ট্রাম্পের চিঠি ও হার্জোগের শর্ত: নেতানিয়াহুর চারদিকে সংকটের ঘনঘটা
https://parstoday.ir/bn/news/west_asia-i154228-ট্রাম্পের_চিঠি_ও_হার্জোগের_শর্ত_নেতানিয়াহুর_চারদিকে_সংকটের_ঘনঘটা
পার্সটুডে: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প লেখার চেয়ে কথা বলতে বেশি ভালোবাসেন। কিন্তু যখন তিনি কারো মুক্তির জন্য বাধ্য হয়ে চিঠি লেখেন—তখনই বোঝা যায় পরিস্থিতি কতটা জটিল!
(last modified 2025-11-20T11:07:18+00:00 )
নভেম্বর ১৯, ২০২৫ ১৯:৫৩ Asia/Dhaka
  • বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু
    বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু

পার্সটুডে: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প লেখার চেয়ে কথা বলতে বেশি ভালোবাসেন। কিন্তু যখন তিনি কারো মুক্তির জন্য বাধ্য হয়ে চিঠি লেখেন—তখনই বোঝা যায় পরিস্থিতি কতটা জটিল!

এই লেখাটি আসলে ঠিক সেই নাটকেরই বর্ণনা। সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাপ্রবাহ দেখে মনে হয় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যেন একটি নতুন সিরিয়ালে অভিনয় করছেন—নাম হতে পারে “জবাবদিহি থেকে পলায়ন”। এই ফিচারে তার সাম্প্রতিক সংকট ও চাপে থাকা অবস্থার একটি ছবি তুলে ধরা হয়েছে।

জনমতের প্রবল বিরোধিতা, দুর্নীতির মামলার ছায়া এবং সাবেক মিত্রদের কঠোর সমালোচনা কোনো কিছুই তাকে ছাড় দিচ্ছে না। তবু নেতানিয়াহু অদ্ভুত আত্মবিশ্বাসে ইরান ও হামাসের বিরুদ্ধে তার হুমকিযোগ্য ভাষণ অব্যাহত রেখেছেন। তবে এই উচ্চস্বরে বাগাড়ম্বর দিয়ে ঠিক কী ঢেকে রাখতে চাইছেন তিনি? কী তিনি হিসাব–নিকাশের সেই মুহূর্তের আগমনী বার্তায় আতঙ্কিত?

মামলার পাহাড়

দুর্নীতির মামলা অনেকটা সেই ছায়ার মতো—সারাদিন পিছু পিছু হাঁটে। বহু বছর ধরে নেতানিয়াহুর কাঁধে ঝুলে থাকা “১০০০”, “৪০০০” ও অন্যান্য ঘুষ–কেলেঙ্কারির মামলাগুলো এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপে পৌঁছেছে। তিন দিনের আদালত–সেশনে হাজিরা ও গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের মুখোমুখি হওয়া প্রমাণ করে যে তার “শেষ মুহূর্তের বিলম্ব কৌশল” আর তেমন কাজ দিচ্ছে না।

অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, নিজের উপহার গ্রহণের বিষয়টি স্বাভাবিক দেখাতে গিয়ে তিনি মামলায় রাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল ও মোসাদের প্রধানকেও টেনে এনেছেন। বলেছেন, তারাও নাকি একই ধরনের “উপহার” পেয়েছেন! এটি বরং সেই শিশুদের মতো যাদের ভুল ধরা পড়লে তারা বলে—“সবাই তো করেছে!” কিন্তু এটিকে গুরুতর আইনগত প্রতিরক্ষা বলা কঠিন।

ট্রাম্পের চাপ, হারজোসের অদ্ভুত হাসি

ঘটনা আরও মজার হলো- যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই রসিক মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি একজন নিযুক্ত আইনজীবীর মতো নিজেই মাঠে নেমে পুরোনো বন্ধুকে বাঁচাতে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি লিখে ফেললেন। চিঠিতে তিনি স্বভাবসুলভভাবে পুরো ঘটনাকে “রাজনৈতিক” ও “অন্যায়” ঘোষণা করে ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট ইসহাক হার্জোগ–এর কাছে দাবি করলেন—'নেতানিয়াহুকে নিঃশর্ত ক্ষমা করে দেওয়া হোক'।

হারজোগ উত্তরে ভদ্রভাবে জানিয়ে দিলেন—“সম্মান বজায় আছে, তবে প্রথমে অভিযুক্ত বা তার পরিবারকেই ক্ষমার আবেদন করতে হবে।

ট্রাম্প নিশ্চয়ই এই উত্তর আশা করেননি। হয়তো হোয়াইট হাউসে রাতের দিকে হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিলেন—ইসরায়েলের ওপরও কি শুল্ক–শাস্তি চাপানো যায়? ইসরায়েলি গণমাধ্যম অবশ্য এই চিঠিকে নেতানিয়াহুর গভীর উদ্বেগের প্রমাণ হিসেবে দেখেছে। কারণ সাধারণত ক্ষমার আবেদন তখনই ওঠে, যখন শাস্তির সম্ভাবনা বাস্তব এবং ভয়াবহ হয়ে ওঠে।

