হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করতে ওয়াশিংটন এবং তেল আবিব কেন মরিয়া হয়ে উঠেছে?
https://parstoday.ir/bn/news/west_asia-i151304-হিজবুল্লাহকে_নিরস্ত্র_করতে_ওয়াশিংটন_এবং_তেল_আবিব_কেন_মরিয়া_হয়ে_উঠেছে
পার্সটুডে-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইহুদিবাদী ইসরায়েল নজিরবিহীন চাপ প্রয়োগ করে হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার জন্য একটি দৃশ্যকল্প শুরু করেছে; এমন একটি দৃশ্যকল্প যা কেবল লেবাননের সার্বভৌমত্বকেই নয় বরং সমগ্র অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকেও ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।
(last modified 2025-08-21T11:49:10+00:00 )
আগস্ট ২০, ২০২৫ ১৯:৪৮ Asia/Dhaka
  • হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করতে ওয়াশিংটন এবং তেল আবিব কেন মরিয়া হয়ে উঠেছে?

পার্সটুডে-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইহুদিবাদী ইসরায়েল নজিরবিহীন চাপ প্রয়োগ করে হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার জন্য একটি দৃশ্যকল্প শুরু করেছে; এমন একটি দৃশ্যকল্প যা কেবল লেবাননের সার্বভৌমত্বকেই নয় বরং সমগ্র অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকেও ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।

সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর শাহাদাত এবং এই অঞ্চলের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর পর, ইহুদিবাদী ইসরায়েল বিশ্বাস করে যে প্রতিরোধের ওপর চূড়ান্ত আঘাত হানার জন্য সেরা সুযোগ এসেছে। এই পরিস্থিতিতে হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কিছু পশ্চিমা সরকারের চাপ কোনো অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা নয় বরং ইসরায়েলের পক্ষে আঞ্চলিক নিরাপত্তা তৈরির একটি বিশাল দৃশ্যকল্পের অংশ। মেহর নিউজ এজেন্সির বরাত দিয়ে পার্স টুডে জানিয়েছে,যদিও এই পরিকল্পনাটি "সরকারের হাতে অস্ত্রের একচেটিয়াকরণ" এবং "অর্থনৈতিক পুনর্গঠন'র মতো স্লোগানের আড়ালে উপস্থাপন করা হয়েছে প্রকৃতপক্ষে লেবাননের ভবিষ্যতের জন্য এবং প্রতিরোধের সমগ্র অক্ষের জন্য একটি গুরুতর হুমকি তৈরি করতে পারে।

লেবাননে হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার বিষয়টি এমন একটি বিষয় যা পশ্চিমা-পন্থী অভ্যন্তরীণ আন্দোলনগুলো প্রতি কয়েক বছর অন্তর উত্থাপন করে কিন্তু আজ বহিরাগত চাপ এবং অভ্যন্তরীণ আন্দোলনের প্রচণ্ড উস্কানির সাথে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছেছে। বৈরুতে তার বিশেষ দূত থমাস বারাককে পাঠিয়ে মার্কিন সরকার কার্যত লেবাননের সরকারকে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির উপর নির্দেশ দিচ্ছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের স্বার্থের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ একটি প্রকল্প

হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার পরিকল্পনাটি দৃশ্যত "জাতীয় সার্বভৌমত্ব" এবং "অস্ত্রের একচেটিয়া" স্লোগান দিয়ে উত্থাপিত হয়েছে, কিন্তু মূলত এটি দখলদার শাসকগোষ্ঠীর সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য মার্কিন কৌশল বাস্তবায়ন ছাড়া আর কিছুই নয়। লেবাননের সেনাবাহিনীর সরঞ্জাম এবং বাজেটের প্রধান সরবরাহকারী হিসেবে ওয়াশিংটন খুব ভালো করেই জানে যে হিজবুল্লাহকে নির্মূল করে তারা দেশের প্রতিরক্ষা নীতির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে। এই ধরনের প্রক্রিয়ার ফলাফল লেবাননকে একটি পুতুল রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করা ছাড়া আর কিছুই হবে না যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের নীতির বিরুদ্ধে সামান্যতম প্রতিবাদও করতে পারবে না।

লেবাননকে রক্ষায় হিজবুল্লাহর ভূমিকা ও অবস্থান

হিজবুল্লাহ কেবল ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধেই নয়, বরং আইএসআইএসের মতো অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক হুমকির বিরুদ্ধেও নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করেছে। এই আন্দোলন হাজার হাজার শহীদের বলিদান এবং বিশাল মানবিক ও বস্তুগত মূল্য বহন করে কেবল শিয়াদের নয়, সমগ্র লেবাননের মর্যাদা ও সম্মান রক্ষা করেছে। অনেক ক্ষেত্রে, লেবাননের সরকার এবং সেনাবাহিনী কেবল আগ্রাসন দেখেছে, তবে প্রতিরোধ বাহিনীই শত্রুদের অগ্রসর হতে বাধা দিয়েছে এবং নিরাপত্তা সমীকরণ পরিবর্তন করেছে।

নিরস্ত্রীকরণের বিপজ্জনক পরিণতি

হিজবুল্লাহর সামরিক শক্তি নির্মূল করার অর্থ প্রতিরোধ অক্ষের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ ভেঙে ফেলা। এই পদক্ষেপ কেবল লেবাননের শিয়াদের জন্যই নয়, সমগ্র অঞ্চলের জন্যই বিপজ্জনক হবে, কারণ ইহুদিবাদী সরকার ধীরে ধীরে এই অক্ষের অন্যান্য সংযোগগুলোকে দুর্বল এবং নির্মূল করার চেষ্টা করবে। অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে যে ইসরায়েলি এবং আমেরিকান চাপের মুখে পিছু হটলে হুমকি হ্রাস পাবে না,বরং তা বৃদ্ধি পাবে।

গৃহযুদ্ধ ছাড়াই প্রতিরোধ কৌশল

ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সচিব আলী লারিজানির বৈরুত সফর একটি সময়োপযোগী এবং কৌশলগত পদক্ষেপ যা প্রতিরোধ অক্ষের শত্রুদের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা পাঠায়: ইরান হিজবুল্লাহ এবং লেবাননের স্থিতিশীলতার সমর্থক হিসেবে রয়ে গেছে। হিজবুল্লাহ ভালোভাবেই জানে যে যেকোনো অভ্যন্তরীণ সংঘাত ইসরায়েলের প্রধান আকাঙ্ক্ষা এবং লেবাননের জাতীয় ঐক্যকে ধ্বংস করতে পারে।

হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার সিদ্ধান্ত কেবল একটি অভ্যন্তরীণ লেবাননের সমস্যা নয়; এটি তাদের পক্ষে আঞ্চলিক নিরাপত্তা পুনর্গঠনের জন্য একটি বৃহত্তর মার্কিন-ইসরায়েলি প্রকল্পের অংশ। বাস্তবায়িত হলে, এই পরিকল্পনা লেবাননকে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তার একমাত্র প্রতিরোধক থেকে বঞ্চিত করবে এবং শত্রুর সম্পূর্ণ আধিপত্যের পথ প্রশস্ত করবে।#

পার্স টুডে/এমবিএ/২০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।