দক্ষিণ ককেশাসে কি ইরানের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়েছে?
-
দক্ষিণ ককেশাসে ইরানের অবস্থান কি দুর্বল হয়ে পড়েছে?
পার্সটুডে- মার্কিন সাময়িকী “দ্য হিল”-এর ওয়েবসাইটে গত ৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক নিবন্ধে ইরান ইস্যুতে ভুল দাবি করা হয়েছে। নেদারল্যান্ডসের গ্রোনিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি'র ছাত্র মাজলুম ওজকান “ইরান হচ্ছে ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত আর্মেনিয়া-আজারবাইজান শান্তিচুক্তির সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ" শিরোনামে যে নিবন্ধটি ঐ পত্রিকায় ছেপেছে তাতে যেসব দাবি করা হয়েছে সেগুলোর ভিত্তি নেই।
ওজকান লিখেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প-এর মধ্যস্থতায় সদ্য স্বাক্ষরিত আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যকার চুক্তিটি ইরানের জন্য কৌশলগত পরাজয়। তার যুক্তি অনুযায়ী, চুক্তিটির ভিত্তিতে আজারবাইজান ও নাখচিভান স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে, যা আর্মেনিয়ার ভূখণ্ড অতিক্রম করবে এবং ইরানকে পাশ কাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে দক্ষিণ ককেশাসে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের সুযোগ দেবে। ট্রাম্পের পক্ষ থেকে এটিকে “শান্তি ও আন্তর্জাতিক কল্যাণের ট্রাম্প রুট” বলা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইরানের আঞ্চলিক অবস্থান দুর্বল হয়েছে এমনটা দেখানোর লক্ষ্যেই মূলত তুর্কি লেখক এমন দাবি করেছেন। ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে ইরানের আঞ্চলিক প্রভাব দুর্বল হয়েছে এমন দাবিও করা হয়েছে। মনে রাখতে হবে, ট্রাম্পের মধ্যস্থতার উদ্দেশ্য প্রচারণামূলক। নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার লক্ষ্যে লোকদেখানো পদক্ষেপ নিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার দাবি করা হচ্ছে। বাস্তবে ট্রাম্প শান্তির পক্ষে নয়, যুদ্ধকেই প্রাধান্য দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
লেখকের দাবি যে ভুল তা কয়েকটি বিষয়ের দিকে নজর দিলেই প্রমাণ হয়ে যায়।
প্রথমত রুট চালুর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত কঠিন হবে।
নামকরণ নিয়েও আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সাংহাই-প্লাস সম্মেলনে নিকোল পাশিনিয়ান ও ইলহাম আলিয়েফের মধ্যে তর্ক হয়েছে। আলিয়েফ এই রুট বা চ্যানেলকে “জানজোর” বলে উল্লেখ করলে পাশিনিয়ান দ্রুত প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন,"আমরা যে সংজ্ঞা ও ভাষা নিয়ে ওয়াশিংটনে সম্মত হয়েছিলাম, এটা তার বিচ্যুতি।" এ থেকে বোঝা যায়, এই প্রকল্পের নামকরণ ও বাস্তবায়ন এখনও সময়সাপেক্ষ বিষয়।
দ্বিতীয়ত, আর্মেনিয়ার কর্মকর্তারা বারবার জানিয়েছেন, রুট বা চ্যানেল নির্মাণ ইরান ও আর্মেনিয়ার সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিকসহ সব সম্পর্ক অটুট থাকবে। আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন,
“এই প্রকল্পের মাধ্যমে আর্মেনিয়ার সঙ্গে ইরানের রেল সংযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানও পাশিনিয়ানের সঙ্গে ফোনালাপে বলেছেন, রুট বা চ্যানেল নির্মাণে আর্মেনিয়ার সার্বভৌমত্ব রক্ষার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। কোনো সামরিক বা নিরাপত্তা বাহিনী যাতে হস্তক্ষেপ না করে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তিনি সতর্ক করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক বিনিয়োগ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার আড়ালে ককেশাসে আধিপত্যমূলক লক্ষ্য অনুসরণ করতে পারে, যা প্রতিরোধ করা প্রয়োজন।
পাশিনিয়ানও বলেছেন, "ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক আর্মেনিয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের বন্ধু ও প্রতিবেশী দেশের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ থাকবে এটা নিশ্চিত হতে না পারলে আমরা কোনো চুক্তিতে সই করব না।”
তিনি আরও বলেছেন,“ইরানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কৌশলগত। সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দ্বিপাক্ষিক পরামর্শ ও সমন্বয়ের মাধ্যমে হবে। আমরা স্বচ্ছতা ও সততা রক্ষা করব এবং এই নীতি চিরকাল অটুট থাকবে।”#
পার্সটুডে/এসএ/৬
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।