আম্পানের তাণ্ডবে পশ্চিমবঙ্গে ১২ জনের মৃত্যু: 'আজ যেটা হল, সেটা ধ্বংস'
ভারতে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে রাজধানী কোলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের সমুদ্র উপকূলীয় কয়েকটি জেলা। এরমধ্যে দুই ২৪ পরগনা এবং দুই মেদিনীপুর, হাওড়া ও হুগলির অবস্থা ভয়াবহ। কোলকাতা তিনজনসহ বিভিন্ন জেলা মিলিয়ে অন্তত ১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
দিল্লির আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিতে অতি মারাত্মক ঘূর্ণিঝড়টি আছড়ে পড়ে। সে সময় ঘূর্ণিঝড়ের ঘূর্ণনের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ১৫৫-১৬৫ কিলোমিটার। আর সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার ছিল। সন্ধ্যা ৭টা বেজে ২০ মিনিটে কোলকাতায় সেই ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ১৩৩ কিলোমিটার।
একটানা তিন ঘণ্টা আম্পানের তাণ্ডব চলার পর রাত ৯টা নাগাদ নবান্নে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘দুই ২৪ পরগনা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে, বাড়িঘর, নদী বাঁধ ভেঙে গিয়েছে, ক্ষেত ভেসে গিয়েছে। পাথরপ্রতিমা, নামখানা, বাসন্তী, কুলতলি, বারুইপুর, সোনারপুর, ভাঙড় থেকে যা খবর এসেছে তা ভয়াবহ।”
মমতা বলেন, “বারাকপুর, বারাসত, বসিরহাট ও গঙ্গাসাগর সাব ডিভিশন, হাওড়া, হুগলি, দুই মেদিনীপুরের অবস্থাও খুব খারাপ। রাস্তাঘাট সবই প্রায় বন্ধ। এখনও আমি ভাবতে পারছি না সবকিছু ঠিক কী করে করব? যা খবর পাচ্ছি তাতে সব কিছু নতুন করে শুরু করতে হবে। এত ঝড় হবে কেউ ভাবতে পারেনি। আবহাওয়াবিদরাও বুঝতে পারেননি।”

ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় সবাই বাংলার পাশে এসে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সবার কাছে আবেদন করব এই সময়ে বাংলার পাশে এসে দাঁড়ান। দয়া করে এখন রাজনীতি করবেন না। রামকৃষ্ণ মিশন ও ভারত সেবাশ্রমের কাছে ভয়াবহ এই সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে অনুরোধ করব। আমাদের সব পঞ্চায়েতগুলিকেও এই কাজে মনোনিবেশ করতে বলব।”
আম্পানের ভয়াবহতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘আজকে যেটা হল তা ১৯৩৭ সালের কথা মনে করিয়ে দিল। কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আজকে যে তাণ্ডব দেখেছি তাতে খুব আঘাত পেয়েছি। আমরা যেখানে কাজ করছি সেই নবান্নেরও অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমি সাধারণ মানুষকে আবেদন করব এখনই রিলিফ ক্যাম্প ছেড়ে কোথাও যাবেন না। সরকারি আধিকারিকদের পরামর্শ মেনে চলুন। পরিস্থিতি সামাল দিতে ১০ থেকে ১২ দিন সময় লাগবে। সেই সময়টা ধৈর্য ধরে থাকুন।”

ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে মমতা বলেন, “আজ যেটা হল, সেটা ধ্বংস। করোনার জন্যে এমনিতেই রাজ্যের আয় বন্ধ। তারপর যা ক্ষতি হল তা হয়তো কয়েক হাজার কোটিতে যাবে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পুরো চিত্র পেতে ৩/৪দিন লাগবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
কোলকাতার মানুষ গত ৫০ বছরে এমন ভয়াবহ ঝড় দেখেনি। শহরের অন্তত ৩০টি জায়গায় গাছ ভেঙে পড়েছে। শত শত গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ায় যোগাযোগ কার্যত বন্ধ। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে গোটা শহর।#
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।