ইরান ও জাপানের গভীর সাংস্কৃতিক সাদৃশ্য
https://parstoday.ir/bn/news/iran-i155238-ইরান_ও_জাপানের_গভীর_সাংস্কৃতিক_সাদৃশ্য
পার্সটুডে : ইরানে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত দুই দেশের বিস্তৃত সাংস্কৃতিক মিলের কথা তুলে ধরে তেহরানের আধুনিকতা ও ইস্ফাহানের মহিমায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন এবং ইরানিদের আতিথেয়তাকে জাপানি ঐতিহ্যের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
(last modified 2025-12-19T06:12:48+00:00 )
ডিসেম্বর ১৯, ২০২৫ ১২:০৯ Asia/Dhaka
  • ইরানে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত তামাকি সুকাদা
    ইরানে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত তামাকি সুকাদা

পার্সটুডে : ইরানে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত দুই দেশের বিস্তৃত সাংস্কৃতিক মিলের কথা তুলে ধরে তেহরানের আধুনিকতা ও ইস্ফাহানের মহিমায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন এবং ইরানিদের আতিথেয়তাকে জাপানি ঐতিহ্যের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

ইরান ও জাপান দুটি প্রাচীন প্রাচ্যসভ্যতা। ভৌগোলিক দূরত্ব সত্ত্বেও আচার-অনুষ্ঠান, সামাজিক রীতি এবং ঐতিহ্য থেকে আধুনিকতায় উত্তরণের পথে দেশ দু'টি গভীর সাংস্কৃতিক সাদৃশ্য বহন করে। ইরানে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত 'তামাকি সুকাদা' এসব মিলকে গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেছেন এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎকে উজ্জ্বল বলে অভিহিত করেছেন।

সভ্যতাগত মিল: আতিথেয়তা থেকে আধুনিকতায় উত্তরণ

সুকাদা জানান, দৈনন্দিন আচরণ, বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি সম্মান ও অতিথিপরায়ণতায় ইরান ও জাপানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মিল রয়েছেযা তিনি ইরানিদের তাআরোফ (সম্মানসূচক আচরণ)-এর সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি বলেন, গত ১০০১৫০ বছরে উভয় দেশই পূর্ব ও পশ্চিম, ঐতিহ্য ও আধুনিকতার দ্বন্দ্ব ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। ইরানের নওরোজ ও ইয়ালদার মতো উৎসবকে জাপানের অনুরূপ আচার-অনুষ্ঠানের সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন- এসব বৈশিষ্ট্য দুই দেশের সামাজিক আচরণ ও কূটনীতির ভিত্তি।

জাপানি সংস্কৃতিতে ইরানি তরুণদের আগ্রহ

ইরানে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইরানি তরুণদের মধ্যে জাপানি অ্যানিমেশন ও ভাষার প্রতি ব্যাপক আগ্রহে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি জানান, জাপান দূতাবাস এ ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে এবং অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর মতো বিভিন্ন আয়োজন করছে।

তামাকি সুকাদা ইরানি তরুণদের জাপানের স্বনামধন্য শিল্পবিদ্যালয়ে পড়াশোনার আমন্ত্রণ জানান এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত নীতির কথা স্মরণ করিয়ে দেন।

জাপানে ইরানি সংস্কৃতির অবস্থান

জাপানে টোকিও ও ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ফার্সি ভাষা অধ্যয়ন করা হয় এবং বহু গবেষক প্রাচীন ইরানি সভ্যতায় আগ্রহী। জাপানি কূটনীতিকরাও ফার্সি শেখেন। সুকাদা ফার্সি ভাষাকে কঠিন হলেও আকর্ষণীয় বলে বর্ণনা করেন এবং জাপানে ফার্সি ভাষার প্রতি জনসাধারণের আগ্রহ আরও বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সাংস্কৃতিক বিনিময় ও যৌথ সপ্তাহ

ইরান-জাপান সাংস্কৃতিক সপ্তাহ টানা ১৭ বছর ধরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে; চলতি বছরে এর মূল ফোকাস ছিল সমসাময়িক জাপানি চলচ্চিত্র। ২০২৪ সালের 'শাশ্বত ইরান' এবং অতীতে অনুষ্ঠিত 'ইরানের মহিমা' প্রদর্শনীর মতো আয়োজনগুলো জাপানে ইরানি সংস্কৃতির প্রভাব তুলে ধরেছে। ইরানে জাপানের রাষ্ট্রদূত জানান, ২০২৯ সালে কূটনৈতিক সম্পর্কের শতবর্ষ উপলক্ষে একটি বড় আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা: ইরানি খাবার থেকে ভ্রমণের বিস্ময়

সুকাদা জানান, তিনি 'খোরেশ-ই বাদেমজুন' (বেগুনের স্টু) এবং 'কাশ্ক-ই বাদেমজুন' (বেগুন ও কাশ্কের ডিশ)-এর ভক্ত হয়ে গেছেন এবং জানজানের 'জুগর বুগর' (এক ধরনের খাবার) -কে সুস্বাদু বলে বর্ণনা করেন।

তেহরানের আধুনিকতা ও প্রাণচাঞ্চল্য তাঁকে বিস্মিত করেছে, আর ইস্ফাহানের সূক্ষ্ম ও নিখুঁত স্থাপত্য তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছে। রেই শহরে জাপানিদের কবরস্থান পরিদর্শন এবং বারো দিনের যুদ্ধের সময় ইরানে প্রত্যাবর্তনএসব ছিল তাঁর সবচেয়ে স্মরণীয় অভিজ্ঞতা।

সব মিলিয়ে, ইরানে জাপানের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এই সাক্ষাৎকার ভৌগোলিক দূরত্বের ঊর্ধ্বে থাকা এক গভীর ও শিকড়গাড়া সম্পর্কের ছবি আঁকেযার ভিত্তি নৈতিক মিল, সভ্যতাগত ঐতিহ্যের প্রতি পারস্পরিক সম্মান এবং তরুণ প্রজন্মের ক্রমবর্ধমান আগ্রহ। সাংস্কৃতিক কূটনীতি, যৌথ সাংস্কৃতিক সপ্তাহ এবং শিক্ষাবিনিময়ের মতো উদ্যোগের মাধ্যমে দুই দেশের সহযোগিতার দিগন্ত আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও বিস্তৃত হতে পারে বলে প্রতীয়মান হয়।#

পার্সটুডে/এমএআর/১৯