নারী ইস্যুতে পাশ্চাত্যের কাছে আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর কিছু প্রশ্ন
সবাই এখন একথার সঙ্গে কমবেশি পরিচিত যে, পাশ্চাত্য তাদের নানা প্রচারযন্ত্রের সাহায্যে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি করে এলেও বাস্তবে তারা নারীকে তাদের অবৈধ স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী নারীর প্রতি পশ্চিমাদের এই স্ববিরোধী আচরণের একজন কঠোর সমালোচক। কথিত পশ্চিমা সভ্যতা নারীর সঙ্গে যে আচরণ করছে সে সম্পর্কে তিনি বেশ কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। নারী দিবস উপলক্ষে আমরা তাঁর বক্তব্য থেকে এরকম কয়েকটি প্রশ্ন উদ্ধৃত করছি: পশ্চিমা সমাজে নারীর সম্মান ও রমণীয় ব্যক্তিত্ব রক্ষা করার ক্ষেত্রে নারী কেন দিন দিন অসাবধান হয়ে উঠছে এবং নারীর মর্যাদা কেন দিন দিন ক্ষুণ্ন থেকে ক্ষুণ্নতর হচ্ছে?
আমেরিকা ও ইউরোপীয় দেশগুলোর রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানগুলোতে নারীকে কেন অর্ধউলঙ্গ পোশাক পরিধান করে নিজেদেরকে উপস্থাপন করার সুযোগ দেওয়া হয়? অথচ একই অনুষ্ঠানে পুরুষ কেন নিজেকে আপাদমস্তক আবৃত করে রাখে এবং টাই পরার মাধ্যমে নিজের গলা পর্যন্ত ঢেকে রাখে? নারীকে নিজের শরীর যথাসম্ভব উন্মুক্ত রাখার সুযোগ দেওয়া হয় অথচ পুরুষ যদি থ্রি কোয়ার্টার প্যান্টও পরে তাহলে সেটিকে কেন ভদ্রতা ও শিষ্টাচার বিরোধী বলে ধরা হয়? এই আচরণের কারণ কী? নারী যদি মিনি স্কার্ট পরেও অনুষ্ঠানে আসে তাহলেও কোনো সমস্যা নেই কিন্তু পুরুষের পোশাক যদি সামান্যতম খাটোও হয় তাহলে কেন সেটিকে ম্যানার পরিপন্থি হিসেবে দেখা হয়?
পশ্চিমা সমাজে দিন দিন কেন প্রকাশ্যে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও পতিতাবৃত্তির প্রচার ও প্রসার ঘটানো হচ্ছে?
সমকামিতার মতো অপরাধকে কেন আধুনিকতা এবং উন্নতি ও অগ্রগতির ছোঁয়া বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে? যদি কোনো ব্যক্তি বা সমাজ সমকামিতাকে মেনে নিতে অস্বীকার করে তবে সেই ব্যক্তি ও সমাজকে কেন পশ্চাদপদ ও কূপমণ্ডুক হিসেবে বিবেচনা করা হয়?
সামাজিক অঙ্গনের পাশাপাশি রাজনৈতিক অঙ্গনেও সমকামিতার প্রসার ঘটানো হচ্ছে; রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদ থেকে সমকামিতার পক্ষে কথা বলা হচ্ছে এবং কোনো কোনো রাষ্ট্রনায়ককে গর্বের সঙ্গে সমকামিতার পক্ষে সাফাই গাইতে দেখা যাচ্ছে। এটা কেমন সভ্যতা? এর পক্ষে কী যুক্তি থাকতে পারে?
আমাদের কাছে যেসব তথ্য ও পরিসংখ্যান আছে তা থেকে পশ্চিমা সমাজের অত্যন্ত ভয়াবহ চিত্র দেখতে পাই। সেখানে তিনজন এমনকি চারজন মিলে যৌনতায় লিপ্ত হওয়ার যে ঘটনা ঘটছে তা কিসের আলামত? কীভাবে একটি সভ্যতা এমন আচরণকে বৈধতা দিতে পারে?
পশ্চিমা সমাজে পরিবারকে ধ্বংস করে দিতে পারে এমন সব বিষয় কেন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে? অবাধ যৌনাচার এবং যৌন আচরণে লাগামহীন উশৃঙ্খলা পারিবারিক কাঠামোকে অবশ্যম্ভাবীরূপে ধ্বংস করে দেয়।
আমি কয়েক বছর আগে একজন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের লেখো একটি বই থেকে একথা উদ্ধৃত করেছিলাম যে, পশ্চিমা দেশগুলোতে সত্যিকার অর্থেই লাগামহীন যৌনাচার ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, পাশ্চাত্যে যৌন সহিংসতার কোনো শাস্তি নেই, কোনো বিচার হয় না কিন্তু হিজাব পরলে শাস্তি পেতে হয়! পাড়ার কোনো মাস্তান বা গুণ্ডা একজন হিজাব পরিহিত নারীর সঙ্গে সহিংস আচরণ করে, এরপর এই ঘটনা আদালতে গড়ায় এবং আদালতে বিচারকসহ সবার সামনে ওই নারীকে উপর্যপুরি ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। এতে পাশ্চাত্যের আইন ও বিচার ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হয় না!
