বাইডেন-হ্যারিস জুটি নির্বাচিত হওয়ায় ৩৭০ ধারা, সিএএ-এনআরসি ইস্যুতে মার্কিন চাপের আশঙ্কা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
(last modified Mon, 09 Nov 2020 10:26:39 GMT )
নভেম্বর ০৯, ২০২০ ১৬:২৬ Asia/Dhaka
  • বাইডেন-হ্যারিস জুটি নির্বাচিত হওয়ায় ৩৭০ ধারা, সিএএ-এনআরসি ইস্যুতে মার্কিন চাপের আশঙ্কা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদায়ের পরে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট ও কমলা হ্যারিস ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতাসীন হতে যাওয়ায় বিভিন্ন ইস্যুতে ভারতের উপরে চাপ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিভিন্ন নীতি, দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি (কাশ্মীর থেকে ৩৭০ প্রত্যাহারের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে সাম্প্রদায়িক অশান্তি) এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে মোদি সরকারের উপরে আগের আমলের তুলনায় অনেকটাই বেশি ওয়াশিংটনের চাপ বাড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। যদিও এ ব্যাপারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে।

এ প্রসঙ্গে আজ (সোমবার) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কোলকাতার ঐতিহ্যবাহী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবদুল মাতিন রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের খুব বেশি পরিবর্তন হবে না। কারণ মার্কিন এক সাবেক প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, রাজনীতিতে চিরস্থায়ী শত্রু বা চিরস্থায়ী মিত্র বলে কিছু নেই। যার ফলে তারা তাদের সাম্প্রতিক রাজনীতির সঙ্গে সমন্বয় বজায় রেখে চলবে।’  

তিনি আরও বলেন, ‘আমেরিকা ব্যবসায়ীক স্বার্থ ভালো বোঝে। সেক্ষেত্রে ভারত ও দক্ষিণ এশিয়া একটা বড় মার্কেট। সেজন্য পররাষ্ট্রনীতিতে খুব বেশি পরিবর্তন হবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে কমলা হ্যারিসের আগের বক্তব্য এবং নির্বাচনী প্রচারনার সময়ে যে বক্তব্যগুলো এনআরসি-সিএএ, জম্মু-কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা ইস্যুতে, সেটা কিছুটা হলেও আমেরিকার সিভিল সোসাইটির একটা চাপ ছিল এবং তা তাদের ভোটের প্রতি আকর্ষণ করেছিল। তবে নির্বাচনের মুখে কমলা হ্যারিসের টিপ্পনি বা মন্তব্যগুলোতে আমেরিকার পররাষ্ট্র নীতি বা ইন্দো-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুব বেশি প্রভাব পড়বে বলে মনে হচ্ছে না।’

সহকারী অধ্যাপক আবদুল মাতিন

অন্যদিকে, ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব কানওয়াল সিব্বালের মতে, ‘ট্রাম্প সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বা দিল্লির সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিষয়ে কঠোর সমালোচনা করেছে। এবার তা নিঃসন্দেহে আরও বাড়বে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এরআগে কমলা হ্যারিস প্রকাশ্যেই নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিভিন্ন নীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার থেকে ‘সিএএ’ ইস্যুতে তার কড়া সমালোচনা শোনা গিয়েছে।’

বাইডেনের নির্বাচনী ইশতেহারে ক্ষমতায় এলে ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে স্থায়ী এবং আইনের শাসনযুক্ত ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল গঠনের জন্য তাঁর প্রশাসন কাজ করবে বলে জানানো হয়েছে।

ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব নিরুপমা রাও বলেন, ‘চীনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার প্রশ্নে ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে কৌশলগত সমন্বয় খুবই শক্তিশালী। বর্তমান সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের পাশে যেভাবে আমেরিকা দাঁড়িয়েছে, তা ভবিষ্যতেও লঘু হবে না। জো বাইডেন সব সময়ই ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু।’

কূটনীতিবিদ দেব মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘ট্রাম্প, ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি ভঙ্গ করায় ভারতের জন্য তা সার্বিকভবে ক্ষতিকর হয়েছে। ইরান-মস্কো-বেজিং অক্ষ তৈরি হয়েছে।’

জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা অপসারণের পরে ডেমোক্র্যাটস প্রার্থী জো বাইডেন দীর্ঘদিন ধরে লকডাউন ও সেখানকার নেতাদের আটকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। তিনি তার নির্বাচনী প্রচারেও এ নিয়ে অনেকবার কথা বলেছেন। শুধু জো বাইডেন নয়, কমলা হ্যারিসও জম্মু-কাশ্মীরের বিষয়ে সোচ্চার হয়ে মত প্রকাশ করেছেন।

ভারতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (সিএএ-এনআরসি) ইস্যুতে দেশজুড়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভের সময়ে জো বাইডেন বলেছিলেন, ভারতের ভিত্তি গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, সেজন্য সাম্প্রতিক আইন তার সাথে মেলে না।

জম্মু-কাশ্মীরে দীর্ঘদিন নেতাদের আটকের বিষয়টি নিয়ে কমলা হ্যারিস বিবৃতিতে বলেছিলেন যে আমরা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি, মানবাধিকার বিধি লঙ্ঘন সম্পূর্ণ ভুল।

যখন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েছিলেন, সেসময় তিনি ‘সিএএ-এনআরসি’ বিরোধী মার্কিন সিনেটরের সাথে দেখা করতে রাজি হননি। এটি নিয়ে সেসময়ে কমলা হ্যারিস ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর তীব্র সমালোচনা করেছিলেন।

বিশ্লেষকরা অবশ্য বলছেন, কিছু মন্তব্যের ভিত্তিতে গোটা পররাষ্ট্রনীতি অনুমান করা ঠিক হবে না। বাইডেন এবং কমলা হ্যারিস ক্ষমতায় এলে তাদের পররাষ্ট্রনীতির দিকে নজর থাকবে সবার।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/এমবিএ/৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