প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম টেলিভিশন সাক্ষাৎকার
পরমাণু সমঝোতা ও আফগানিস্তান বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান জানালেন রাইসি
-
ইরানের প্রেসিডেন্ট আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রাইসি
ইরানের প্রেসিডেন্ট আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রাইসি টেলিভিশন চ্যানেলে দেয়া সাক্ষাতকারে দেশের অর্থনৈতিক বিষয়সহ করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সরকারের পদক্ষেপ, পরমাণু সমঝোতা ও আফগানিস্তান বিষয়ে তার সরকারের অবস্থান তুলে ধরেছেন।
প্রতিবেশী দেশগুলোর নিরাপত্তাকে ইরান তার নিজের নিরাপত্তা বলে মনে করে উল্লেখ করে আফগানিস্তান প্রসঙ্গে ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘আফগান সংকট সমাধানের উপায় হচ্ছে জনগণের ভোটে একটি নির্বাচিত সরকার গঠন। দেশটিতে যে সরকারই গঠিত হোক না কেন তাতে আফগান জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন জরুরি’। পরমাণু সমঝোতা সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট রাইসি বলেছেন, পাশ্চাত্য বহুবার এটা উপলব্ধি করেছে যে ইরানের ওপর চাপ সৃষ্টি করে কোনো লাভ হবে না আর চাপ ও হুমকি এদুটির কোনোটিই আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়’। পাশ্চাত্য আলোচনা প্রক্রিয়াকে কূটনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেছেন, ‘আমরা শুধুমাত্র আলোচনার জন্য আলোচনায় বসতে চাই না। আমরা ফলদায়ক আলোচনায় বসতে চাই। আর আমরা যে ফলটি চাই তা হলো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা এবং এ দাবি থেকে আমরা এক কদমও পিছিয়ে আসবো না’।
পরমাণু সমঝোতা হচ্ছে বহুপক্ষীয় একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং এর প্রতি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সমর্থন রয়েছে। তাই এ ব্যাপারে ইরানের প্রেসিডেন্টের বক্তব্য স্পষ্ট ও যৌক্তিক। মার্কিন থিঙ্কট্যাংক ‘আটলান্টিক পরিষদের’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর আশা করা হয়েছিল ইরানকে পুরোপুরি আত্ম সমর্পণে বাধ্য না করে সত্যিকারের আলোচনার মাধ্যমে হোয়াইট হাউজ স্পষ্ট ও যৌক্তিক অবস্থান নেবে। যদিও তা এখনো দেখা যাচ্ছে না’।
বাস্তবতা হচ্ছে, বর্তমান মার্কিন সরকারও সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মতো এখনো পরমাণু সমঝোতার বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদের ২২৩১ নম্বর প্রস্তাব লঙ্ঘন করে চলেছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ইয়ানিস ওয়ারেস বলেছেন, মার্কিন সরকার আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কাজ করছে এবং এতে করে গণতন্ত্রের চর্চাকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের যে সুনাম রয়েছে তার বিশ্বাসযোগ্যতা মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে ইরানের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক অবাধ বাণিজ্য আইনের লঙ্ঘন। তাই যত দ্রুত সম্ভব এ নিষেধাজ্ঞার অবসান ঘটানো উচিত যাতে অন্য দেশের সঙ্গে স্বেচ্ছাচারী আচরণ ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের কোনো সুযোগ না থাকে।
নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত ২২৩১ নম্বর প্রস্তাবে স্পষ্ট করে বলা আছে সব পক্ষকে পরমাণু সমঝোতা মেনে চলতে হবে। কিন্তু সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেই পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যান এবং বেআইনিভাবে ইরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। অন্যদিকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরান যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে জন্য ইউরোপ প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তারা যুক্তরাষ্ট্রের নীতিই অনুসরণ করতে থাকে। যদিও তারা জানে যে ইরান বিরোধী নিষেধাজ্ঞা সম্পূর্ণ বেআইনি। এ অবস্থায় পরমাণু সমঝোতার বিষয়ে ইরানের প্রেসিডেন্টের বক্তব্য যৌক্তিক বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/৫