(সর্বোচ্চ নেতা ২০০৮ সালের আগস্ট মাসে জার্মানির একটি ঘটনা উদ্ধৃত করে এ বক্তব্য দিয়েছেন। জার্মানির একটি পার্কে মিশরীয় নারী মারওয়া শেরবিনিকে হিজাব পরার কারণে ইসলামপন্থী, সন্ত্রাসী এবং পতিতা বলে গালি দেয় রুশ বংশোদ্ভূত জার্মান যুবক আলেক্স৷ শুধু তাই নয়, শেরবিনির মাথার ওড়নাও টান দিয়ে খুলে ফেলে যুবকটি৷ এরপর, আলেক্সের বিরুদ্ধে উৎপীড়ন ও হয়রানির মামলা করেন শিরবিনি৷ অপরাধ প্রমাণিত হলে, আলেক্সকে ৭৫০ ইউরো জরিমানা করে আদালত৷ কিন্তু এই জরিমানার রায়ের বিরুদ্ধে ড্রেসডেন শহরের একটি আদালতে আপিল করে সে৷ এই আপিল মামলায় সাক্ষী দিতে আসেন শেরবিনি৷ সেদিন আদালত কক্ষে বিচারকদের সামনেই আলেক্স উপর্যুপুরী ১৮ বার ছুরিকাঘাত করে শেরবিনিকে হত্যা করে৷)
ধরে নিলাম ওই গুণ্ডাকে কিছুদিনের জন্য কারাদণ্ড দেয়া হলো। কিন্তু পশ্চিমা সমাজে হিজাব বিদ্বেষী এই অপতৎপরতাকে কোনো অবস্থাতেই ঘৃণ্য অপরাধ হিসেবে দেখা হয় না; কিন্তু কেন?
এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই, এসব প্রশ্নের কোনো জবাব তারা দেয়ও না, কারণ, আসলেই এসব কাজের পেছনে কোনো যুক্তি নেই।
ইউরোপ বা আমেরিকার কোনো বড় সম্মেলনে ইরানের কোনো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করতে গেলে তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তুমি কি সমকামিতাকে সমর্থন করো? ওই ইরানি কর্মকর্তা যদি না-সূচক জবাব দেন তখন তাকে ভর্ৎসনা করা হয়! এর কী কারণ থাকতে পারে? এই আচরণের পেছনে কোনো যুক্তি থাকতে পারে কি? আসলেই এর কোনো উত্তর নেই।
কাজেই, পাশ্চাত্যে নারীর সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে এবং নারীর অধিকার প্রশ্নে যেসব তৎপরতা চালানো হয় তার পেছনে কোনো যুক্তি-বুদ্ধি কিংবা বিচার-বিবেচনা দেখা যায় না। আর এজন্যই এ সংক্রান্ত যেকোনো সুস্থ আলোচনা তারা সুকৌশলে এড়িয়ে চলে।
পশ্চিমারা তাদের এসব অপকর্মকে গণমাধ্যমের সাহায্যে দর্শকদের সামনে অতি সুন্দর রূপ দেওয়ার চেষ্টা করে। এ ধরনের কাজে আবার তারা সাংঘাতিক ওস্তাদ। তারা চলচ্চিত্র নির্মাণ করে, বই প্রকাশ করে, প্রবন্ধ উপস্থাপন করে, অর্থ খরচ করে শিল্পী, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের ভাড়া করে তাদের মুখ দিয়ে এসব অপকর্মের পক্ষে প্রচার চালায়। তারা নারী বিষয়ক আন্তর্জাতিক ফোরাম তৈরি করে। এসব ফোরামে তাদের এসব অপকর্মকে মাণদণ্ড ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে নম্বর দেয়া হয়। সেই নম্বরের ভিত্তিতে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনায় অগ্রগামী দেশগুলো তালিকার শীর্ষে স্থান পায় এবং যেসব দেশ এসব বেলেল্লাপনার দিক দিয়ে পিছিয়ে রয়েছে তারা পশ্চাদপদ দেশ হিসেবে তালিকার নীচের দিকে রয়ে যায়।
আমি এক কথায় বলতে চাই যে ‘নারী’র মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পশ্চিমা সভ্যতার নীতি এবং পদ্ধতির সংক্ষিপ্তসার দুটি কারণের মধ্যে সীমাবদ্ধ: ‘অর্থলিপ্সা’ ও ‘ভোগবিলাস’।#
পার্সটুডে/এমএমআই/এনএম/৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।