কেন হাজার বছর পরও হিজামা প্রচলিত আছে?
https://parstoday.ir/bn/news/iran-i151470-কেন_হাজার_বছর_পরও_হিজামা_প্রচলিত_আছে
পার্সটুডে: হিজামা বা কাপিং থেরাপি হল ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসার অন্যতম প্রাচীন এবং জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি, যা ইবনে সিনা ও জাকারিয়া আল রাযির মতো মহান চিকিৎসকদের শিক্ষায় ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। ইতিহাসজুড়ে ইরান, মিশর, গ্রীস ও চীনসহ বিভিন্ন সমাজে এই পদ্ধতিটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
(last modified 2025-09-11T14:06:22+00:00 )
আগস্ট ২৭, ২০২৫ ১৮:১৫ Asia/Dhaka
  • হিজামার ইতিহাস হাজার বছরের পুরোনো
    হিজামার ইতিহাস হাজার বছরের পুরোনো

পার্সটুডে: হিজামা বা কাপিং থেরাপি হল ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসার অন্যতম প্রাচীন এবং জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি, যা ইবনে সিনা ও জাকারিয়া আল রাযির মতো মহান চিকিৎসকদের শিক্ষায় ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। ইতিহাসজুড়ে ইরান, মিশর, গ্রীস ও চীনসহ বিভিন্ন সমাজে এই পদ্ধতিটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

পার্সটুডে'র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিজামার ইতিহাস হাজার বছরের পুরোনো। চিকিৎসাবিদ্যার গ্রন্থসমূহে, বিশেষ করে ইবনে সিনার 'কানুন' ও রাজির 'আল-হাওয়ি' গ্রন্থে এ পদ্ধতির উল্লেখ পাওয়া যায়। মহান এই চিকিৎসকরা একে রোগ নিরাময় ও চিকিৎসার অন্যতম প্রধান উপায় হিসেবে তুলে ধরেছেন। তাদের মতে, হিজামা শরীরে জমে থাকা দূষিত রক্ত ও বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সহায়তা করে এবং প্রদাহজনিত ব্যথা উপশম করে।

প্রাচীন মিশরেও হিজামা প্রচলিত ছিল, এমনকি প্রাচীন লিপি ও চিত্রফলকে হিজামা করতে থাকা মানুষের ছবি পাওয়া গেছে। চীনের প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতিতেও হিজামাকে একটি স্বীকৃত চিকিৎসা হিসেবে ধরা হতো। ইরানে শরীর পরিশুদ্ধকরণ, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য হিজামাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।

ঐতিহ্যবাহী ও আধুনিক চিকিৎসায় হিজামার অবস্থান

আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, পেশীর ব্যথা কমাতে এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারে। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির পাশাপাশি এই চিকিৎসা পদ্ধতিটি অনেক রোগের চিকিৎসার জন্য কার্যকর হতে পারে। দীর্ঘ ইতিহাস ও ঐতিহ্যবাহী উপকারের কারণে, হিজামা আজও স্বাস্থ্যের জন্য একটি পরিপূরক চিকিৎসা হিসেবে বিবেচিত হয়।

হিজামার প্রধান প্রকারভেদ:

১. শুষ্ক হিজামা: এখানে শুধুমাত্র কাপের ভেতরে ভ্যাকুয়াম তৈরি করে (পাম্প বা অক্সিজেন জ্বালিয়ে) ত্বককে টেনে ধরা হয়। এটি স্থানীয় রক্তসঞ্চালন উন্নত ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

২. আর্দ্র হিজামা: ভ্যাকুয়ামের পর ত্বকে হালকা কাটা দেওয়া হয় এবং সামান্য পরিমাণ রক্ত বের করা হয়। এর উদ্দেশ্য হলো ঘন বা দূষিত রক্ত দূর করে দ্রুত আরোগ্য নিশ্চিত করা।

৩. গরম হিজামা: এতে কাপের ভেতর বাতাসকে আগুন দিয়ে গরম করে ভ্যাকুয়াম তৈরি করা হয় এবং তা শরীরে বসানো হয়।

হিজামার উপকারিতা ও ব্যবহার:

সীমিত বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা গ্রন্থ অনুসারে, হিজামা আধুনিক চিকিৎসার বিকল্প নয়, তবে পরিপূরক চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি উপকারী হতে পারে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে:

  • মাংসপেশি ও জয়েন্টের ব্যথা কমানো: যেমন কোমর ব্যথা, ঘাড় ব্যথা ও আর্থ্রাইটিস।
  • রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি: ভ্যাকুয়াম রক্তনালী প্রশস্ত করে রক্তপ্রবাহ বাড়ায়।
  • মাথাব্যথা ও মাইগ্রেন উপশম: রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি ও শিথিলতার কারণে উপকার দেয়।
  • রক্তের ঘনত্ব কমাতে সহায়তা: ভেজা হিজামায় নির্দিষ্ট পরিমাণ রক্ত বের করা অস্থায়ীভাবে রক্তকে পাতলা করে।
  • ক্লান্তি দূর ও দ্রুত পুনরুদ্ধার: ক্রীড়াবিদরা দ্রুত রিকভারি পেতে এটি ব্যবহার করে থাকেন।

 

সতর্কতা ও নিষেধাজ্ঞা:

হিজামা সবার জন্য উপযোগী নয়। সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মানা না হলে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, যেমন: নীলচে দাগ, সংক্রমণ, মাথা ঘোরা। হিজামা সাধারণত নিম্নোক্ত ব্যক্তিদের জন্য নিষিদ্ধ:

  • রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা আছে (যেমন হিমোফিলিয়া)
  • তীব্র রক্তাল্পতায় ভোগা ব্যক্তি
  • গর্ভবতী নারী (বিশেষ করে পেট ও কোমরের অংশে)
  • সংক্রমিত বা সক্রিয় চর্মরোগে আক্রান্ত ব্যক্তি
  • গুরুতর হৃদরোগ বা কিডনির অসুস্থতা রয়েছে এমন ব্যক্তি

যদিও হিজামার ইতিহাস দীর্ঘ, এটি অবশ্যই একজন দক্ষ ব্যক্তির মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন পরিবেশে করতে হবে। সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো— হিজামাকে কখনোই আধুনিক চিকিৎসার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়; বরং এটি কেবলমাত্র সহায়ক চিকিৎসা হিসেবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে করা প্রয়োজন।#

পার্সটুডে/এমএআর/২৭