ইরান পারমাণবিক শিল্পের অর্জনগুলো সংরক্ষণের ওপর কেন জোর দিচ্ছে?
-
মাসুদ পেজেশকিয়ান এবং মোহাম্মদ ইসলামি
পার্সটুডে-ইরানের প্রেসিডেন্ট পারমাণবিক শক্তি সংস্থায় যোগদানের সময়, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা এবং রেডিওফার্মাসিউটিক্যাল উৎপাদন ক্ষেত্রে পারমাণবিক শিল্প বিজ্ঞানীদের সর্বশেষ উদ্ভাবিত অর্জনগুলোর প্রদর্শনী পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে তিনি পরমাণু শিল্পের উর্ধ্বতন ব্যবস্থাপকদের সাথে একটি বৈঠক করেন।
রোববার (২ নভেম্বর) ইরানের প্রেসিডেন্ট, মাসুদ পেজেশকিয়ান ওই বৈঠকে বলেন: "পারমাণবিক ক্ষেত্রটি বৈচিত্র্যময়। এই শিল্পের অমানবিক পরিণতির একটিমাত্র অংশ হলো বোমা তৈরি করা, বাদবাকি অংশ মানবতার মৌলিক চাহিদা পূরণে কাজ করে।" পার্সটুডে আরও জানায়, ইরানের প্রেসিডেন্ট আরও বলেছেন: "এই শিল্প বিকাশের জন্য ইরানের উদ্দেশ্য এবং সংকল্প অস্ত্র উৎপাদন করা নয় বরং জনগণের চাহিদা পূরণ করা এবং দেশের কল্যাণ করা।"
বৈঠকে, ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ ইসলামি রাশিয়ার সহযোগিতায় আটটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষরের কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন: “ইরান ও রাশিয়া সরকারের মধ্যে নতুন চুক্তির ভিত্তিতে, বুশেহরে চারটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং দেশের অন্যান্য অংশে চারটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। ইরান সরকার পরবর্তীকালে তাদের অবস্থান ঘোষণা করবে বলে এজেন্ডায় উল্লেখ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।”
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি আরও বলেন: ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শূন্যে আনা সম্ভব নয়, সমৃদ্ধকরণ ইরানি বিজ্ঞানীদের অর্জন বলেও তিনি দাবি করেন। এই সমৃদ্ধকরণের জন্য ইরানের ওপর ১২ দিনের যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যে যুদ্ধে এক হাজারেরও বেশি শহীদ হয়েছে। যুদ্ধে তারা যা অর্জন করতে পারে নি, আলোচনায়ও তা অর্জন করতে পারবে না।
ইরান সর্বদা পারমাণবিক শিল্পের অর্জনগুলো সংরক্ষণের ওপর জোর দেয় কারণ তারা এই শিল্পকে জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ, জাতীয় কল্যাণ এবং বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত স্বাধীনতা নিশ্চিত করার হাতিয়ার হিসাবে বিবেচনা করে। স্বাস্থ্য, চিকিৎসা এবং রেডিওফার্মাসিউটিক্যালস উৎপাদনসহ ইরানের বেশিরভাগ পারমাণবিক শিল্প জনগণের স্বাস্থ্য ও কল্যাণে কাজ করে। এই প্রযুক্তি রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসায় বিশেষ করে ক্যান্সারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইরান রেডিওফার্মাসিউটিক্যালস সরঞ্জামাদি উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।
ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ইরানি বিজ্ঞানীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্জনগুলোর একটি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমাদের সাথে যুক্ত বিদেশী মিডিয়ার পক্ষপাতদুষ্ট প্রচারণায়, মিথ্যাচার করা হচ্ছে যে ইরানের পারমাণবিক শিল্পের লক্ষ্য হল বোমা তৈরি করা, যদিও ইরান এই প্রযুক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের ওপর জোর দিয়ে এসেছে।
চিকিৎসা ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ইরানের পারমাণবিক শিল্পের ব্যাপক প্রয়োগ রয়েছে। জনস্বাস্থ্য, জাতীয় স্বয়ংসম্পূর্ণতা এবং টেকসই উন্নয়ন ও বিকাশে পারমাণবিক শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইরান তার বৈজ্ঞানিক ও মানবিক অর্জনগুলো প্রদর্শন করে পশ্চিমা মিডিয়াতে প্রচারিত ভুল ভাবমূর্তি সংশোধন করার চেষ্টা করছে। এই শিল্প কেবল বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির প্রতীক নয় বরং ইরানের জাতীয় পরিচয়েরও অংশ।
পারমাণবিক শিল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক প্রয়োগ হল বুশেহর এবং ইরানের অন্যান্য অংশে রাশিয়ার সহযোগিতায় নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, যাতে এই শিল্পের প্রয়োগ করে বিদ্যুৎ সরবরাহ টেকসই করা যায় এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমানো যায়। ইরান জ্বালানি চক্রের সকল ধাপ দেশিয়করণ করতে সক্ষম হয়েছে, যেমন উত্তোলন, সমৃদ্ধকরণ থেকে শুরু করে জ্বালানি উৎপাদন, যার ফলে খরচ এবং বৈদেশিক নির্ভরতা হ্রাস পেয়েছে।
ইরানের পারমাণবিক প্রযুক্তি ও পণ্য রপ্তানি দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। রেডিওফার্মাসিউটিক্যালস, বিকিরণ সরঞ্জাম ও ইরানি পারমাণবিক শিল্পের সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তিগুলো এ অঞ্চলের দেশগুলোতে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। ইরান প্রয়োজনীয় অনেক রেডিওফার্মাসিউটিক্যালস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে এমনকি সেগুলো রপ্তানিও শুরু করেছে।
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান পারমাণবিক শিল্পকে একটি জাতীয় সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করে। এই শিল্প দেশের সার্বিক কল্যাণ, স্বাস্থ্য এবং টেকসই উন্নয়নের পাশাপাশি জাতীয় অগ্রগতি, জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নসহ বিশ্বে তার বৈজ্ঞানিক অবস্থান প্রতিষ্ঠা করছে। বিদেশী চাপের মুখে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ এবং পারমাণবিক জ্বালানি চক্র স্থানীয়করণ ইরানের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ও বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির প্রতীক।#
পার্সটুডে/এনএম/৩
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।