ধর্ম-দর্শন
ত্রাণকর্তা ইমাম মাহদির (আ.) প্রতীক্ষায় ক্লান্ত-শ্রান্ত পৃথিবী
-
ত্রাণকর্তা ইমাম মাহদির (আ.) প্রতীক্ষায় ক্লান্ত-শ্রান্ত পৃথিবী
পার্স-টুডে: আজকের মানব জাতি, নানা মতাদর্শের অচলাবস্থায় ও অবিচারের ব্যাপকতায় ক্লান্ত। তারা আগের চেয়েও বেশি একজন খোদায়ি ত্রাণকর্তা ও ন্যায়বিচারের জন্য অপেক্ষা করছেন।
ইতিহাসে এমন সময় খুব কমই এসেছে যখন মানব সমাজ আজকের মতো একজন ত্রাণকর্তার এত বেশি প্রয়োজন অনুভব করেছে;। এ এমন একটি প্রয়োজন যা কখনও কখনও শিক্ষিত ও সভ্রান্ত মহলে সচেতনভাবে অনূভূত হচ্ছে। এ কখনও কখনও জনসাধারণের অবচেতন মনেও এই চাহিদা অনুভব হচ্ছে। আজকের মানুষ, কমিউনিজম বা সমাজতন্ত্র থেকে শুরু করে কথিত পশ্চিমা উদার গণতন্ত্র পর্যন্ত বিভিন্ন মতাদর্শ এবং চিন্তা-চেতনার অভিজ্ঞতা লাভের পরেও এখনও শান্তি ও সুখ অর্জন করতে পারেনি।
বিস্ময়কর বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি মানুষের জীবনকে বদলে দিয়েছে, কিন্তু তারা ন্যায়বিচার ও সুখের তৃষ্ণা মেটাতে পারেনি। আজ, পৃথিবী শ্রেণী-বৈষম্য, দারিদ্র্য, রোগ, দুর্নীতি, পতিতাবৃত্তি, অবিচার এবং ক্ষমতাবানদের হাতে জ্ঞানের অপব্যবহারে পরিপূর্ণ। মানবতার সেবা করার পরিবর্তে, বিজ্ঞান অনেক ক্ষেত্রেই আধিপত্য বিস্তার, যুদ্ধকামিতা এবং জাতিগুলোর সম্পদ লুণ্ঠনের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।
এই অবস্থায় ক্লান্ত-শ্রান্ত অবসাদগ্রস্ত মানবতা এখন এমন এক ত্রাণকর্তার জন্য প্রতীক্ষা করছেন যার আগমনের প্রতিশ্রুতি নানা ধর্মগ্রন্থে এসেছে এবং ইসলাম ধর্ম ও সংস্কৃতিতে যিনি শেষ যুগের নেতা বা অভিভাবক তথা ইমাম মাহদি-আ. হিসেবে পরিচিত।
ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা শেষ ত্রাণকর্তার মিশনের উদ্দেশ্য
ইসলামী শিক্ষায় প্রতিশ্রুত ইমাম মাহদী (আ.)-এর মূল লক্ষ্য ন্যায়বিচারের প্রসার ছাড়া আর কিছুই নয়; এ সম্পর্কিত খোদায়ি প্রতিশ্রুতি হল : “আল্লাহ পৃথিবীকে ন্যায়বিচার ও সাম্য দিয়ে পূর্ণ করে দেবেন।” এই ন্যায়বিচার কেবল বিশেষ কোন এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকবে না; ক্ষমতা, সম্পদ, স্বাস্থ্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক মর্যাদা, আধ্যাত্মিকতা এবং প্রবৃদ্ধিসহ সব ক্ষেত্রেই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে তাঁর আবির্ভাবের সুবাদে। বিশ্বব্যাপী ন্যায়বিচার উন্নত প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান দিয়ে সম্ভব নয়, কেবল ঐশি শক্তি এবং অভ্রান্ত ইমামের নির্দেশনা দিয়েই সম্ভব।
অধীর অপেক্ষার অর্থ প্রয়োজন অনুভবের চেয়েও অনেক গভীর
ইমাম মাহদিকে আমাদের প্রয়োজন- কেবল এমনটা মনে করাই যথেষ্ট নয়, ইসলামী শিক্ষায় তাঁর জন্য অপেক্ষার যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা কেবল প্রয়োজন অনুভব নয়, এর চেয়েও অনেক গভীর। আর তা হল এক সুনিশ্চিত ভবিষ্যতের প্রতি দৃঢ় আশা ও অবিচল বিশ্বাস। ইমাম মাহদি-আ.র জন্য অপেক্ষা করার মানে হাতে হাত রেখে বসে থাকা নয়, বরং তা হল গঠনমূলক আশা ও সুদৃঢ় পদক্ষেপ নিয়ে গতিশীল থাকা। আর এ ধরনের সক্রিয়তাকে বলা হয়েছে সর্বোত্তম ইবাদাত।
