বাহরাইনে সৌদি সেনা-আগ্রাসন ও উপনিবেশবাদী দমন-পীড়নের ১১ বছর পূর্তি
বাহরাইনে সৌদি সেনা-হস্তক্ষেপের নানা রহস্য ও মানবতার কলঙ্ক
বাহরাইনে সৌদি সেনা-হস্তক্ষেপ ও উপনিবেশবাদী দমন-পীড়ন একটানা ১১ বছর ধরে অব্যাহত রয়েছে।
২০১১ সালের ১৪ মার্চ কথিত দ্বীপ প্রতিরক্ষা পরিকল্পনার আওতায় দেশটিতে সেনা পাঠায় সৌদি আরব। এর একমাস আগে ২০১১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বাহরাইনের স্বৈরতান্ত্রিক রাজা আলে খলিফার বিরুদ্ধে দেশটির গণ-বিক্ষোভ গণ-অভ্যুত্থানমুখী হয়ে ওঠে এবং ভীত-সন্ত্রস্ত রাজা তিউনিসিয়ার শাসক বেন আলী ও মিশরের হুসনি মোবারকের পরিণতি এড়াতে গণ-বিক্ষোভ দমনের জন্য সৌদি সরকারকে সেনা-হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানায়।
এ অবস্থায় পারস্য উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের ঘোষিত দ্বীপ প্রতিরক্ষা পরিকল্পনার অজুহাত দেখিয়ে বাহরাইনে সেনা পাঠায় সৌদি শাসক-গোষ্ঠী। অথচ এই পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, পারস্য উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের কোনো সদস্য রাষ্ট্র বাইরের কোনো দেশের হামলার শিকার হলে সেক্ষেত্রে এ পরিষদের অন্য দেশগুলো আক্রান্ত দেশটিকে সহায়তা দেবে। এভাবে বাহরাইন বিদেশী কোনো হামলার শিকার না হওয়া সত্ত্বেও দেশটির জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমন করতে দ্বীপ প্রতিরক্ষা পরিকল্পনাকে অপব্যবহার করে সৌদি শাসক-গোষ্ঠী।
আসলে সৌদি শাসক-গোষ্ঠী বাহরাইনের জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমনের জন্য দেশটিতে যেসব উদ্দেশ্যে সেনা পাঠায় সেসবের মধ্যে সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্যটি হল সৌদি আরবেও যাতে এ জাতীয় গণতন্ত্রকামী আন্দোলন ছড়িয়ে না পড়ে সেই ব্যবস্থা নেয়া। সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলের বেশিরভাগ জনগণ শিয়া মুসলমান এবং বাহরাইনের সঙ্গে সৌদি আরবের অভিন্ন সীমান্ত রয়েছে।
বাহরাইনে সৌদি সেনা হস্তক্ষেপের দ্বিতীয় বড় কারণ হল বাহরাইনের বেশিরভাগ জনগণ শিয়া মুসলমান। তাই দেশটিতে শিয়া মুসলমানদের প্রাধান্য-ভিত্তিক একটি স্বাধীনচেতা ও গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় এলে দেশটির ওপর আর সৌদি কর্তৃত্ব থাকবে না এবং এ অঞ্চলে সৌদি প্রভাবও কমে যাবে।
বাহরাইনে সৌদি সেনা-হস্তক্ষেপের ফলে আলে খলিফার সরকার আরও বেশি বৈধতার সংকটে পড়েছে। বাহরাইনি জনগণ আগে রাজনৈতিক সংস্কার চাইতেন। কিন্তু সৌদি হস্তক্ষেপের পর তারা এখন রাজতান্ত্রিক শাসনেরই অবসান চাচ্ছেন।
সৌদি সেনা হস্তক্ষেপের ফলে বাহরাইন মূলত সৌদি সরকারের উপনিবেশে ও আলে খলিফার সরকার রিয়াদের গোলাম-সরকারে পরিণত হয়েছে। সৌদি সরকারের ইঙ্গিতেই বাহরাইনের গণ-ধিক্কৃত সরকার ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে বলে মনে করা হয়।
বাহরাইনের প্রতিবাদী জনগণের ওপর দেশটির সরকারের নানা ধরনের নৃশংস জুলুম ও হত্যাযজ্ঞের ব্যাপারে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো সোচ্চার নয়। দেশটির জনগণের রক্তপাতে সৌদি সরকারের হাতও রঞ্জিত। কিন্তু কথিত মানবাধিকারবাদী পাশ্চাত্য ও বিশ্ব-সমাজ এসবের নিন্দা জানাতে ও মজলুমের সহযোগী হতে ব্যর্থ হচ্ছে। তাই বাহরাইনের প্রতিবাদী জনগণের ওপর দেশটির সরকারের ও সৌদি হানাদারদের নানা ধরনের নৃশংস জুলুম ও হত্যাযজ্ঞের বিষয়ে বিশ্ব-সমাজের নিরবতা ও নিস্ক্রিয়তা মানবতার জন্য বড় ধরনের কলঙ্ক হয়ে আছে। #
পার্সটুডে/১৫