সাংবাদিকদের উপর দমন-পীড়ন ইসরায়েলের আসল চেহারা উন্মোচিত করেছে
-
• সাংবাদিকদের ইসরায়েলের উপর-পীড়ন
পার্সটুডে- গাজার জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও অপরাধের পাশাপাশি, ইহুদিবাদী ইসরায়েল গত দুই বছরে গণমাধ্যমের বিরুদ্ধেও ব্যাপক যুদ্ধ চালিয়েছে।
পার্সটুডে জানিয়েছে, গত দুই বছরে ইসরায়েলের আসল চেহারা গণমাধ্যমের সামনে আরও উন্মোচিত হয়েছে। ফ্রান্সের বৃহত্তম সাংবাদিক ইউনিয়ন ন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ জার্নালিস্টস এবং বিশ্বব্যাপী বৃহত্তম সাংবাদিক ইউনিয়ন ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ জার্নালিস্টস, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ক্ষুন্ন করার অভিযোগ এনে ফরাসি জাতীয় সন্ত্রাসবিরোধী আদালতে একটি অভিযোগ দায়ের করেছে।
অভিযোগে সাংবাদিকদের গাজায় প্রবেশ এবং নিরাপদে তাদের সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালনে "পরিকল্পিত, নিয়মতান্ত্রিক এবং দীর্ঘ সময়ে ধরে" বাধা দেওয়ার জন্য নিন্দা করা হয়েছে। প্রশ্ন হল, তথ্যের স্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের প্রতি ইসরায়েলের শত্রুতা কীভাবে উন্মোচিত হয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর নিহিত আছে ইসরায়েলের গণমাধ্যমের প্রতি কঠোর আচরণ এবং বিশেষ করে গাজার জনগণের ভয়াবহ অবস্থার উপর সংবাদ প্রকাশে বাধা দান।
গত দুই বছরে, ইসরায়েল গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে একটি সংগঠিত অভিযান চালিয়েছে, যার মূল লক্ষ্য হল ঘটনা বর্ণনা নিয়ন্ত্রণ করা, সমস্ত তথ্য সেন্সর করা এবং মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে, খুব কম বিদেশী সাংবাদিককেই গাজায় অবাধে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর ফলে যুদ্ধের মাঝখানে সম্পূর্ণ মিডিয়া ব্ল্যাকআউট তৈরি হয়েছে, যা ঘটনাগুলির স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ তদন্তকে বাধাগ্রস্ত করেছে।
এর কারণ হল পশ্চিমা এবং সংশ্লিষ্ট মিডিয়াগুলি প্রায়ই ইসরায়েলি বর্ণনাকে তুলে ধরে, অন্যদিকে স্বাধীন বা আঞ্চলিক মিডিয়া প্রকৃত বাস্তবতা এবং যুদ্ধাপরাধের সত্যিকারের ঘটনা তুলে ধরার চেষ্টা করে। গাজা উপত্যকা, রামাল্লাহ এবং অন্যান্য স্থানে সাংবাদিক এবং মিডিয়া অফিসগুলিকে লক্ষ্য করে এবং প্রকৃতপক্ষে যে কোনও মিডিয়া আউটলেট যারা গাজা যুদ্ধের সঠিক পরিস্থিতি তুলে ধরার করার চেষ্টা করে, তাদেরকে টার্গেট করছে ইসরায়েল।
সাংবাদিকদের অবাধে প্রবেশ এবং রিপোর্টিং থেকে বিরত রাখার পাশাপাশি, সাংবাদিক এবং মিডিয়ার বিরুদ্ধে সংগঠিত সহিংসতাও চালাচ্ছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের উপর পদ্ধতিগত দমন এবং গাজায় ২৫০ জনেরও বেশি সাংবাদিকের শহীদ হওয়াও স্বাধীন কণ্ঠস্বর নির্মূল করার এবং বিশ্ব জনসাধারণের কাছে তথ্য প্রেরণ রোধ করা ইসরায়েলি প্রচেষ্টারই অংশ।
ইসরায়েলি নেসেটে ৩০ টিরও বেশি নতুন আইন পাস করা হয়েছিল, যার লক্ষ্য ছিল ফিলিস্তিনি অধিকার সীমিত করা এবং বিরোধীদের শাস্তি দেওয়া। এই আইনগুলি কার্যকরভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং তথ্যে প্রবেশাধিকার সীমিত করেছে। সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে এই সংঘবদ্ধ সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের বার্ষিক প্রতিবেদন বলা হয়েছে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সূচকে ইসরায়েলের অবস্থান ২০২৪ সালে বিশ্বে ১০১তম থেকে ২০২৫ সালে বিশ্বে ১১২তম স্থানে নেমে এসেছে এবং রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের মতে, গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সাংবাদিকরা "ক্রমবর্ধমান নিপীড়নের" সম্মুখীন হয়েছেন।
এই ধরনের পদক্ষেপ মানবাধিকারের অন্যতম মৌলিক নীতি হিসেবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে ক্ষুন্ন করে এবং আন্তর্জাতিক আইনে বিচারযোগ্য অপরাধ।#
পার্সটুডে/এমআরএইচ/৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।