তব্য করেছেন।
বিজেপি বিধায়ক রূপজ্যোতি কুর্মি বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাজমহল ও কুতুব মিনার অবিলম্বে ভেঙে ফেলার আহ্বান জানাচ্ছি। এই দুটি স্মৃতিস্তম্ভের জায়গায় বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর মন্দির তৈরি করা উচিত। উভয় মন্দিরের স্থাপত্য এমন হওয়া উচিত যাতে অন্য কোনও স্মৃতিস্তম্ভ এর কাছাকাছি না থাকে।
আজ (বৃহস্পতিবার) গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিধায়ক রূপজ্যোতি কুর্মি বলেন, ‘১৫২৬ সালে মুঘলরা ভারতে এসেছিল এবং তাজমহল ১৬৩২ সালে নির্মিত হয়েছিল। সেই মানুষগুলো যদি ফিরে না যায়, তাহলে তাজমহল তৈরির টাকা কোথা থেকে পেল মুঘলরা? এটা স্বাভাবিক যে দেশে সেসময়ে হিন্দু রাজারা ছিলেন, হিন্দু জনগণ ছিলেন, তাদের কাছ থেকে টাকা লুটপাট, মারধর ও ডাকাতি করে তাজমহল তৈরি করা হয়েছে।’
অন্যদিকে, অসমের এআইইউডিএফ বিধায়ক রফিকুল ইসলামের বক্তব্য, পাঠ্যবই থেকে মুঘলদের ইতিহাস মুছে দেওয়া যাবে, কিন্তু তাদের নির্মাণ করা তাজমহল, লালকেল্লা, কুতুব মিনারের ইতিহাস কীভাবে এরিয়ে যাওয়া যায়!
বিজেপিশাসিত অসমের বিরোধী দলনেতা ও কংগ্রেস বিধায়ক দেবব্রত শইকিয়া বলেছেন, ‘ইতিহাসের জ্ঞান অর্জনের জন্য যে শুধু ‘এনসিইআরটি’র পাঠক্রম পড়তে হবে, তেমনটা তো নয়। যারা শুধ্য পাঠ্য-পুঁথি পড়ে, তারা প্রকৃত জ্ঞানী হন না। তাই সাধারণ জ্ঞান পড়ে মুঘলদের ইতিহাসটাও জানা উচিত’ বলেও মন্তব্য করেছেন অসমের বিরোধী দলনেতা দেবব্রত শইকিয়া।
পার্সটুডে/এমএএইচ/এমবিএ/ ৬
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।