সুরা আসরা বা বনি ইসরাইলের ৮১ নম্বর আয়াতের পর্যালোচনা
সত্যের পথ ধরুন, সত্যের দাবি তুলুন
মহান আল্লাহর পাঠানো নবী-রাসুলগণ ছিলেন সামগ্রিকভাবে মানবজাতির অগ্রযাত্রা ও উন্নতির মাধ্যম, যদিও তারা প্রত্যেকেই অনেক বঞ্চনা ও অকৃতকার্যতার শিকার হয়েছেন।
পবিত্র কুরআনের সুরা আসরার ৮১ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:
(হে রাসুল) আপনি বলুনঃ সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল।
-এখানে আমরা এই আয়াতের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ তুলে ধরার চেষ্টা করব। মহান খোদার অন্যতম রীতি বা সুন্নাত হল এই মহাসত্য। নবী-রাসুলগণ সত্যের মানদণ্ড। আর তাঁদের পথও এই অমোঘ নিয়ম। অর্থাৎ মিথ্যা বিলুপ্ত হতে বাধ্য। মিথ্যা হচ্ছে অসার বিষয় বা শূন্যতায় ভরা বিষয়। তাই এটা প্রথম থেকেই পরাজিত। তাই বাস্তব জগতে মিথ্যা কখনও এগিয়ে যেতে পারে না। খোদায়ি এই সুন্নাত অনুযায়ী মানুষ আল্লাহর পথে ও নবী-রাসুলদের অনুসরণে যা-ই করুকনা কেন অবশেষে বিশ্বে তার প্রভাব পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত তা বিজয়ী হয়।
পানি বা ফেনার দৃষ্টান্ত
একটি গ্লাসে পানি ঢালার পর লক্ষ্য করলে দেখা যায় এই পানির ওপর কিছুটা ফেনা আসে। কিন্তু এই ফেনা বেশিক্ষণ থাকে না, এক সময় উধাও হয়ে যায়। কিন্তু পানি থেকে যায়। পানি জীবনের মাধ্যম। তৃষ্ণার্তরা পানি পান করে পরিতৃপ্ত হয়। পানি পেয়ে গাছপালা হয় ফলবান, ফুল হয় প্রস্ফুটিত। ফল হয় পরিপক্ব। পানির সংস্পর্শে ধুসর মরু অঞ্চলও হয়ে ওঠে সবুজ-শ্যামল। কিন্তু ফেনা পারে না তৃষ্ণা মেটাতে কিংবা বীজের অঙ্কুরোদগম ঘটাতে। ফেনা দিয়ে কোনো কাজই হয় না।
পবিত্র কুরআন সত্যকে পানির সঙ্গে তুলনা করেছে। পানি বেশিরভাগ সময়ই নীরব বা প্রশান্ত, পড়ে থাকে নীচে। অথচ তা-ই জীবন ও সজীবতার উৎস। মিথ্যা হচ্ছে ঠিক ফেনার মত। তা দাম্ভিক ও ভেসে বেড়ায় ওপরে। কিন্তু অন্তঃসারশূন্য, অসার ও বিলীয়মান। তাই বলা হয়েছে, নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল। সুতরাং কখনও মিথ্যার পক্ষ নেয়া যাবে না, কারণ, মিথ্যার পক্ষ নেয়া মানে আত্মহনন তথা ধ্বংস অনিবার্য। মিথ্যা মতাদর্শ বা ভাবনাও অনুরূপ। আর টিকে থাকতে চাইলে সত্যের পথ ধরুন, সত্য বলুন ও সত্যের দাবি তুলুন। যা আনতে হয় ও এসেই যাবে তা হল সত্য আর যা বিদায় হতে বাধ্য তা হল মিথ্যা। তাই কুরআনে বলা হয়েছে: সত্য এসেছে বা এসে গেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে।
বিজয় অথবা পরাজয়?
অনেক নবী-রাসুল জীবন কাটিয়েছেন কঠোর প্রচেষ্টা এবং জিহাদ ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। তাঁদের অনেকেই শাহাদাতের শরবত পান করেছেন। তাহলে তাঁদের এইসব প্রচেষ্টা কি বৃথা গেল? তাঁরা কি ব্যর্থ হয়েছেন? তাহলে কি যুগে যুগে জুলুম, শঠতা, খোদাদ্রোহিতা, কুফরি-এসব কি কর্তৃত্ব করেছে? সরলমনা অনেকেই হয়তো এমনটাই ভাবেন। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি ব্যাপারটি এমন নয়।
এখানে দু'টি বিষয় বিবেচ্য। প্রথমত: নবী-রাসুলের ধারা তথা হযরত আদম থেকে শেষ নবী পর্যন্ত যারা এসেছেন তারা কি অগ্রগামী হয়েছেন না দেউলিয়া হয়েছেন? দ্বিতীয়ত: নবী-রাসুলগণ নিজ নিজ যুগে কি সফল হয়েছেন না ব্যর্থ হয়েছেন?
মহান আল্লাহর পাঠানো নবী-রাসুলগণ ছিলেন সামগ্রিকভাবে মানবজাতির অগ্রযাত্রা ও উন্নতির মাধ্যম, যদিও তারা প্রত্যেকেই অনেক বঞ্চনা ও অকৃতকার্যতার শিকার হয়েছেন। মানুষকে মানবীয় পরিণতির দিকে তাঁরাই এগিয়ে নিয়েছেন। এ পথে এগিয়ে যেতে মানুষকে তাঁরাই সাহায্য করেছেন। কিন্তু প্রত্যেক নবীর তৌহিদবাদী আন্দোলন ও বিপ্লব কি সফল হয়েছে? এ বিষয়ে একটি সাধারণ নিয়ম রয়েছে। এ নিয়মটি হল এইসব আন্দোলনের যে কটিতে যথেষ্ট ঈমান ও ধৈর্য দেখা গেছে সেসবই সফল হয়েছে। আর যেসবের মধ্যে যথেষ্ট ঈমান ও ধৈর্য ছিল না সেসব সফল হয়নি।
[ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর 'কুরআনের আলোকে সামগ্রিক ইসলামী চিন্তাধারা' শীর্ষক বক্তব্যের অংশ]
পার্সটুডে/এমএএইচ/২৭
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।