ইসরায়েলে হারেদিরা কী ধরণের চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে?
https://parstoday.ir/bn/news/west_asia-i154178-ইসরায়েলে_হারেদিরা_কী_ধরণের_চ্যালেঞ্জ_তৈরি_করেছে
পার্সটুডে- ইহুদিবাদী ইসরায়েলে আবারও হারেদি (অতিরক্ষণশীল ইহুদি) সম্প্রদায়ের লোকজন বড় ধরণের বিক্ষোভ করেছে; আর এই বিক্ষোভ ধর্মীয় গোষ্ঠী ও ইসরায়েলের রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে গভীর বিভাজনকে স্পষ্ট করে তুলেছে।
(last modified 2025-11-28T10:09:50+00:00 )
নভেম্বর ১৮, ২০২৫ ১৬:৩০ Asia/Dhaka
  • ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হারেদিরা কী ধরণের চ্যালেঞ্জ তেরি করেছে?
    ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হারেদিরা কী ধরণের চ্যালেঞ্জ তেরি করেছে?

পার্সটুডে- ইহুদিবাদী ইসরায়েলে আবারও হারেদি (অতিরক্ষণশীল ইহুদি) সম্প্রদায়ের লোকজন বড় ধরণের বিক্ষোভ করেছে; আর এই বিক্ষোভ ধর্মীয় গোষ্ঠী ও ইসরায়েলের রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে গভীর বিভাজনকে স্পষ্ট করে তুলেছে।

পার্সটুডে'র রিপোর্ট অনুযায়ী, দখলকৃত এলাকায় হারেদিদের প্রতিবাদের সূত্রপাত ঘটে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত ও রাজনৈতিক চাপের ফলে, যা হারেদিদের বিশেষ সুবিধা  বাতিল করার দিকে এগোচ্ছিল। সাম্প্রতিক বিক্ষোভ কেবল সামরিক অব্যাহতি বাতিলের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া নয়; বরং এটি ধর্মীয় গোষ্ঠী ও ইসরায়েলের রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে দীর্ঘদিনের গভীর ও কাঠামোগত ফাটলের প্রকাশ।

এই ফাটল ভুয়া ইসরায়েলি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই বিদ্যমান এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত চাপ, জনসংখ্যাগত পরিবর্তন ও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এখন বিস্ফোরণ-সীমায় পৌঁছেছে। ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পর সংখ্যায় কম হওয়া সত্ত্বেও হারেদিরা বড় ধরনের সুবিধা পেয়েছিল। সময়ের সাথে এগুলো দখলকৃত অঞ্চলের রাজনীতি ও সামাজিক দ্বন্দ্বের কেন্দ্রে পরিণত হয়।

সামাজিকভাবে হারেদিরা নিজেদের পৃথক এলাকায় বাস করে, তাদের নিজস্ব গণমাধ্যম ও শিক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। অর্থনৈতিক দিক থেকে পুরুষদের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ কম এবং নারীরাই মূল উপার্জনকারী, ফলে তারা সরকারি ভর্তুকির ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল। উচ্চ জন্মহার হারেদিদের জনসংখ্যা দ্রুত বাড়িয়েছে। বর্তমানে ইসরায়েলের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৩% হারেদি এবং ধারণা করা হচ্ছে শতাব্দীর মাঝামাঝিতে তারা ইহুদি সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ গোষ্ঠী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।

এই প্রবণতা ইসরায়েলের ভবিষ্যৎ অর্থনীতি ও রাজনীতি নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ তৈরি করেছে, কারণ দক্ষতায় পিছিয়ে থাকা এই বিশাল জনসংখ্যা অর্থনীতির ওপর বিশাল চাপ সৃষ্টি করতে পারে। ইসরায়েলের নিরাপত্তার মূল ভিত্তি তাদের সেনাবাহিনী; ধর্মনিরপেক্ষদের দৃষ্টিতে হারেদিদের সামরিক অব্যাহতি সামাজিক সমতার জন্য হুমকি। বিপরীতে হারেদিরা মনে করে, সেনাবাহিনীতে যোগদান করা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের জন্য ঝুঁকি।

রাজনৈতিকভাবে হারেদিরা তাদের অভ্যন্তরীণ স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দেয় এবং বর্তমানে তারা ইসরায়েলের জোট ভিত্তিক রাজনীতির প্রধান খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছে। তাদের ছাড়া ডানপন্থী সরকার গঠন প্রায় অসম্ভব। সামরিক দিক থেকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী প্রায় ১২ হাজার সদস্যের ঘাটতিতে রয়েছে, যা গাজা ও লেবাননে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে আরও তীব্র হয়েছে। ইসরায়েলিদের অনেকেই মনে করে, হারেদিদের ছাড় দেওয়া বৈষম্যমূলক—কারণ তাদের সন্তানরা যুদ্ধে নিহত হলেও হারেদিরা দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে। বিরোধী দলগুলোও হারেদিদের বাধ্যতামূলক সামরিক সেবার পক্ষে এবং বিষয়টি এখন নেসেটের রাজনৈতিক লড়াইয়ের কেন্দ্রে রয়েছে।

বর্তমান ইসরায়েলি সরকার দুই দিক থেকে চাপে রয়েছে—সেনাবাহিনী ও ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ চায় অব্যাহতির সমাপ্তি, আর হারেদিপন্থী দলগুলো ডানপন্থী সরকারের টিকে থাকার জন্য অপরিহার্য। ডানপন্থী সরকারগুলো হারেদিদের সমর্থন ছাড়া টিকে থাকতে পারবে না, কিন্তু সেনাবাহিনী ও জনমতের চাপ দিনে দিনে বাড়ছে।

সংকট এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, তা আর লুকানো সম্ভব নয়। শেষ পর্যন্ত বলা যায়, হারেদিরা এখন শুধু একটি ধর্মীয় সম্প্রদায় নয়; রাজনীতিতেও তাদের ব্যাপক প্রভাব বিদ্যমান।#

পার্সটুডে/এসএ/১৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।