মার্চ ২৮, ২০১৬ ১৫:১৮ Asia/Dhaka
  • নিজাম উদ্দিন মাহমুদ
    নিজাম উদ্দিন মাহমুদ

নিজাম উদ্দিন মাহমুদ: কষ্ট করবে নারী আর ফল ভোগ করবে পুরুষ তা হতে পারে না। কোনো সন্তানের জন্ম এবং বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে মৌলিক তিনটি কষ্টকর ধাপ অতিক্রম করতে হয়। তা হল গর্ভধারণ, প্রসব যন্ত্রণা এবং দুধপান। ১০ মাস ১০ দিন ব্যাপী দীর্ঘ এবং চরম কষ্টকর গর্ভধারণ, মৃত্যুসম প্রসব যন্ত্রণা এবং আড়াই বছরব্যাপী অসহ্য জ্বালাতন নিয়ে দুধপান।

এছাড়াও আরও কত যে কষ্ট আছে কম বেশী সবই আমাদের জানা। এই তিনটি কষ্টকর যাতনা আর সীমাহীন দুর্ভোগের তিনটিই করে থাকেন সন্তানের প্রিয় ‘মা’ জননী। অথচ কোনো সন্তানের ওপর মা এবং বাবার অধিকার আলোচনা করলে দেখা যায় সন্তানের ওপর বাবাই বেশী অধিকার দাবি করেন। বিবাহ বিচ্ছেদের পর পুরুষই সন্তানকে পেয়ে যায় বা নিয়ে যায়। কিন্তু একটি সন্তান বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে নারীর ত্যাগ-তিতিক্ষা অনেক বেশী। বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় প্রায় পুরো দায়িত্বই নারীর। কিন্তু তাই বলে যদি নারীরা দাবি করেন যে, এখন থেকে নারী ওই সব কাজ একা করতে পারবে না বরং পুরুষকেও সন্তান জন্মদানে গর্ভধারণ অথবা প্রসব কষ্ট বা দুধপান যে কোন একটা করতে হবে। তাহলে কি এই সমঅধিকার নারীকে দেয়া সম্ভব? সম্ভব নয়। জানি না হয়তো তারা আমেরিকাতে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া পুরুষ গর্ভবান লোকটি অথবা কয়েক বছর আগে পিজি হাসপাতালে পুরুষের পেটে তারই ভাইয়ের ভ্রুণ পাওয়ার উদাহরণ দেয় কিনা। যাই হোক যদি এমন হয় তা যে নারীর জন্য কতটা বিব্রতকর তা নিচের ঘটনা পড়লেই বুঝতে পারবেন।

