অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে নির্মাণ হবে রাম মন্দির: কে, কী বললেন
(last modified Sat, 09 Nov 2019 12:36:36 GMT )
নভেম্বর ০৯, ২০১৯ ১৮:৩৬ Asia/Dhaka
  • বাবরী মসজিদ (ফাইল ফটো)
    বাবরী মসজিদ (ফাইল ফটো)

ভারতের উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় বাবরী মসজিদ-রাম জন্মভূমি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বিতর্কিত ওই জমিতে রাম মন্দির নির্মাণের পক্ষে রায় দিয়েছে। আজ (শনিবার) প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বিচারপতির সমন্বিত বেঞ্চ এসংক্রান্ত রায় প্রদান করেন।

আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, মূল বিতর্কিত জমি পাবে রাম জন্মভূমি ন্যাস। ওই জমিতে মন্দির তৈরিতে কোনও বাধা নেই। তবে কেন্দ্রীয় সরকারকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ- তিন মাসের মধ্যে একটি ট্রাস্ট গঠন করতে হবে। ওই ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানেই থাকবে বিতর্কিত মূল জমি। কী ভাবে, কোন পদ্ধতিতে মন্দির তৈরি হবে, তারও পরিকল্পনা করবে ট্রাস্ট। অন্যদিকে, মসজিদের জন্য সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে বিকল্প ৫ একর জমি দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ কোনও জায়গায় ওই জমির বন্দোবস্ত করতে বলা হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড-এর পক্ষে কামাল ফারুকি বলেছেন, এর বদলে ১০০ একর জমি দেওয়া হলেও আমাদের কোনও লাভ নেই। ইতোমধ্যেই আমাদের ৬৭ একর জমি দখল করা হয়েছে, তাহলে আমাদের কী দান করা হচ্ছে? আমাদের ৬৭ একর জমি নেয়ার পরে ৫ একর দেওয়া হচ্ছে। এটা কেমন সুবিচার?

সংবাদ সম্মেলনে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের আইনজীবী জাফরইয়াব জিলানি

সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের আইনজীবী জাফরইয়াব জিলানি বলেছেন, আমরা রায়কে সম্মান জানাই। কিন্তু, এতে আমরা সন্তুষ্ট নই। আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে চিন্তা ভাবনা করব।  তবে এ নিয়ে তাঁরা কোনওরকম বিক্ষোভ বা প্রতিবাদ করবেন না বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন।

অন্যদিকে হিন্দু মহাসভার আইনজীবী বরুণ কুমার সিংহ বলেছেন, এটা ঐতিহাসিক রায়। এই রায়ের মধ্যে দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের বার্তা দিয়েছে।

মোহন ভাগবত

আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানাচ্ছি। কয়েক দশক ধরে ওই মামলা চলছিল। এতদিনে তার উপযুক্ত নিষ্পত্তি হয়েছে। এরপর যা করার তা সরকারই করবে। এই রায়কে কারও হার-জিত হিসেবে দেখা উচিত নয়। দেশে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার আবেদন জানাচ্ছি।

পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ এমপি বলেন, এই রায়কে স্বাগত জানাচ্ছি। আমরা খুশি। আমাদের কাছে এটা গর্বের মুহূর্ত। রাম মন্দির নির্মাণের মাধ্যমে ভারতের গৌরবযাত্রা ফের শুরু হবে।

দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম মাওলানা মুফতি আবুল কাসিম নোমানী বাবরী মসজিদ সম্পর্কিত সুপ্রিম কোর্টের রায় 'অত্যন্ত আশ্চর্যজনক' বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, মামলাটি বিতর্কিত জমির মালিকানা নিয়ে ছিল এবং আদালত জমির মালিক কে তা স্পষ্ট করেনি। মাওলানা নোমানী দেশের মুসলমানদের শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন যে, যেকোনো অবস্থাতেই শান্তি বজায় রাখা সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। যা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয় এবং কারও উসকানিতে কোনও ভুল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় মুসলিমদের এমন কাজ না করা উচিত।

ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এমপি

অল ইন্ডিয়া মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলেমিন প্রধান ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এমপি প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, কংগ্রেস তার প্রকৃত রঙ দেখিয়েছে। কংগ্রেস প্রতারণা ও ভণ্ডামি না করলে ১৯৪৯ সালে সেখানে মূর্তি স্থাপিত হতো না। যদি রাজীব গান্ধী কর্তৃক সেসময় তালা না খোলা হতো (মসজিদের) এবং নরসিমহা রাও তার দায়িত্ব পালন করতেন তবে মসজিদটি এখনও বিতর্কিত জায়গায় উপস্থিত থাকত। 

ওয়াইসি বলেন, আমাদের পাঁচ একর জমির খয়রাতির প্রয়োজন নেই। আমাদের কারও কাছে ভিক্ষা করার দরকার নেই। মুসলিম পার্সোনাল লবোর্ড কী সিদ্ধান্ত নেবে তা তাদের বিষয়। ভারতের মুসলমানদের এতটা খারাপ দিনও আসেনি যে, খয়রাতির জমি নিতে হবে। আমার ব্যক্তিগত মতামত হল আমাদের পাঁচ একরের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা উচিত। আমাদের উচিত আইনি লড়াই করা।

তিনি বলেন, যারা বাবরি মসজিদ ভেঙেছিল, আদালত আজ তাদেরকেই বলছে ট্রাস্ট করে মন্দির নির্মাণ করতে! মসজিদটি যদি সেখানে থাকত এবং শহীদ না হতো, তাহলে কী এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো? আমি জানি না।

রাহুল গান্ধী

কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধী বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে সম্মান জানিয়ে, আমাদের নিজেদের মধ্যে সদ্ভাব বজায় রাখতে হবে। এটা সব ভারতীয়র মধ্যে বন্ধুত্ব, প্রেম আর ভ্রাতৃত্বের সময়।

কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র রণদীপ সূর্যেওয়ালা বলেছেন, কংগ্রেস দল সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানায়। কংগ্রেস পার্টি দ্রুত রাম মন্দির তৈরির পক্ষে। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ে একদিকে যেমন মন্দির তৈরির রাস্তা খুলে গেল, অন্যদিকে তেমনি বিজেপির জন্য এই ইস্যু নিয়ে রাজনীতি করার রাস্তা বন্ধ হয়ে গেল।

আজমীর শরীফ দরগাহের দীওয়ান সৈয়দ জয়নুল আবেদীন বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্ত কারও জয় বা পরাজয় নয়। আমাদের উচিত সুপ্রিম কোর্টের ওই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। যা হয়েছে তা জাতীয় স্বার্থের এবং আমাদের বছরের পর বছর ধরে চলমান বিরোধের অবসান করা উচিত।

মুহাম্মাদ কামরুজ্জামান

এ প্রসঙ্গে আজ সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মাদ কামরুজ্জামান রেডিও তেহরানকে বলেন, বাবরী মসজিদ বিষয়ে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আজকের দেওয়া রায় অপ্রত্যাশিত এবং দুর্ভাগ্যজনক! বাবরী মসজিদের পিছনে পাঁচশ বছরের এক ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট সেই বিষয়টি না দেখে ঐতিহাসিকভাবে যার বাস্তবতা নেই, সেই কাল্পনিক বিষয়ের ওপরে ভিত্তি করে যেভাবে অযোধ্যায় বাবরী মসজিদের জায়গায় রাম মন্দির গড়ার সিদ্ধান্ত দিলেন এতে গোটা বিশ্ব অবাক হয়েছে! আমরাও হতবাক!’

মুহাম্মাদ কামরুজ্জামান আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি যে আইনি লড়াই চালিয়ে গেলে একদিন আবার সত্যের জয় হবে এবং অবশ্যই আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। এই বিষয়ে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল লবোর্ড যে সিদ্ধান্ত ও আইনি পদক্ষেপ নেবে  তার পাশে পশ্চিমবঙ্গের মানুষও থাকবে। আমরা সেই ডাকে সাড়া দিয়ে পরবর্তী জয়ের লক্ষ্যে বৃহত্তর পথে এগিয়ে যাব।’#

পার্সটুডে/এমএএইচ/এআর/৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