মানসিক স্বাস্থ্য সংকট:
বিষণ্ণতা ও উদ্বেগ ইউরোপিয় শিক্ষার্থীদের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে
-
বিষণ্ণতা ও উদ্বেগ ইউরোপিয় শিক্ষার্থীদের ওপর প্রভাব ফেলছে
পার্স টুডে - একটি ইউরোপীয় সংস্থা ইউরোপীয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক সংকটের উদ্ভব সম্পর্কে সতর্ক করেছে।
মনোবিজ্ঞানীরা ইউরোপীয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক সংকট বৃদ্ধির বিষয়ে বিশ্বাস করেন যে এই সংকটের প্রধান কারণ হল একাডেমিক পারফরম্যান্সের চাপ, আর্থিক সমস্যা এবং একাকীত্ব ও বিচ্ছিন্নতার বর্ধিত অনুভূতি।
২০২৫ সালে প্রকাশিত ফরাসি এনজিও নাইটলাইনের একটি নতুন প্রতিবেদনে ইউরোপের শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের এক স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্যের ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৫,০০০ এরও বেশি কল এবং অনলাইন চ্যাট বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে তৈরি-করা এই প্রতিবেদনটি দেখায় যে উচ্চশিক্ষার শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিন বছর আগে, একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ইউরোপের উচ্চশিক্ষার ৪০% শিক্ষার্থী মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সাথে লড়াই করছে, যার মধ্যে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন মানসিক ব্যাধিতে ভুগছে। এখন, নতুন অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে যে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
গবেষণার ফলাফল অনুসারে বিষণ্ণতা ও উদ্বেগ হল সবচেয়ে সাধারণ সমস্যা, যার প্রাদুর্ভাব ৭১ শতাংশ। এরপর রয়েছে মনোযোগ ঘাটতি হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার (ADHD) যেখানে ২৫ শতাংশ, খাওয়ার অনিয়ম বা ব্যাধি ২০ শতাংশ, ব্যক্তিত্বের ব্যাধি ১১ শতাংশ এবং আসক্তির ব্যাধি ৮ শতাংশ। ইউরোপীয় ইউনিয়নে বেশিরভাগ মানসিক ব্যাধি ২৫ বছর বয়সের আগে দেখা দেয় এবং এর অর্ধেক ১৪ বছর বয়সের মধ্যে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
এই সমস্যাগুলোর ক্রমবর্ধমান প্রবণতা লক্ষণীয়; উদাহরণস্বরূপ, আয়ারল্যান্ডে আঠারো থেকে পঁচিশ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে বড় ধরনের বিষণ্ণতার হার ২০১২ সালে ১৪% থেকে বেড়ে ২০১৯ সালে ২১% হয়েছে। ফ্রান্স আরও খারাপ পরিস্থিতিতে রয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে দেশটিতে ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যার চিন্তাভাবনা ২১৮% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ৩.৩% থেকে ৭.২% হয়েছে।
নাইটলাইন কলের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ইউরোপীয় কলের ১০.২৮% আত্মহত্যার বিষয়ে ছিল, কিন্তু ফ্রান্সে এই সংখ্যা বেড়ে ১৬.২০% হয়েছে, এটি ইউরোপীয় গড়ের ১.৫৭ গুণ। একাকীত্ব ও বাড়ির জন্য অনুতপ্ত হওয়ার (১৬%), আবাসন নিরাপত্তাহীনতা এবং আবাসন সমস্যা (১০%) এবং শারীরিক ও মানসিক সহিংসতা (৪%) সম্পর্কিত কলের হারও ফ্রান্সে সবচেয়ে বেশি।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে যৌন সহিংসতা সম্পর্কিত কলের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের পরে ফ্রান্স দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। বর্ণবাদী হামলার শিকার, অর্থনৈতিকভাবে অনিরাপদ, অথবা প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মতো দুর্বল গোষ্ঠীগুলো বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী বিষণ্ণতা এবং উদ্বেগের কারণে ১২ বিলিয়ন কর্মদিবস নষ্ট হয়, যার আর্থিক ক্ষতি উৎপাদনশীলতা হ্রাসের প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলারের সমান।ছাত্র পর্যায়ে, এই সংকট কেবল তরুণদের ব্যক্তিগত বিকাশকেই ব্যাহত করে না, একইসঙ্গে তা মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা ও শিক্ষা ব্যবস্থার ওপরও ভারী বোঝা চাপিয়ে দেয়।#
পার্স টুডে/এমএএইচ/২৪
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।