মহানবী হযরত মুহাম্মাদ তথা রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “একটি জাতির সর্বোত্তম কাজ হলো (ইমাম মাহদির আগমনের ফলে সৃষ্ট) মুক্তির জন্য অপেক্ষা করা।” প্রকৃতপক্ষে, অপেক্ষা একজন ব্যক্তিকে হতাশা ও মনোবলহীনতা থেকে রক্ষা করে এবং তাকে প্রশান্তি দেয়। জীবনের কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলেও ইমামের জন্য অপেক্ষারত জাতি কখনও হতাশ হয় না এবং সর্বদা ঐশি মুক্তির জন্য অপেক্ষা করে।
অপেক্ষা: প্রস্তুতি ও পদক্ষেপ
অপেক্ষা করা অর্থ অধৈর্য হয়ে ওঠা বা ইমামের আগমনের সময় নির্ধারণ করা নয়। তাড়াহুড়ো করে ইমামের আবির্ভাবের জন্য সময় নির্ধারণ করা ধর্মীয় শিক্ষার পরিপন্থী। সত্যিকারের অপেক্ষার অর্থ নিজেকে এবং সমাজকে প্রস্তুত করা; এর অর্থ হল জীবনযাত্রার পরিবেশকে ইমাম মাহদি-আ.'র প্রত্যাশিত সমাজের কাছাকাছি নিয়ে আসার চেষ্টা করা, যা ন্যায়বিচার, আধ্যাত্মিকতা, জ্ঞান, সম্মান, ভ্রাতৃত্ব এবং মানবিক মর্যাদার উপর ভিত্তি করে গড়ে তোলা হয়। অপেক্ষার সমাজকে অবশ্যই তার সর্বোত্তম ক্ষমতা দিয়ে মাহদিপন্থী সমাজের একটি ছোট মডেল তৈরি করতে হবে।
প্রত্যাশা বা প্রতীক্ষা কেবল ইমামের চূড়ান্ত আবির্ভাবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ধর্মীয় সংস্কৃতিতে, "কষ্টের পরে স্বস্তি"-এরও একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে; অর্থাৎ, দৈনন্দিন কষ্ট এবং সামাজিক সংকটের পরে মুক্তির পথগুলো খুলে যাওয়ার আশা রাখতে হবে। এমনকি সবচেয়ে কঠিন ঘটনাগুলোর মধ্যেও যা মানুষকে হতাশা এবং কখনও কখনও আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয়, সে ধরনের পরিস্থিতিতেও ভবিষ্যতের প্রতি একটি আশাবাদী দৃষ্টি মানসিক এবং সামাজিক পতন রোধ করে।
ইমাম মাহদী আলাইহিস সাল্লাম এর আবির্ভাবের জন্য অপেক্ষা সামাজিক কল্যাণ ছাড়াও ব্যক্তিগত প্রশান্তির জন্যেও গুরুত্বপূর্ণ। মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা, আশ্রয় চাওয়া, মোনাজাত করা এবং মহানবীর সা. পবিত্র আহলে বাইতকে ওয়াসিলা করে প্রার্থনা করা এই প্রশান্তিকে গভীরতর করতে পারে। যেমনটি পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে : একমাত্র আল্লাহর স্মরণেই রয়েছে অন্তরগুলোর প্রশান্তি। মহান আল্লাহর স্মরণ মানুষের আত্মাকে অশান্ত অবস্থা থেকে মুক্তি দেয় এবং ভবিষ্যতে মুক্তি লাভের আশা জোরদার করে।
প্রতীক্ষার যুগে প্রশান্তির পথ
বর্তমানে মানবজাতি অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় সবচেয়ে বেশি মাত্রায় মুক্তির মুখাপেক্ষী। মানব রচিত মতাদর্শ গুলো ব্যর্থ হয়েছে এবং বিজ্ঞান ন্যায় বিচার ও প্রশান্তি আনতে পারেনি। সমসাময়িক যুগের মানুষ খোদায়ি শক্তির বিজয় দেখার প্রত্যাশা করছে আর এ বিষয়টি হযরত ইমাম মাহদী আ. তথা যুগের অভিভাবকের মাধ্যমেই প্রকাশ পাবে। কিন্তু শেষ ত্রাণকর্তার জন্য অপেক্ষা করা মানে কেবল বসে থাকা নয়, এর অর্থ সব সময় এমন ভাবে সক্রিয় থাকা যাতে সমাজে যথাসম্ভব বেশি মাত্রায় ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা যায় ও সমাজে বেশি মাত্রায় আধ্যাত্মিকতা ও মানবিকতা প্রতিষ্ঠা করা যায়। আর এসবই করতে হবে খোদায়ি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পথ সুগম করার লক্ষ্যে। ইমাম মাহদীর জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে এমন এক আশা যা মানবজাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসবে, আর এ আশাই ইমাম মাহদীর ( আমাদের আত্মাগুলো তাঁর জন্য কোরবান হোক) আগমনের সূচনা ঘটাবে।#
পার্স টুডে/এমএএইচ/১১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।