‘সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের’ বিপরীতে ‘সর্বোচ্চ প্রতিরোধ’ চালাবে ইরান
-
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ
ইরানের বিরুদ্ধে হোয়াইট হাউজের নিষেধাজ্ঞা আরোপের নীতিকে সন্ত্রাসবাদ হিসেবে অভিহিত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ বলেছেন, তার দেশ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আলোচনা করবে না। তিনি বুধবার নিউ ইয়র্কে সাংবাদিকদের বলেন, আমেরিকার এই অর্থনৈতিক যুদ্ধ তার দেশের সরকার বা সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে শুরু করা হয়নি বরং সাধারণ জনগণকে টার্গেট করে শুরু করা হয়েছে।
এ যুদ্ধকে ‘অর্থনৈতিক সন্ত্রাসবাদ’ আখ্যায়িত করে মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ বলেন, উগ্র সন্ত্রাসীরা যেমন সরকারের ক্ষতি করতে না পেরে তাদের অশুভ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য সাধারণ মানুষকে টার্গেটে পরিণত করে তেমনি আমেরিকাও ইরানের সাধারণ মানুষকে টার্গেটে পরিণত করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, চার দশক আগে ইরানে ইসলামি বিপ্লব হওয়ার পর থেকে ইরানি জনগণকে লক্ষ্য করে সব সময় মার্কিন সরকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এসেছে। ওই বিপ্লবের মাধ্যমে ইরান মার্কিন তাবেদারি প্রত্যাখ্যান করে স্বাধীনচেতা জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে যা ওয়াশিংটন স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেনি।

এ সম্পর্কে ভিয়েনায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে নিযুক্ত ইরানের স্থায়ী প্রতিনিধি কাজেম গরিব আবাদি তার দেশের বিরুদ্ধে আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, বিশ্বের সব অবৈধ কর্মের উৎস আমেরিকা অন্য দেশের নীতি পরিবর্তনের লক্ষ্যে ওয়াশিংটন অবৈধ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে।
ইরান গত ৪০ বছরে সম্পূর্ণ নিজের ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চোখ ধাঁধানো সাফল্য অর্জন করেছে। আমেরিকার নিষেধাজ্ঞাকে চ্যালেঞ্জ করে ইরানের আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠার এই পদক্ষেপকে বিশ্বের আরো বহু স্বাধীনচেতা দেশ আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছে যা মেনে নেয়া ওয়াশিংটনের পক্ষে সম্ভব হয়নি। এ কারণে উন্নতির পথে ইরান যত বেশি সাফল্য অর্জন করেছে আমেরিকা ঠিক তত বেশি তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও চাপ প্রয়োগ করেছে। কিন্তু এতসব নিষেধাজ্ঞা ও চাপ সত্ত্বেও ইরান তার বিপ্লবী চেতনায় অটল রয়েছে।

গত ৪০ বছরে ইরান দৃঢ়তার সঙ্গে একথা প্রমাণ করেছে যে, দেশটি কোনো অবস্থায় আমেরিকার বলদর্পী সরকারের কাছে আত্মসমর্পন করবে না। এমন ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো সরকার যদি বারবার ক্ষমতায় এসে অর্থনৈতিক সন্ত্রাসবাদ চালিয়ে যায় তারপরও তেহরান ওয়াশিংটনের অন্যায় আবদারের কাছে নতি স্বীকার করবে না।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেমন ইরানের ওপর ‘সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ’ করার নীতি গ্রহণ করেছেন তেমনি তেহরানও ‘সর্বোচ্চ প্রতিরোধ’ চালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে ওয়াশিংটনকে বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, গত এক বছরে ইরানের ওপর আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ছিল সাম্প্রতিক অতীতের সবচেয়ে কঠিন অবরোধ। কিন্তু তা সত্ত্বেও হোয়াইট হাউজের চাপের কাছে আত্মসমর্পন করেনি ইরান। তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেশটিকে আলোচনায় বসতে বাধ্য করা যাবে বলে ট্রাম্প প্রশাসন যে স্বপ্ন দেখেছে তা কোনোদিনও বাস্তবায়তি হবে না।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী যেমনটি বলেছেন, নিষেধাজ্ঞার ফলে ইরানি জনগণের কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে ইরানি জনগণ দুর্বল নয়। আল্লাহর ইচ্ছায় এদেশের জনগণ শক্তিমত্তা ও সম্মানের সঙ্গে নিজের কাঙ্ক্ষিত লক্ষপানে এগিয়ে যাবে। #
পার্সটুডে/এমএমআই/১৮