মাহমুদ ফারশচিয়ান কীভাবে ইরানি শিল্পকে বিশ্বে পরিচিত করেছিলেন?
https://parstoday.ir/bn/news/iran-i151120
পার্সটুডে – লাহোরে "রঙে রাঙানো ভালোবাসা" শীর্ষক অনুষ্ঠানে ইরানের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রধান আসগার মাসুদি বিখ্যাত মিনিয়েচার বা সুক্ষ চিত্রকলা শিল্পী ফারশচিয়ানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছেন, "মাহমুদ ফারশচিয়ান পারস্যের মিনিয়েচার শিল্প-ঐতিহ্য থেকে উঠে এসেও সীমানা পেরিয়ে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি অর্জন করেছেন। তাঁর শিল্পকর্ম আজ বিশ্বজুড়ে মানুষের হৃদয় ও জাদুঘরে স্থান পেয়েছে।"
(last modified 2025-08-13T13:01:58+00:00 )
আগস্ট ১২, ২০২৫ ১৭:২০ Asia/Dhaka
  • মাহমুদ ফারশচিয়ান
    মাহমুদ ফারশচিয়ান

পার্সটুডে – লাহোরে "রঙে রাঙানো ভালোবাসা" শীর্ষক অনুষ্ঠানে ইরানের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রধান আসগার মাসুদি বিখ্যাত মিনিয়েচার বা সুক্ষ চিত্রকলা শিল্পী ফারশচিয়ানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছেন, "মাহমুদ ফারশচিয়ান পারস্যের মিনিয়েচার শিল্প-ঐতিহ্য থেকে উঠে এসেও সীমানা পেরিয়ে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি অর্জন করেছেন। তাঁর শিল্পকর্ম আজ বিশ্বজুড়ে মানুষের হৃদয় ও জাদুঘরে স্থান পেয়েছে।"

ইরানের খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী ও নকশাচিত্রের উস্তাদ মরহুম মাহমুদ ফারশচিয়ান-এর স্মরণে রোববার রাতে 'আন্তর্জাতিক হিন্দিরান গ্রুপ' স্মরণসভাটি আয়োজন করে। ইরান, ভারত, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ইরাকের সাহিত্য ও সংস্কৃতিপ্রেমীরা এতে অংশ নেন।

সভায় ইরানের লাহোর সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রধান আসগার মাসুদি বলেন, "ফারশচিয়ান শুধু একজন চিত্রশিল্পীই ছিলেন না, বরং তিনি ইরানের শিল্পের আত্মা যিনি আশুরার সংস্কৃতিকে রঙ ও রেখায় ফুটিয়ে তুলেছেন। তাঁর কাজ শুধু ইরানে নয়, বিশ্বের নামীদামি জাদুঘর ও শিল্পসংগ্রহশালাগুলোতেও সমাদৃত। তিনি ইরানি চিত্রকলা থেকে উঠে এসেও আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছেছেন, হয়েছেন বিশ্বনাগরিক আর তাঁর শিল্পকর্ম বিশ্বজুড়ে মানুষের হৃদয় ও জাদুঘরে স্থান পেয়েছে। এই বৈশ্বিক ব্যাপ্তি তাঁর কাজকে মানবজাতির শিল্প-ঐতিহ্যের অংশে পরিণত করেছে।"

স্মরণসভায় কবি, ঔপন্যাসিক ও ইরানের জাতীয় সম্প্রচার সংস্থার (আইআরআইবি) ফারসি ভাষা ও সাহিত্য সংরক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান আলিরেজা কজভেহ বলেন, "ফারশচিয়ানের শিল্প একইসাথে উচ্চমার্গীয় ও জনপ্রিয়। তাঁর 'আশুরার সন্ধ্যা' চিত্রকর্ম এই মহৎ ও আধ্যাত্মিক শিল্পের উজ্জ্বল নিদর্শন; এটি শুধু দেখা যায় না, বরং রঙ ও রেখার সীমানা পেরিয়ে মানুষের অন্তরে আশুরার সত্যের সাথে একাত্মতা তৈরি করে।"

অনুষ্ঠানে লন্ডনের ইরানি স্টাডিজ একাডেমির প্রধান সৈয়দ সালমান সাফাভি বলেন, "ফারশচিয়ান পারস্য চিত্রকলাকে সুফি দর্শনের সঙ্গে মিশিয়ে এক অতুলনীয় শৈল্পিক ভাষা তৈরি করেছেন। তাঁর বিখ্যাত কাজগুলোর মধ্যে আছে—'সৃষ্টির পঞ্চম দিন', যা আকাশ ও পার্থিব সৃষ্টির মিলনকে ফুটিয়ে তোলে; 'ইবরাহিম নবী' যেখানে হযরত ইবরাহিম (আ.)–এর ওপর নিক্ষিপ্ত আগুনের গোলাপবাগানে রূপান্তরিত হওয়ার দৃশ্য অঙ্কিত হয়েছে। তাঁর মহৎ সৃষ্টিগুলোর মধ্যে 'আকাশে চতুর্থ স্তর', 'শামে গারিবান', ও শামস ও মাওলানা রুমি–তে প্রতিফলিত হয়েছে উস্তাদের কল্পনাশক্তি ও গভীর দার্শনিক-আধ্যাত্মিক চিন্তা। 

আশুরা নিয়ে মাহমুদ ফারশচিয়ান-এর একটি চিত্রকর্ম

স্মরণসভায় পাকিস্তানের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্সি সাহিত্যের অধ্যাপক আজমি জারিন নাজিয়া বলেন, "ফারশচিয়ান শুধু ইরান নয়, সারা বিশ্বের শিল্পপ্রেমীদের হৃদয় জয় করেছেন। তাঁর শিল্পের উৎস ছিল গভীর আধ্যাত্মিকতা।"

অনুষ্ঠানে ইরাকি চিত্রশিল্পী আলি আতেব বলেন, "ফারশচিয়ানের শিল্পকর্ম ইরানি মিনিয়েচারের সৌন্দর্য ও মহিমাকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছে। তাঁর কাজ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য চিন্তা, সৌন্দর্য ও আধ্যাত্মিকতার বার্তা বহন করবে।"

মাহমুদ ফারশচিয়ান: এক কিংবদন্তির সংক্ষিপ্ত জীবনী

মাহমুদ ফারশচিয়ান (১৯২৯–২০২৫) ছিলেন ইরানি মিনিয়েচার ও নকশাচিত্রের এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী শিল্পী। "আশুরার সন্ধ্যা", "সৃষ্টির পঞ্চম দিন"-এর মতো কালজয়ী শিল্পকর্মের মাধ্যমে তিনি ইরানি শিল্পে আধ্যাত্মিকতা, মহাকাব্যিকতা ও নবতর প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন। তাঁর স্বকীয় শৈলী ঐতিহ্যের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃতি পেয়েছে। ফারশচিয়ান কেবল ইরানি শিল্পের পুনর্জাগরণকারীই নন, বরং ইসলামি-ইরানি সংস্কৃতির সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত এক বিশ্বশিল্পী।

ফারশচিয়ানের শিল্প বিশ্বকে দেখিয়েছে কীভাবে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধনে এক অনন্য শৈল্পিক অভিব্যক্তি তৈরি করা যায়। তাঁর কাজ শুধু চোখেই নয়, হৃদয়েও দাগ কাটে—এটাই তাঁর শিল্পের অমরতা।#

পার্সটুডে/এমএআর/১২