একজন বড় আলেমের নিকট ঘটনাটি ১০/১২ বছর আগে শুনলাম। একবার সকল নারীরা একত্র হয়ে বণী ইসরাঈলের নবীর নিকট দাবি করল যে, সন্তান জন্মের ক্ষেত্রে তিনটি কষ্টের তিনটিই নারীরা করে অথচ পুরুষ সন্তানের সমান অধিকারী, এমনকি বেশী। সুতরাং তিনটির মধ্যে কিছু কাজ পুরুষকে দিতে হবে। নারীদের কঠোর আন্দোলনের পর তাদেরকে বলা হল ঠিক আছে তোমরা কোন কষ্টটা পুরুষকে দিতে চাও তা ঠিক কর। পুরুষকে কোনটি দেয়া হবে এই সিদ্ধান্তের জন্য নারী নেত্রীদের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক চলছে। তখন একজন প্রস্তাব করল গর্ভধারণ যেহেতু দীর্ঘ সময়ের কষ্টের কাজ তাই পুরুষকে গর্ভধারণের কাজটি দেয়া হোক। কিন্তু পর্যালোচনা করে দেখা গেল গর্ভধারণের এই সময়টুকু স্বামী স্ত্রীকে খুব ভালোবাসে, কাছে কাছে থাকে, ভালো ভালো খাবারের ব্যাবস্থা করে, কষ্টকর কোন কাজ করতে হয় না। তাই সিদ্ধান্ত হল না গর্ভধারণ পুরুষকে দেয়া যাবে না। আরেকজন প্রস্তাব করল যে, দুধপানের দীর্ঘ বিরক্তিকর কাজটিই তাহলে পুরুষকে দেয়া হোক। এই প্রস্তাবের পর্যালোচনা করে দেখা গেল যদি তাই হয় তাহলে নারীর শারীরিক যে অবয়ব তা আর থাকবে না। ফলে নারীর আকর্ষণ কমে যাবে। তখন কেউ আর নারীর দিকে আগ্রহ বা উৎসুক হয়ে তাকাবে না। নারীর প্রতি কিছুটা অবহেলা হবে। সুতরাং এই বোকামীও করা যাবে না। তাই এই প্রস্তাবও বাদ। পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত হল যে, প্রসব যন্ত্রণার বিষয়টি পুরুষকে দেয়া হবে। যাই হোক নারীনেতৃরা তাদের সিদ্ধান্ত নবীকে জানিয়ে দিল। তখন তিনি স্রষ্টার নিকট প্রার্থনা করে সেই ব্যবস্থা করলেন। ফলে দেখা গেল একটি নারীর সন্তান হল অথচ তিনি কোনো প্রসব বেদনায় কষ্ট পাননি এবং খুব সহজেই সন্তান জন্ম নিল। এতে সাধারণ মহিলারা খুব খুশি হলেও ওই সমাজের পুরুষবিদ্বেষী তথা বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী কিছু প্রগতিশীল নারী নেত্রী নবীকে এসে বলল যে, শর্ত ছিল মহিলা কষ্ট পাবে না সেই কষ্ট পাবে পুরুষ। অথচ ওই মহিলার স্বামী, সন্তান জন্মের সময় কোনো কষ্ট পাননি কেন? নবী বললেন, দেখ নারীতো কষ্ট পায়নি তাতে তোমাদের তো আর কোনো বক্তব্য থাকার কথা না। পুরুষ বিদ্বেষী নারীরা বলল, না শর্ত মোতাবেক পুরুষকে প্রসব যন্ত্রণায় নারীর মত কাতরাতে হবে। নবী বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে, তবে তোমরা খবর নাও দেখি গতকাল যখন ওই মহিলার সন্তান হচ্ছিল তখন পাশের বাড়ীর অমুক যুবক চিৎকার দিয়ে এত মূর্চ্ছা গেল কেন? আর কিছুক্ষণ পর আবার কেনইবা থেমে গেল? খবর নিয়ে দেখা গেল ঘটনা সত্যি। একটি যুবক হটাৎ চিৎকার দিতে লাগল এবং একটু পর থেমে গেল। নারীরা বলল তাতে কি হয়েছে। ওই মহিলার স্বামীতো কোনো কষ্ট পায়নি। তখন নবী যে তথ্য দিলেন তার জন্য নারী নেত্রীরা প্রস্তুত ছিলেন না। তা হল এই মহিলার গর্ভে জন্ম নেয়া এই শিশুটি মূলত ওই চিৎকারকারী যুবকেরই সন্তান। অর্থাৎ এই সন্তানটি অবৈধ। এভাবে দেখা গেল সন্তান জন্মায় এই বাড়ীতে আর চিৎকার দিয়ে মুর্চ্ছা যায় ওই বাড়ীতে। সন্তান হয় এই মহিলার চিৎকার দেয় দেবর অথবা কাজের লোক বা প্রতিবেশী, সন্তান হয় নারী নেত্রীর চিৎকার দেয় বড় নেতা ইত্যাদি। এই ঘটনা সাধারণ মহিলারদের চেয়ে কথিত প্রগতিবাদী নারীদের ক্ষেত্রেই বেশী ঘটতে ছিল। এবং সেই প্রগতিবাদীদের চরিত্র সবার সামনে উন্মোচিত হতে লাগল। তখন নারী নেত্রীরা চিন্তা করল এভাবে চলতে থাকলে সবারই গোমর ফাঁস হয়ে যাবে। তাই নারী নেত্রীরা পুনরায় দাবি করল যে, পুরুষের কষ্টের দরকার নেই যেভাবে ছিল সেভাবেই থাকুক। ফলে প্রসব যন্ত্রণা আগের মতই নারীর কাছে চলে গেল।