মধ্যপ্রাচ্যের জোকার

সব চাপের মাঝেও নেতানিয়াহু জেদ ধরে বলেই যাচ্ছেন—গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে, হামাসকে নিরস্ত্র করতে হবে এবং ইরানের হুমকি নাকি এখনও রয়ে গেছে। আশ্চর্যভাবে, এই কথাগুলো অনেকটাই সাদৃশ্যপূর্ণ সেই নাৎসি নেতা হিটলারের কথার সঙ্গে—যাকে নেতানিয়াহুর পূর্বপুরুষরা ভয় পেতেন। বাহ্যিক পার্থক্য থাকলেও স্বৈরশাসকদের আচরণ বিশ্বজুড়ে যেন একই রকম।

নেতানিয়াহু অবশ্য বলেন না যে, দুই বছরের যুদ্ধেও গাজার বিরুদ্ধে তাদের ঘোষিত একটিও লক্ষ্য পূরণ হয়নি; শেষে বাধ্য হয়ে বন্দি বিনিময়ের চুক্তি করতে হয়েছে। এমনকি ৭ অক্টোবরের ঘটনার তদন্ত কমিটিও তিনি এমনভাবে সাজাচ্ছেন যাতে বিষয়টি তার নিয়ন্ত্রণেই থাকে; বিরোধীরা এই পদক্ষেপকে দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা বলেই মনে করে।

ঝড়ের আগে নীরবতা

তেল আবিবে সর্বশেষ রাজনৈতিক নাটক দেখা গেল যখন জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিল গাজা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত প্রস্তাবটি পাস করল। ইসরাইল যথারীতি, এটিকে একটি "ঐতিহাসিক বিজয়" বলে জাহির করল এবং ট্রাম্পের মন রক্ষা করতে গিয়ে তার “২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা”রও প্রশংসা করল। কিন্তু ইসরাইল অভ্যন্তরে পরিস্থিতি মোটেও অনুকূল নয়!

মন্ত্রিসভায় দুই রাষ্ট্র সমাধান নিয়ে বিরাট ফাটল দেখা দিয়েছে। নেতানিয়াহুর চরমপন্থী মিত্ররা হুমকি দিয়েছে—তিনি যদি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র নিয়ে সামান্য ইঙ্গিতও দেন, তাহলে তারা সরকার ভেঙে দেবে।

ইসরাইলের চরমপন্থী জাতীয়তাবাদী দলের নেতা অ্যাভিগডর লিবারমান স্পষ্টভাবে বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত "উপনিবেশবাদী যুগে ফিরে যাওয়ার মতো"। এতে প্রমাণিত হচ্ছে যে, সরকার নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে। যখন চরম ডানপন্থী ধারার ভেতর থেকে প্রতিবাদের আওয়াজ ওঠে, এর মানে হলো পরিস্থিতি এতটাই বিশৃঙ্খল যে, গতকালের বন্ধুরাও সমালোচকের কাতারে যোগ দিয়েছে।

এদিকে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতকারীদের সহিংসতা এতটাই বেড়েছে যে, নিজেই নেতানিয়াহুকে 'আইনের প্রতি শ্রদ্ধা'র অভিনয় করতে হচ্ছে। কিন্তু কেউ ব্যাখ্যা করে না কেন বহু বছর ধরে একই আইন বসতকারীদের ক্ষেত্রে কেবল “নৈতিক পরামর্শ” হিসেবে রয়ে গেছে! ইসরায়েলের সরকারি পরিসংখ্যান দেখায়, এসব অপরাধের বিচার–প্রক্রিয়া প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে। এই বাস্তবতার ফল একটাই—দ্রুত ভেঙে পড়া বৈধতার সংকট।

শেষকথা

সমস্ত ঘটনাপ্রবাহ মিলিয়ে চিত্রটি স্পষ্ট যে, ইসরায়েলি শাসনব্যবস্থা গভীর, জটিল ও কাঠামোগত সংকটে ডুবে আছে। আর সেই সংকটের মাঝেই নেতানিয়াহু নিজেকে এখনও গল্পের নায়ক হিসেবে দেখাতে চান; যে নায়ক প্রতিদিন আদালতে যায়, মিত্রদের সঙ্গে ঝগড়া করে, চরমপন্থীদের ভয় পায়, কিন্তু তবুও দাবি করে সবকিছু তার নিয়ন্ত্রণে। অথচ একমাত্র জিনিস যা তার নিয়ন্ত্রণে নেই— মাঠের বাস্তবতা এবং সময়।#

পার্সটুডে/এমএআর/১৯