জামকারান মসজিদ: যেখানে দোয়া রূপ নেয় সামাজিক আন্দোলনে
-
জামকারান মসজিদ, কোম, ইরান।
পার্সটুডে: ইরানের জামকারান মসজিদ হল বিশ্বব্যাপী মুক্তিদাতার (ইমাম মাহদি আ.) আবির্ভাব, ন্যায়বিচার প্রসার, দয়া এবং মানুষের আধ্যাত্মিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের একটি প্রতীক।
কোম শহরের প্রান্তে এবং হজরত মাসুমা (সা.)-এর মাজারের কাছে অবস্থিত জামকারান মসজিদ কেবল একটি ইবাদতকেন্দ্রই নয়, বরং এটি একটি আদর্শের প্রকাশ যা মানুষকে একটি উজ্জ্বল ও উন্নত ভবিষ্যতের দিকে আহ্বান জানায়।
ইমাম মাহদী (আ.)-এর নির্দেশে এবং হাসান ইবনে মুসলেহ জামকারানির বর্ণনার ভিত্তিতে জামকারান মসজিদটি নির্মিত হয়েছে। এটি এমন এক আশার প্রতীক, যা মানুষের হৃদয়ে প্রতীক্ষার স্পন্দন জাগায়—একজন মুক্তিদাতার আগমনের জন্য, যিনি এসে পৃথিবীকে জুলুম, অজ্ঞতা ও বিভাজন থেকে মুক্ত করবেন এবং মানবতার অগ্রগতির পথ সুগম করবেন। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, জামকারান কেবল ইবাদতের স্থান নয়, বরং এটি আত্মা ও মনের প্রশিক্ষণের একটি মাধ্যম।
তাওহীদ ও ন্যায়বিচার, যা ইমাম মাহদির (আ.) আগমনের মূল ভিত্তি, এই মসজিদে এক সৃজনশীল শক্তি হিসেবে প্রতিফলিত হয়—যা মানবসমাজে করুণা, সহমর্মিতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণের পথ প্রশস্ত করে। এখানে উপস্থিত হওয়া মানে এমন এক আধ্যাত্মিক পদক্ষেপ নেওয়া, যা মানুষকে এমন এক জগতে প্রবেশ করায় যেখানে পারস্পরিক সম্পর্ক ক্ষমতার ভিত্তিতে নয়, বরং গুণ, নৈতিকতা ও প্রজ্ঞার ভিত্তিতে গড়ে ওঠে।
ইমাম মাহদি (আ.)-এর একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, জামকরানে নামাজ আদায় বিশেষ ফজিলতপূর্ণ। এই ফজিলত কেবল পবিত্র স্থানটির মর্যাদার দিকেই ইঙ্গিত করে না, বরং ইবাদত ও সচেতনতার গভীর সংযোগকেও তুলে ধরে। জামকরানের নামাজ হলো জীবনের পথ নিয়ে পুনর্বিবেচনা, আত্মশুদ্ধি, এবং সেই সত্যের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ—যা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পরিপূর্ণ রূপে প্রকাশ পাবে।
জামকারান একই সঙ্গে আহলে বাইতের (আ.) প্রেমিক ও ইমাম মাহদির (আ.) আগমনের প্রত্যাশীদের মিলনস্থল। তারা দোয়া ও আকাঙ্ক্ষার মাধ্যমে শুধু ব্যক্তিগত মুক্তির নয়, বরং মানবজাতির সম্মিলিত মুক্তির পথ খোঁজেন। এই সম্মিলিত প্রার্থনা ও ঐক্য সমাজে দয়া ও সহমর্মিতার বীজ বপন করতে পারে, যা মানুষকে একটি উন্নততর বিশ্ব গড়ার দিকে ধাবিত করবে—একটি বিশ্ব, যেখানে বুদ্ধিবৃত্তি, নৈতিকতা ও ভালোবাসা হিংসা ও বৈষম্যের স্থলাভিষিক্ত হবে।
পরিশেষে বলা যায়, জামকারান মসজিদকে কেবল একটি পবিত্র স্থান হিসেবে নয়, বরং এক অঙ্গীকারের কেন্দ্র হিসেবে দেখতে হবে—যেখানে চিন্তন, সংলাপ ও আগমনের যুগের প্রস্তুতি গড়ে ওঠে। এই মসজিদ মানুষকে আল্লাহর অঙ্গীকার বাস্তবায়নে অংশগ্রহণের আহ্বান জানায়—যে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ন্যায়বিচার কেবল একটি আইনি ধারণা নয়, বরং মানবজাতির বৌদ্ধিক, নৈতিক ও সামাজিক বিকাশের জন্য একটি অপরিহার্য শক্তি হয়ে উঠবে।
এই অর্থে জামকারান হলো সেই কেন্দ্রবিন্দু, যেখানে দোয়া ও উপস্থিতির মাধ্যমে মানুষ একটি উন্নত ভবিষ্যতের সঙ্গে যুক্ত হয়—একটি ভবিষ্যৎ, যেখানে কল্যাণ কেবল স্বপ্ন নয়, বরং একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা হয়ে উঠবে।#
পার্সটুডে/এমএআর/৯