এখন কথা হল যদি বর্তমান সমাজের নারীদেরকে প্রস্তাব দেয়া হয়য়ে ওই সময়ের মত এখন আবার সন্তান জন্মকালীন প্রসব যন্ত্রণা নারীর না হয়ে জন্মদাতা পিতার কষ্ট হবে। তাহলে প্রগতিবাদী কয়জন নারী মেনে নেবে তা বলা মুশকিল। যাইহোক আমি বলতে চাচ্ছি যে, সেই সমাজ বা বর্তমান সমাজে অবৈধ সন্তান জন্মানোর ঘটনা খুব বেশী নয়। কিন্তু আমার কথা হল আল্লাহ প্রদত্ত পদ্ধতির বাইরে গেলে তা যেকোনো মানুষের জন্যই বিব্রতকর হতে পারে। তাই নয় কি?

আসলে নারী পুরুষের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়, প্রয়োজন নেই এবং উচিতও নয়। যেমন একজন পুরুষ ৪ জন স্ত্রী গ্রহণ করতে পারে। নারীও ৪ জন স্বামী গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু সেটা একত্রে নয়। একজনের সাথে বিচ্ছেদের পর অন্যজন, এভাবে। নারী যদি ৪ জন স্বামী একসাথে নিতে পারতেন তাহলে সন্তানটির পিতা কে হবেন! কি বিশ্রি অবস্থা বলুনতো। আসলে কোনো নারীই তার একাধিক বিয়ে কামনা করে না। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলে তারা মূলত নারীর একটি মর্যাদাকর অবস্থাকে মর্যাদাহীন করারই প্রয়াস পাচ্ছেন। মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন আল্লাহতায়ালা এবং তাদের কল্যাণকর জীবন পদ্ধতিও তিনি দিয়েছেন। এই মানব সমাজের জন্য উত্তরাধিকারের কোন পদ্ধতিটি সবচে’ ভারসাম্যপূর্ণ, ন্যায্য, ইনসাফভিত্তিক এবং বৈজ্ঞানিক তা পৃথিবীর স্রষ্টাই সবচে’ ভালো বুঝেন। এবং সেই মোতাবেকই তিনি বণ্টন নীতি ঘোষণা করেছেন। যারা ইসলামকে নিজেদের ধর্ম বলে বিশ্বাস করেন, দাবি করেন এবং কুরআনকে ধর্মগ্রন্থ হিসাবে মানেন, কোনোভাবেই কুরআন বর্ণিত উত্তরাধিকার নীতির বিরোধিতা করার সুযোগ তাদের নেই; যতক্ষণ নিজেদেরকে মুসলিম দাবি করেন। অবশ্য গুটিকয়েক প্রগতিবাদী ছাড়া ইসলামের উত্তরাধিকার নীতির বিরুদ্ধে সাধারণ নারীরা নেই। আল্লাহ প্রদত্ত নীতিকেই এদেশসহ সারা বিশ্বের মুসলিম নারীরা সবচে’ ভারসাম্যপূর্ণ এবং ইনসাফপূর্ণ মনে করেন। উত্তরাধিকারের সমঅধিকার দিলেই নারীর পিছিয়ে পড়ার সমস্যার সমাধান হবে না। পিছিয়ে পড়ার কারণ উত্তরাধিকার সম্পত্তি কম বলে নয় বরং সমস্যা হল অন্যান্য সামাজিক কারণ। যেমন নারী যৌতুকের নির্যাতনের শিকার হয় তার স্বামীর সম্পদের প্রতি লোভের কারণে। চাকরিতে সমস্যা হল সহকর্মীদের লোলুপ দৃষ্টি। শিক্ষার ক্ষেত্রে কখনো কখনো সহশিক্ষা সমস্যা অথবা চলাচলের অনিরাপদ পথ ইত্যাদি। এখন প্রশ্ন হল- নারী পিতার সম্পদে সমান ভাগ পেলেই কি এই লোভ, লোলুপ দৃষ্টি আর অসৎ চরিত্রের সমস্যার সমাধান হবে? নারী কি পাবে সমস্যা মুক্ত এগিয়ে যাওয়ার একটি সুন্দর সমাজ? আসলে পিতার সম্পদে সমান ভাগই নারী সমস্যার মুক্তির পথ নয়। প্রয়োজন লোভ, হিংসা, লোলুপ দৃষ্টি আর অসৎ চরিত্রমুক্ত একটি সুন্দর সমাজ গড়ে তোলা। প্রয়োজন নারীকে সকল ক্ষেত্রে কাজ করা এবং শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ দিতে হবে, সম্মান দেখাতে হবে, সহযোগিতা করতে হবে, সাহস যোগাতে হবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার। তা যেন অশালীন বা দৃষ্টিকটু না হয়। আমাদের সামাজিক ঐতিহ্য আর পারিবারিক বন্ধনকে অবহেলা করে নয়। সে জন্য নারীর সমঅধিকার নয় ইনসাফভিত্তিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

উত্তরাধিকারের বাইরের দিক নয়, ভেতরের কল্যাণকর ব্যবস্থা নারীর জন্য উপকারী। এ ব্যাপারে একটা গল্প বলি। এক গ্রামের দুই জন লোক মেনু মিয়া ও কামু সর্দার। তাদের মধ্যে খুবই বন্ধুত্ব। মুর্খ কিন্তু মোড়ল টাইপের লোক মেনু মিয়া শহরে এসেছে কোনো এক কাজে। শহরে এসে এক শপিং মলে গিয়ে সে একটা বিষয় দেখে খুবই অবাক হল। সে দেখল যে, একজন বয়স্কা, মোটাসোটা টাইপের কুৎসিত মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। হটাৎ কি একটা যন্ত্র এল এবং দরজা খুলে গেলে ওই মহিলা ঢুকে গেল। দরজা বন্ধ হয়ে গেল এবং উপরে উঠে গেল। কিছুক্ষণ পর দেখা গেল ওই যন্ত্রটি আবারও এলো এবং ভেতর থেকে বেরিয়ে পড়ল একজন সুন্দরী, স্মার্ট যুবতী। গ্রামের অশিক্ষিত লোকটি মনে করল এটা বুঝি মানুষকে সুন্দর করার যন্ত্র। যাই হোক সে বাড়ী গিয়ে বউকে বলল, বউ শোন, পরেরবার ঢাকা গেলে তোমাকে নিয়ে যাব। তুমি আর কালো থাকবে না। যন্ত্রের মাধ্যমে তোমাকে সুন্দরী যুবতী করে নিয়ে আসব। মেনু মিয়ার কথা তার কালো বউ খুব খুশি হল এবং গ্রামে ব্যাপকভাবে প্রচার করতে লাগল। এইদিকে কামু সর্দারের বউও কালো হওয়ায় সেও তার কাছে আব্দার করল যে তাকেও যেন ঢাকায় নিয়ে সুন্দরী অপরূপা করে আনা হয় এবং বিষয়টি এমন পর্যায়ে চলে গেল যে, এখন আর না বলার সুযোগ নেই। কিন্তু কিছুটা শিক্ষিত কামু সর্দার খবর নিয়ে জানল যে, ঢাকা শহরে মেনুমিয়া যা দেখে এসেছে তা পিছিয়ে পড়া কুৎসিত মহিলাদের মুক্তির যন্ত্র নয় আসলে তা হল উপরে ওঠার লিফ্ট। এদিকে বিষয়টা এতবেশী প্রচার হল যে আসল ঘটনা জানার পরও কামু সর্দার তার মোড়ল বন্ধু মেনু মিয়া অপমান হবে, অজ্ঞতা ফাঁস হয়ে যাবে এই কারণে চুপ থাকল এবং তাদের স্ত্রীদেরকে দিনের পর দিন কালো থেকে মুক্তির আশ্বাস দিয়েই গেল। এখানে মেনু মিয়া অশিক্ষিত হওয়ায় সে লিফ্টকে পরিবর্তনের উপায় মনে করে আর কামু সর্দার হল জ্ঞানপাপী সে জানার পরও বন্ধুর গোমর ফাঁস হবার ভয়ে আসল কথা নারীদেরকে না বলে শুধু মুক্তির বার্তাই শুনায়। তেমনি ইসলামের বিধান সম্পর্কে কিছু লোক অশিক্ষিত আর কিছু লোক জ্ঞানপাপী। উভয়েই বাহ্যিক দিক দেখেই নারী সমঅধিকারের কথা বলে। এই সমঅধিকার নারী, সমাজ বা পরিবার কারও জন্যই কল্যাণকর নয়। সুতরাং আল্লাহ প্রদত্ত এই নীতির বাইরে যদি কিছু করা হয় তা বাহ্যিক দিক থেকে নারীদের জন্য উপকারী দেখা গেলেও পরিবার ও সমাজের সুন্দর বিকাশের ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবেই তা অন্তরায়।

একজন নারীকে পরিবার পরিচালনা করতে হয় না। সন্তানের ভরনপোষন দিতে হয় না। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানসহ স্ত্রী ও সন্তানের লেখাপড়া, শিক্ষা, চিকিৎসা, জামা-কাপড় সহ অন্যান্য কিছুই করতে হয় না। এটা একটা স্বাভাবিক নিয়ম। অবশ্য এই সমাজে অনেক মহিলা পরিবার পরিচালনায় যথেষ্ট ভূমিকা পালন করেন। যারা করে তারা দায়িত্ব থেকে নয় আন্তরিকতা থেকে সহযোগিতা করেন।

নারী পিতার সম্পদে অধিকার পায় আবার স্বামীর সম্পদেও পায়, এভাবে ভাই, সন্তান, মা সহ আরও কিছু ক্ষেত্রে পায়। তার এই সম্পদ বিবাহ বিচ্ছেদ বা বড়ধরনের কোন বিপদ না হলে দরকারও হয় না। তাই সে যতটুকু সম্পত্তি পিতার নিকট থেকে পায় ব্যয় করার জন্য নয় বরং নিজের নিরাপত্তার জন্য। প্রয়োজনের সময় নিজের পায়ে দাঁড়ানো জন্য।

বিবাহের ক্ষেত্রে আর্থিক এবং সামাজিক মর্যাদা মোটামুটি সমপর্যায়ের দেখে বিবাহ দেয়ার জন্য ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি। তাই বিয়ের ক্ষেত্রে দুই পরিবারে সম্পদের পরিমাণ সমান হওয়া স্বাভাবিক বিষয়। যদি কেউ আর্থিক অসম পরিবারে বিয়ে করে বা দেয় তা হলে তার ফলে তারা উচ্চ বংশ বা ছেলের শিক্ষা বা মেয়ের সৌন্দর্যের কারণে দেয় এবং তারা তা পায়। যাই হোক একটি দৃষ্টান্ত লক্ষ্য করুন। কোনো ব্যক্তি যদি তিন লাখ টাকা, এক ছেলে আলী এবং এক মেয়ে ফাতিমাকে রেখে মারা যায় তাহলে ফাতিমা পাবে এক লাখ টাকা এবং আলী পাবে দুই লাখ টাকা। আবার সমমর্যাদাপূর্ণ পরিবারে ছেলে মেয়ে উভয়ের বিয়ে হলে ফাতিমার স্বামীও তার পিতার থেকে দুই লাখ টাকা পাবে আবার আলীর বউ তার বাবার সম্পদ থেকে এক লাখ টাকা পাবে। তাহলে দেখা যায় আলীর নিজের পিতার দুই লাখ টাকা এবং তার স্ত্রীর আনা এক লাখ টাকা নিয়ে তাদের সংসারের মোট পুঁজি তিন লাখ। অপরদিকে ফাতিমার নিজের এক লাখ টাকা এবং তার স্বামীর পাওয়া ২লক্ষ টাকা নিয়ে তার পরিবারের মোট পুঁজিও তিন লাখ। এখানে আলী এবং ফাতিমা তথা দুই ভাই-বোন সমান সম্পদ নিয়েই তাদের সংসার করেন। মেয়ে বলে ফাতিমা পিছিয়ে পড়েনি। এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।

যাইহোক বর্তমানে দেশে নারী সমঅধিকার নিয়ে আন্দোলন বা প্রতিরোধের যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। মনে হয় এদেশের আলেম সমাজ নারীদের বিরুদ্ধে। আসলে তা নয়। যারা নারী নীতি বাস্তবায়ন করতে চান তারা কি বিশৃংখলা সৃষ্টি করতে চান নাকি কোনো মহল কর্তৃক বিক্রিত তা আমাদের জানা নেই তবে একটি সরকারের পক্ষে এতবড় এজেন্ডা হাতে নেয়া ঠিক হবে না। এমনকি ধর্মীয় বিষয়ে পৃথিবীর কোনো সংসদও কোন আইন পাস করার অধিকার রাখেনা। পাস করলেও তা কোন মুসলিম ধর্মীয় কারণে মানবে বলে মনে হয় না।

নারীরা আলেমদের প্রতিপক্ষ নয়। সবার মা ই সবার কাছে প্রিয়। সন্তানের নিকট সবচে’ শ্রদ্ধার ব্যক্তি কে? এই প্রশ্নের জবাবে রাসুল (স.) বলেছেন ‘মা’। তারপর কে? একই উত্তর ‘মা’, তারপর কে? একই উত্তর ‘মা’। তারপর কে? বাবা। অর্থাৎ ইসলাম নারীকে পুরুষের চেয়ে অনেক বেশী মর্যাদা দিয়েছে। পৃথিবীতে সকল মানুষের নিকট সবচে’ প্রিয় মানুষটি হল ‘মা’। আর পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সেই ‘মা’ও একজন নারী। তেমনি সবচে’ আদরের লোকটি হল ‘বোন’। আরেকটি ভাইয়ের চেয়ে বোনটাকেই বেশী আদর করা হয়। বোনের আব্দারকেই অন্য ভাইয়ের আগে রক্ষা করা হয়। আবার সবচে’ ভালোবাসার স্থল আর জীবন সঙ্গী হল ‘স্ত্রী’। যাকে বেশী সময় দেয়া হয়। যার কাছে সুখ দুঃখ সবকিছুই বিনিময় করা হয়। যার ভালো গুণকে নিয়ে গৌরববোধ হয়। আবার বাবার স্নেহ মায়া মমতা যার জন্য বেশী সে হল ‘কন্যা’। এভাবে শ্রদ্ধেয় মা, আদরের বোন, ভালোবাসার স্ত্রী, আর স্নেহের কন্যা এরা সবাই কিন্তু নারী। কিন্তু পিতার স্নেহ, ভাইয়ের আদর, স্বামীর সোহাগ আর মা হিসাবে সন্তানের প্রাণপ্রিয় ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার মত মর্যাদাকর অবস্থা থাকার পরও কেন যে কিছু নারী নিজেদেরকে ভোগের পণ্য হিসাবে উপস্থাপন করে। তাদের বেপরোয়া চাল চলন, সংক্ষিপ্ত পোষাক, বেসামাল মাখামাখি, অশালীন অঙ্গভঙ্গী ইত্যাদি তার মর্যাদা বাড়ায় নাকি কমায়? ধর্ষণ, নির্যাতন, পিছিয়ে পড়া’র কারণ অনেকাংশে তারা নয় কি? তাদের শালীন চলাফেরা এবং আমরা নারীকে যথাযথ মর্যাদা দিতে পারলে বোধহয় নারী পুরুষের আর কোনো মর্যাদার ভেদাভেদ থাকবে না। থাকবে না কোনো রেষারেষি, দাম্পত্য কলহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, চরম অশান্তি আর মানসিক যন্ত্রণা। যেই সমাজ ধর্মীয় জীবন বিধান মেনে চলছে তাদের মাঝে নারী পুরুষের পারষ্পরিক ঝামেলা খুবই কম। আসুন সবাই আমাদের মা বোন স্ত্রী কন্যাকে সম্মান করি, আদর করি, ভালোবাসি আর মমতায় ভরিয়ে দেই, তাহলে আমাদের পরিবার, আমাদের সমাজ, আমাদের দেশ, আমাদের পৃথিবী হয়ে উঠবে শান্তির লীলাভূমি।#

লেখক: মানবাধিকার সংগঠক, কলামিষ্ট ও সমাজ গবেষক

(মতামত বিভাগে প্রকাশিত বক্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব, রেডিও তেহরানের সম্পাদকীয় বিভাগের আওতাভূক্ত নয়।)

ট্যাগ